ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্য শোধ নয় মূল্যবোধ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মূল্য শোধ নয় মূল্যবোধ

সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ থেকেই মানুষ পিতা-মাতার জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য করবে, এটাই সঙ্গত। বিষয়টি আবেগ সম্পর্কিত নয়, এটি মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের গুরুদায়িত্ব। অথচ আজ সমাজে আমরা কী দেখছি? বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান তার কর্তব্য পালনে উদাসীন। বিবাহিত পুত্র সন্তানটি তার সংসারে জীবনসায়াহ্নে পৌঁছানো পিতা কিংবা মাতাকে আপদ ভাবছে। তাদের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের দিকে মনোযোগী হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বয়স্ক ব্যক্তি আপনজনদের ঠিকানায় থাকতে পারছেন না। তার আশ্রয় হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে! বার্ধক্য মানবজীবনের এমন একটি অধ্যায় যে পর্বে এসে মানুষ অনেকটা একা হয়ে পড়ে, তার কর্মস্পৃহা হ্রাস পায় এবং নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। তাই বার্ধক্যে উপনীত ব্যক্তির জন্য প্রথমত প্রয়োজন মনোযোগ ও যতœ। কোন সমাজে প্রবীণের প্রতি দায়িত্ব পালনের ধরন থেকে অনুমান করা যায় ওই সমাজের নীতি ও মূল্যবোধ কতখানি সুসংহত। প্রবীণের অবস্থান পরিবারে হলেও তার প্রতি দায় রয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের। আধুনিক বিশ্বে প্রবীণ নাগরিক তথা সিনিয়র সিটিজেনরা পান বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা। এটি তাদের অধিকার। প্রবীণদের প্রতিটি মানবিক মৌলিক প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টি দেয় বিবেচক সভ্য রাষ্ট্র। সে সুবাদে তাদের জীবনসায়াহ্ন হয়ে ওঠে স্বস্তিকর ও স্বচ্ছন্দ। একজন সিনিয়র সিটিজেন যখন ঘরের বাইরে বের হন তখন তার ভ্রমণ বা যাতায়াত নির্বিঘœ ও সাশ্রয়ী করার জন্য প্রস্তুত থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। তাকে দাঁড়াতে হয় না ভিড়াক্রান্ত লাইনে, দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় না কোন সেবা গ্রহণের প্রয়োজনে। এককালে কর্মময় জীবনে যিনি নিষ্ঠাভরে সেবা দিয়েছেন, অবসর জীবনে তার অধিকার রয়েছে অপরের সেবা পাওয়ার। বস্তুত যে সমাজ ও দেশ গঠনে তারা আন্তরিকতা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করেছেন, সেই সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের প্রতি অকৃতজ্ঞ হবে না এটাই প্রত্যাশিত। জীবনসায়াহ্নে মর্যাদার সঙ্গে তাদের পরিচর্যা ও কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা রাষ্ট্র, পরিবার তথা সমাজের অবশ্য কর্তব্য। দেরিতে হলেও আমাদের দেশে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কল্যাণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে রাষ্ট্রপতি প্রবীণ ব্যক্তিদের দেশের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশে প্রবীণের সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখের ওপরে। এর বড় অংশই দুস্থ। বিপুলসংখ্যক প্রবীণ ব্যক্তি আবার সহায়সম্বলহীন। সমাজের দরিদ্র বয়স্ক অংশের সার্বিক কল্যাণের জন্য টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক। আমরা আগেও বলেছি, এক্ষেত্রে কেবল সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা কাজের কথা নয়। স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থাগুলোরও এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা দরকার। সমাজের বিত্তবান শ্রেণীরও দায়িত্ব রয়েছে। বিত্তবানদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। সবচেয়ে বড় কথা পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম উপযুক্ত ভূমিকা নিতে পারে।
×