ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের হার ৪৫ রানে

জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করল ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করল ভারত

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বৃষ্টি ধোয়া দিনশেষে ফ্ল্যাড লাইটের কৃত্রিম আলোয় শুরুটা রঙিন ছিল। কিন্তু সেটা বিবর্ণ হতে সময় লাগেনি। প্রথমে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল শুরুটা বিবর্ণ করে দিলেন রোহিত শর্মা। তার তুলে দেয়া সহজ ক্যাচ ছেড়ে আগুন ঝরাতে থাকা বাংলাদেশী বোলারদের ম্লান হয়ে যাওয়ার মূল দোষটা যেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাঁধেই বর্তাল! পরে ব্যাট হাতেও ব্যর্থ সাকিব, ব্যর্থ হয়েছেন সাব্বির রহমান ছাড়া বাকিরাও। তাই বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই ৪৫ রানে হেরেই যাত্রা শুরু হলো স্বাগতিক বাংলাদেশের। প্রাণ ফিরে পাওয়া রোহিতের তা-বে ভারত টস হেরে প্রথম ব্যাট করে তুলেছিল ৬ উইকেটে ১৬৬ রানের বড় সংগ্রহ। তিনি ৫৫ বলে ৮৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন আলআমিন হোসেনের বোলিং তোপের মুখেও। ভারতের ভীতির নাম মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন নিষ্প্রভ। পরে সাব্বিরের একক সংগ্রামের পর বাকিদের ব্যর্থতায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ১২১ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের দিন দুপুরে দুই দফা বৃষ্টি শঙ্কা তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শুরুর ব্যাপারে। তবে সেই শঙ্কা কেটে গেছে মূলত ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরের বিস্ময়কর ড্রেনেজ সিস্টেমের কল্যাণে। পেসারদের সহায়ক করে উইকেট করা হয়েছিল সবুজ ঘাসে ঢাকা। সব মিলিয়ে টস একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। সেই ভাগ্য পরীক্ষায় বাংলাদেশ জিতে যায়। ব্যাট হাতে নামা ভারতের ইনিংসের শুরুতেই আগুন জ্বলল শিখর ধাওয়ানের অফস্টাম্পে। প্রথম ব্যাট করতে নামা ভারতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই সরাসরি তাকে বোল্ড করেন বাংলাদেশী পেসার আলআমিন হোসেন। বাকি পেসাররাও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন শুরু থেকেই। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিং করতে এসেই মাশরাফি ফিরিয়ে দেন রানের মধ্যে থাকা নির্ভরযোগ্য ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে (৮)। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৩১ রান তোলে ভারত দুই উইকেট হারিয়ে। অন্যপ্রান্তে দারুণ সাবধানী ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা রোহিত। তবে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়ার জন্য থাকতে পারেননি যুবরাজ সিং ও সুরেশ রায়না। বড় ভুল করেছেন সাকিব। তাসকিনের বলে একাদশ ওভারের তৃতীয় বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত (২১)। কিন্তু তা ধরতে পারেননি। পরে এই রোহিতই সর্বনাশটা করেছেন। ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে নেয়ার পর আরও তা-ব শুরু করেন। ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৯৭ রান তুলে ধুঁকতে থাকা ভারতের ইনিংস রোহিত ঝড়ে বড় হতে থাকে। বাংলাদেশ বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা ‘কাটার’ মুস্তাফিজ ফিরতি স্পেলে ফিরে ২১ রান দেন ইনিংসের ১৭তম ওভারে। শেষ ওভারে রোহিতকে ফিরিয়েছেন আলআমিন। তবে এর আগেই ৫৫ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৩ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে হার্দিক পা-ের সঙ্গে ২৭ বলে ৬১ রানের জুটিটাই ভারতকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছে। হার্দিককেও শেষ ওভারের চতুর্থ বলে সাজঘরে ফেরান আলআমিন। ১৮ বলে ৩১ রানের একটি কার্যকর ইনিংস খেলেছেন এ অলরাউন্ডার। শেষ ৫ ওভারে ভারত যোগ করে ৬৯ রান। আর এ কারণেই আলআমিনের দুর্দান্ত বোলিং করে ৩৭ রানে নেয়া ৩ উইকেটও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক কোন লক্ষ্য স্থির করতে দেয়নি। ভারত তোলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ মিঠুন (১) ফিরে গেছেন। এর পর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট খুইয়েছে বাংলাদেশ। একপ্রান্তে সাব্বির একাই ঝড় তুলেছেন। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। সাব্বির ৩২ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ রান করে ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের পরাজয় হয়ে ওঠে সময়ের ব্যাপার। বোলিংয়ে এক উইকেট নিলেও ফিল্ডিংয়ে বাজে ছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ হন ৩ রানে রান আউটের শিকার হয়ে। বাংলাদেশের সর্বনাশটা করেছেন অভিজ্ঞ পেসার আশিষ নেহরা। তিনি মিঠুন ছাড়াও তুলে নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭) ও মাশরাফিকে (০)। দর্শকরাও বিপদে পড়া বাংলাদেশকে দেখে আগেভাগেই পরাজয় আঁচ করে মাঠ ছেড়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২১ রানেই থেমে যায়। মুশফিকুর রহীম শেষ পর্যন্ত ১৬ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থেকেও হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মাথা নিচু করেই।
×