ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহবধূকে অমানুষিক নির্যাতন॥ গরম রড দিয়ে ছেঁকা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গৃহবধূকে অমানুষিক নির্যাতন॥ গরম রড দিয়ে ছেঁকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ২৫ ফেরুয়ারি ॥ দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ নুরুন্নাহার। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বকরা আলী বিল গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে। ১৪ বছর আগে তার বিয়ে হয় জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার হাজরা গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুলের সঙ্গে। বিয়ের পর তারা জয়পুরহাটেই থাকতেন। সুখে-শান্তিতেই দিন কাটছিল তাদের। ঘরে জন্ম নেয় দুটি পুত্রসন্তান। সাত বছর পর স্বামী শহিদুল ইসলাম রহিমা খাতুন নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে শুরু হয় নুরুন্নাহারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। এমন কোন দিন বা রাত নেই তার ওপর নির্যাতন করা হতো না। লোহার রড গরম করে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছেঁক দেয়া হতো। অমানুষিক নির্যাতনে তার শরীরের অনেকাংশে পচন ধরেছে। অসংখ্য ক্ষত দিয়ে এখনও রক্ত ঝরছে। একপর্যায়ে গত ২০-২৫ দিন আগে স্বামী ও সতীন মিলে তাকে বাবার বাড়িতে রেখে আসার কথা বলে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহ শহরে। শহরের পাগলাকানাই এলাকার শাহ আলম নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নেন তারা। ভাড়া বাড়িতে আটকে রেখে রাত-দিন নির্যাতন চালানো হতো তার ওপর। বুধবার রাতে শরীরে যখন গরম লোহার রড দিয়ে ছেঁক দেয়া হচ্ছিল তখন তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা টের পায়। তারা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতর গৃহবধূ নুরুন্নাহার বেগম নিজের ওপর অমানুষিক এই নির্যাতনের কথা বলছিলেন। এদিকে গৃহবধূকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর স্বামী শহিদুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা খাতুন পালিয়ে গেছেন। প্রতিবেশী মাস্তান মিয়া জানান, বুধবার গভীর রাতে কান্নাকাটি শুনে বাড়ির পাশে এসে শুনতে পান একজন মহিলা ঘরের ভেতরে বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার করছেন। পাড়ার আরও লোকজন সেখানে আসেন। চিৎকার শুনে আমি থানা পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এলে ঘরের ভেতর থেকে নুরুন্নাহার নামে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। প্রতি রাতেই তারা এ কান্নাকাটি শুনতে পেতেন বলে তিনি জানান। সদর হাসপাতালের ডাক্তার দেবাশীষ রায় জানান, বুধবার মধ্যরাতে নুরুন্নাহার বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে পুরাতন ও নতুন অনেক ক্ষত রয়েছে। পুরাতন ক্ষতগুলোতে পচন ধরে গেছে। তার গোপনাঙ্গেও ক্ষত রয়েছে। তিনি এখন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, শহিদুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা খাতুন প্রথম স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগমকে বাবার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে ঝিনাইদহ শহরে এনে ভাড়া বাড়িতে আটকে রাখে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। স্বামী শহিদুল ইসলাম ও রহিমা খাতুন পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
×