ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ সচিবকে চিঠি

ইউপি নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ৪২৩ কোটি টাকা চায় ইসি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইউপি নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ৪২৩ কোটি টাকা চায় ইসি

এম শাহজাহান ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রায় ৪২৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি সম্প্রতি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আগামী মাস থেকে শুরু করে জুন মাসের মধ্যে দেশের ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। আর তাই দ্রুত অর্থছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সপ্তাহ নাগাদ বৈঠক করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে অর্থ সচিবকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে- চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ তথ্য, ২০১৬ সালের যোগ্য ভোটারদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং আগামী ২০১৭-১৮ সালে যে সকল নাগরিক ভোটার হিসেবে যোগ্য হবেন তাদের তথ্য সংগ্রহ এবং বিদ্যমান ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারদের নাম কর্তন, স্থানান্তর এবং সংশোধন কার্যক্রম সম্পাদন করেছে। এ ছাড়া পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠানের পর অবশিষ্ট পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং অন্যান্য নির্বাচন, উপ-নির্বাচন বর্তমান অর্থবছরে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত এ বিশাল কর্ম সম্পাদনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও বিতরণ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাবদ চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি সর্বমোট ৪২২ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ভোটার তালিকা প্রণয়ন খাতে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার স্থলে ৮২ কোটি টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয় খাতে ৩০ কোটি টাকার স্থলে ৬০ কোটি টাকা এবং নির্বাচন ব্যয় খাতে ৩২১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার স্থলে ৬৭৭ কোটি টাকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশোধিত বাজেটে সংস্থান রাখার বিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে। এদিকে, ইসি সচিবের এ চিঠি পাওয়ার পর সংশোধিত বাজেটেই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থসচিব মাহবুব আহমদের সভাপতিত্বে আগামী সপ্তাহ নাগাদ এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ঘাটতি পূরণে ইসি সচিব ইতোমধ্যে অর্থসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি সংশোধিত বাজেটেই অতিরিক্ত বরাদ্দ চান। তার চিঠিটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে ২৫০ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্চ-জুন মাসে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। গত নবেম্বরে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে এবং সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্দলীয় নির্বাচনের বিধান করা হয়। এ ছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এবার হালনাগাদ তালিকা দিয়েই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসেবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সবগুলো ইউপির নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে, দেশে সব মিলিয়ে ১৯৭৩ সালের পর এ পর্যন্ত আটবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ইসির জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ৫১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৯৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন খাতে ৩২১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পৌরসভার এই নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। যদিও ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা।
×