ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা সূত্রের খবর

বেপরোয়া জেএমবি ॥ বড় ধরনের নাশকতার ছক কষে এগোচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বেপরোয়া জেএমবি ॥ বড় ধরনের নাশকতার ছক কষে এগোচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ আবারও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ভয়াবহ ও বেপরোয়া তৎপরতার শীর্ষে। গত ২০ বছর ধরে দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর প্রকৃতির নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে জেএমবি নামের জঙ্গী সংগঠনটি। এই জঙ্গী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করাসহ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাদের ফাঁসি প্রদান, জঙ্গীবিরোধী ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান, কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও থামছে না বেপরোয়া তৎপরতা। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকরের পর থেকে এই জঙ্গী সংগঠনটির তৎপরতা বেড়েই চলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ছক তৈরি করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সোমবার রাতে জেএমবির চার সদস্য ও এর আগে বাড্ডার সাতারকুল থেকে দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদপুরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার, জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জঙ্গী সংগঠনটির ভয়াবহ তৎপরতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখেও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে জঙ্গী সংগঠটির সদস্যরা। সোমবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে জেএমবির সন্দেহভাজন সদস্য হাফেজ জাফর আহম্মেদ, রাসেল আহম্মেদ রিংকু, আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু ওরফে জাহাঙ্গীর ও মোঃ রাসেল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা। এর আগে শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর সাঁতারকুল ও মোহাম্মদপুরে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালিয়ে হ্যান্ড গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ অভিযানে কামাল ওরফে শাহীন (২৬) ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন (৩০) নামে দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত কামাল জানায়, বাড্ডায় তাদের হেড অফিস এবং অপর জঙ্গী শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়িতে থাকে, যেখানে তাদের বোমা তৈরির কারখানা। বাসাটি দুই মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল তারা। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মিরপুরের ১ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করে। ওই বাসা থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক মাস পর পর বাসা পরিবর্তন করে নতুন আস্তানা গড়ে তুলে তারা। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা জানিয়েছে, বর্তমান সরকার উৎখাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এজন্য রাজধানীর দক্ষিণ ও উত্তরের নিম্নাঞ্চল যথাক্রমে যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরে দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। ভারতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পশ্চিমবঙ্গে খোলা হয়েছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু এসব জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার কারণে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের মামলায় আদালতে দাখিল করা সম্পূরক চার্জশীটে এসব বিষয় উল্লেখ করেছে, যা জিজ্ঞাসাবাদেও জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা। তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা বন্ধে কার্যকর কৌশল নিয়ে এগোতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নজরদারি বাড়ানোর দাবি করা হলেও থামছে না জঙ্গী হামলা। অবশ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা হলেও শক্তিশালী হতে পারছে না জঙ্গীরা। গত কয়েক মাসে ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী হত্যা, পাবনায় গির্জার যাজককে হত্যার চেষ্টা, পুরান ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলা এবং সর্বশেষ ২২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে মন্দিরের পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা। একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনাও রয়েছে আলোচনায়। নৃশংস এসব হত্যা ও হত্যা চেষ্টায় দু’একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হলেও মূলহোতাদের চিহ্নিত করা যায়নি।
×