ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্নতত্ত্ব গবেষক যাকারিয়া আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রত্নতত্ত্ব গবেষক যাকারিয়া আর নেই

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম পুরোধা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং বিশিষ্ট পুঁথি বিশারদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া আর নেই। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার দুপুরে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। অসুস্থতার কারণে তার জীবনের শেষ তিনটি বছর কলাবাগানের লেক সার্কাসের বাসা আর হাসপাতালেই কেটেছে। গত ক’দিন ধরেই তার অবস্থার অবনতি ঘটছিল। গত মঙ্গলবার তাকে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। বুধবার দুপুর ১২টার কিছু আগে ডাক্তাররা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেন। মরহুম আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার ছেলে মারুফ শমসের যাকারিয়া জানান, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ২৬ নবেম্বর তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ডাঃ মামুনুর রশিদ ও ডাঃ কামরুল আলমের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ছেলে মারুফ যাকারিয়া আরও জানান, বুধবার বিকেলে লেক সার্কাস তেঁতুলতলা মাঠে তার বাবার জানাজার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে। আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর ধরিকান্দি উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে আবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। বাংলাদেশ এশিযাাটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি যাকারিয়া প্রতœতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদক পান। তার আগে ২০০৬ সালে তিনি পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ১৯১৮ সালের অক্টোবরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালে তিনি সরকারী চাকরিতে যোগ দেন এবং জেলা পর্যায়ে চাকরিতে থাকা অবস্থায় প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা খনন ও তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী হন। তার উদ্যোগেই দিনাজপুরে সীতাকোট বিহারের খনন কাজ শুরু হয। গুপিচন্দ্রের সন্যাস, গাজীকালু চম্পাবতীসহ বেশ কিছু পুঁথির সম্পাদনাও হয়েছে তার হাত দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র যাকারিয়া গবেষণা করেছেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও নবাবী আমলের ইতিহাস নিয়েও। বাংলাদেশের প্রতœসম্পদসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন তিনি। ঢাবি উপাচার্যের শোক ॥ প্রতœতত্ত্ববিদ আ ক ম যাকারিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বুধবার এক শোকবাণীতে উপাচার্য বলেন, ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্বের জন্য তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা অনন্য অসাধারণ। বাংলাদেশের প্রতœসম্পদের সুরক্ষা ও পরিচর্যায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। শুধু প্রতœতত্ত্ব চর্চা নয়, অনুবাদ সাহিত্যেও অপরিসীম অবদান রয়েছে তার। পাশাপাশি পুঁথিসাহিত্য নিয়ে তার পুঁথিপাঠ ও এর ব্যবহারিক চর্চা আমাদের লোকসাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। উপাচার্য আরও বলেন, আ ক ম যাকারিয়ার বয়স ৯৮ বছরের উর্ধে হলেও আমরা মনে করি তার এই মৃত্যু এক অকালমৃত্যু। কারণ, কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রের জ্ঞান ভা-ারকে সমৃদ্ধ করে তারুণ্যের উদ্দীপনা সৃষ্টি করেন তিনি ছিলেন এ ধরনের সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তরুণ শিক্ষক ও নবীন গবেষকদের প্রতœতত্ত্ব বিষয়ে কাজ করতে হলে তার শরণাপন্ন হওয়া ছিল অপরিহার্য। অপরিহার্য এই মানুষটিকে হারিয়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
×