ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার কোটি টাকা

৭ মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

৭ মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

রহিম শেখ ॥ সুদহার কমানোর পরও বিক্রি বেড়েছে সঞ্চয়পত্রের। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ হয়েছে । এ সময়ে সরকার নিট ১৬ হাজার ৬০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। এ বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের গত সাত মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে জানুয়ারি মাসে ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এদিকে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার করেই প্রয়োজনীয় খরচ মেটাচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেই নীট ১৬ হাজার ৬০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১.২৯ শতাংশ বেশি। এই অবস্থায় অর্থবছরের বাকি পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দ্বিগুণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বছর শেষে তা ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় ঠেকে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গেল সাত মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সময়ে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭০ কোটি ২১ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে নীট বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, একক মাস হিসেবে গত জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে বিক্রি আসে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, গত বছরের চেয়ে ১১৮ কোটি টাকা বেশি। আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্রে বিক্রি আসে ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৮০ কোটি টাকা বেশি। সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪২৭ কোটি টাকা কম। অক্টোবর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ৩ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯৬ কোটি টাকা বেশি। নবেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণেই বিক্রি বাড়ছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ঋণের ভার কমাতে গত ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ করে কমায় সরকার। তবে ওই সময়ের আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তারা আগের সুদেই মুনাফা পাবেন বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর জানায়। বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ঋণের বোঝা কমাতে সরকার ‘বাধ্য হয়েই’ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত। ২৩ মের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ৪৫ ও ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যেত। সুদের হার কমানোর পর এখন কেউ পাঁচ বছর মেয়াদী পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনলে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে সুদ পাবেন। আর পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে। ৩ বছর মেয়াদি ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে সুদ হার ঠিক করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদ হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ২৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা পায় সরকার। এবার এ খাত থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে নবেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসেই নিট ১১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের অর্থবছরে একই সময়ে যা ১১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে গড়ে ২ শতাংশ হারে সুদহার কমানোর পরও এবার বিক্রি বেশি হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণ কমে এক লাখ ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ছয় মাস আগে গত জুন শেষে যা এক লাখ ৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ছিল। এ হিসেবে ছয় মাসে সরকারের নিট ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের মধ্যে ৯৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। বাকি ৮ হাজার ১৭৯ টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যেও অর্থবছর শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বর্তমানের মতো ঋণাত্মক ধারায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×