ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীরাই সঠিক দায়িত্ব পালন করেন, অন্যরা নয় -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীরাই সঠিক দায়িত্ব পালন করেন, অন্যরা নয় -স্বদেশ রায়

দেবীগঞ্জে গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে একই উত্তরবঙ্গে একজন খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচারককে হত্যার চেষ্টা করা হয়। হত্যা করা হয় একজন জাপানী নাগরিককে। এ সব হত্যার উদ্দেশ্য সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা। দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র বানানোর একটি চেষ্টা। শেখ হাসিনার সরকার গত সাত বছর এই চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্থিতিশীল রেখেছে কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা এড়াতে পারছে না। তারপরেও শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে অবস্থায় রেখেছেন তাতে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এক অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছেন তিনি। তবে যখন দেশে একটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলা হয়, হিন্দু মঠ অধ্যক্ষকে হত্যা করা হয়, হত্যার চেষ্টা করা হয় একজন চার্চ প্রধানকে তখন বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। কারণ, ভৌগোলিক অবস্থান ও রাষ্ট্র বিন্যাসের কারণে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী দেশভেদে সংখ্যায় কম হয়ে পড়েন। সংখ্যায় কম হয়ে পড়াতে অনেক সময় তাঁরা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তা সে যে দেশে হোক না কেন। এমনকি অনেকে মানসিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেন, যার ফলে ওই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্র বিন্যাসের বা ভৌগোলিক কারণে যখন এক শ্রেণীর মানুষ এ ধরনের সমস্যায় পড়েন তখন বাস্তবে তাঁদেরকে স্বাভাবিক স্রোতে রাখার জন্য এগিয়ে আসে সংখ্যাগরিষ্ঠের উদার মানুষেরা এবং ওই রাষ্ট্রের উদার রাজনৈতিক দলগুলো। এর বিপরীতে দেখা যায় রক্ষণশীল বা উগ্রবাদীরা সব সময়ই এই মানুষগুলোর জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। আজ ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা এবং এ চেতনাকে এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। এই সমগ্র শক্তির নেতৃত্বে শেখ হাসিনা। আর বিপরীতে যারা তাই সে রাজনৈতিক দলের নামে হোক আর বিচারপতির নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক কোন সময়ে রাষ্ট্রের এই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সংখ্যায় কম মানুষেরা তাদের কাছে নিরাপদ নয়। এখানে মাঝে মাঝে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে। শেখ হাসিনার আমলে কথা বলার স্বাধীনতা, সংখ্যায় যারা কম তাদেরও স্বাধীনতা সমান থাকে। নিরাপত্তা সবার জন্য সমান থাকে। তাই এ সময়ে অনেকে কিছু কিছু দুঃখজনক কথা বলে থাকেন। যেমন তারা বলেন, শেখ হাসিনার আমলেও ওই প্রতিক্রিয়াশীলদের আমলের মতো নির্যাতন হয়। আরো দুর্ভাগ্যজনক হলো বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী মিডিয়ার একটি অংশ আছে তারা এমন এমন ঘটনা এনে উপস্থিত করে তা শুধু অসত্য নয়, তারা দেশের প্রগতিশীল আমল ও প্রতিক্রিয়াশীল আমলকে এক করে উপস্থিত করতে চায়। এগুলো এক ধরনের ষড়যন্ত্র, কেন তারা করে তাও অজানা কিছু নয়। তবে ওই ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত বলতে গেলে লেখার মূল বিষয়বস্তু ভিন্ন দিকে চলে যাবে। বাস্তবে এই যে ধর্মীয়ভাবে যারা সংখ্যায় কম, তাদের ওপর কেন এ নির্যাতন হয় এর জন্য সব থেকে বড় প্রয়োজন একটি দেশের জন্য এ ধরনের কোন ঘটনার পরে সত্যি অর্থে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি এমন কারও নেতৃত্বে তৈরি হওয়া উচিত, যার দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ এবং যিনি বিষয়ের গভীরে যাবার মতো জ্ঞান শুধু নয়, সততা ও মনোজাগতিকভাবে উদার চেতনায় বিশ্বাসী হন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার কিন্তু এমন একটি বড় কাজ ইতোমধ্যে করেছেন। বাংলাদেশে ১৯৭১-এর পরে এই ধরনের বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাসীদের হত্যা, নির্যাতন দ্বিতীয় বারের মতো হয় ২০০১-এর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে। এই হত্যা নির্যাতনের প্রথম নেতৃত্ব দেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ও বিচারপতি লতিফুর রহমান। পরে নেতৃত্ব দেন খালেদা ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। আর হত্যা ও নির্যাতনে অংশ নেয় জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা। ওই সময়ে ওই হত্যা ও নির্যাতনের সংবাদ শুরু থেকে শুধুমাত্র জনকণ্ঠই প্রকাশ করে। অনেক ‘নিরপেক্ষ’ পত্রিকা সেদিন এ খবর প্রকাশ করেনি। কিন্তু তারপরেও সত্য চাপা থাকে না। আন্তর্জাতিক গণহত্যা এনসাইক্লোপিডিয়ায় বিশ্বের বড় গণহত্যাগুলোর ভেতর বাংলাদেশের ২০০১-এর এই গণহত্যাও স্থান পায়। একটি স্বাধীন দেশে দুইটি সরকারের (সাহাবুদ্দিন-লতিফুর সরকার ও খালেদা সরকার) ও খালেদা সরকারের নেতৃত্বে এই গণহত্যা হয়। ওই গণহত্যার নয় বছর পরে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। একটি গণহত্যার আট বছর পরে ওই বিষয়ে তদন্ত করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা দুরূহ শুধু নয়, প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বিচারক মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে শেখ হাসিনা এই কঠিন দায়িত্ব দেন। শেখ হাসিনা যখন তাঁর নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন তখন অনেককেই বলতে শুনেছি- এ তদন্ত কমিটি আর কী বা করবে, বাংলাদেশের আর দশটি তদন্ত কমিটি যেমন একটি নামকাওয়াস্তে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেয়- বাস্তবে যা দিয়ে কোন কাজ হয় না এটাও তেমন হবে। তাদের সঙ্গে ঠিক একমত হতে পারিনি। কারণ কোথায় যেন একটা বিশ্বাস ছিল। বিশ্বাসের স্থলটি ছিল, ওই বিচারক মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে নির্যাতিত এবং ১/১১ এর পরে তার অবস্থান জানতাম। এই সব মিলে মনে হয়েছিল, সকলে যেমনটি মনে করছেন তেমন হয়ত হবে না। কারণ, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার কমিটমেন্টের ওপর দাঁড়িয়েই কাজ করবেন। দায়িত্ব পাবার পরে প্রথমেই একটি ক্ষুদ্র বিষয় থেকে বুঝতে পারি, এই বিচারক কতখানি নিবেদিত হয়ে এ কাজ করবেন। তিনি বারবার লোক পাঠিয়ে জনকণ্ঠের আর্কাইভ থেকে ওই সময়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সরেজমিন রিপোর্টগুলো নিয়ে যান। তবে মূল কাজের সময় তিনি যে শুধুমাত্র প্রকাশিত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেননি তা বোঝা যায় পরবর্তীতে এক বছর তিন মাস পরে তিনি যখন বিশাল আকারের সকল তথ্য উপাত্তসহ রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেন। সেখানে দেখা যায়, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি অন্তত কয়েক শত স্থানে যান যেখানে ওই গণহত্যা বা সহিংসতা ঘটেছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট যেদিন সরকারের কাছে তিনি হস্তান্তর করেন ওই রিপোর্টের অনেকাংশ নানানভাবে পত্রপত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলের খবরে আসে। ২০১১ সালের মার্চ মাসে তিনি এ রিপোর্ট জমা দেন। এর পরে আমাদের রিপোর্টারের মাধ্যমে রিপোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ কপি আনাই। বেশ বড় রিপোর্ট, তার পরেও নানান কাজের ব্যস্ততায় সমস্ত রিপোর্টটি পড়তে কয়েক মাস লেগে যায়। কারণ একনাগাড়ে পড়ার সময় করতে পারিনি। পড়া শেষে মনে করি, এ রিপোর্টটি পাবলিকের জানা দরকার। তাই জনকণ্ঠ রিপোর্টটি ধারাবাহিক ছাপার সিদ্ধান্ত নেয়, যা ২০১৩ জুলাই থেকে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়। কারণ, ভবিষ্যত বাংলাদেশকে আইনের শাসনের ওপর পূর্ণাঙ্গ রূপে দাঁড়াতে এ রিপোর্টটি একটি বড় অবদান রাখবে। রিপোর্টে তিনি বিএনপি ও সাহাবুদ্দিন-লতিফুর সরকারের ওই গণহত্যার সাক্ষ্য ও তথ্যের একটি সামগ্রিক উপাত্ত উপস্থিত করেছেন। কিন্তু রিপোর্টটি পড়তে পড়তে সব থেকে বড় দিক মনে হয় এর ভূমিকাটি। ৭৫ পরবর্তী রাজনীতির কারণে এ কাজ সম্ভব হয়নি সেটাই প্রমাণ করেছেন। প্রমাণ করেছেন, ’৭৫ পরবর্তী রাজনীতি ছিল এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর রাজনীতি। এ কাজ যে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ ধারাবাহিকভাবে করেছেন এটা তিনি তার ওই রিপোর্টের ভূমিকায় স্পষ্ট করেছেন। আর এই গণহত্যার পটভূমি যে বিচারপতি লতিফুর রহমান ক্ষমতা নেয়ার পর পরই তৈরি করেন সেটা তিনি স্পষ্ট করেন ১৫ জুলাই ২০০১-এ শপথ নেয়ার পরক্ষণেই রাতে অশোভনীয়ভাবে ১৩ জন সচিব বদল ও পরবর্তীতে ১৪০০ কর্মকর্তা বদলির বিষয়টি ওই রিপোর্টে উল্লেখ করে। বাস্তবে লতিফুর রহমান, সাহাবুদ্দিন, প্রয়াত একজন বিখ্যাত আইনজীবী ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তাকে ফোন করে আত্মসমর্পণ করা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনজীবী এরা মিলে সেদিন কিভাবে আইএসআইয়ের ইঙ্গিতে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন সে ইতিহাস একদিন ঠিকই বের হবে। বিচারক সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার রিপোর্টের ভূমিকায় লতিফুর সরকারের কথা উল্লেখ করতে ভুল করেননি। আর তাদের প্ররোচনায় যে গণহত্যা নির্বাচনের আগে শুরু হয় তার তথ্যও আছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে। বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের পথে এগুতে হলে এই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেক বিচার করতে হবে। যার কিছু কিছু শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। অবশ্য এ নিয়ে এখনও অনেকের ভেতর ক্ষোভ দেখি, কেন ওই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। একটু শান্ত মাথায় চিন্তা করলে কিন্তু এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। কারণ, এই সাতটি বছর শেখ হাসিনাকে মাত্র কয়েকজন বিশ্বস্ত সঙ্গী নিয়ে কিভাবে লড়তে হচ্ছে একের পর একটি সমস্যার সঙ্গে। যেমন এই বিচারক সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে তিনি পরে দুদকের কমিশনার করেছেন। একজন সাংবাদিক হিসেবে দেখেছি, সেখানেও এ বিচারককে কী বিক্ষুব্ধ সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে, যে সাগরে একমাত্র মাঝি ছিলেন শেখ হাসিনা। এমনকি ষড়যন্ত্রের ভয়াবহতা দেখে আমাদের মতো ক্ষুদ্র সাংবাদিক আমরাও অনেক সময় আপোসের ফর্মুলা খোঁজার পক্ষে লিখেছি। কারণ একজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও একজন চোস্ত সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি দল তখন কিভাবে আমেরিকান নানান লবির সাহায্য পাচ্ছে এবং তারা বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তার মাত্র কিছুদিন আগে বড় একটি দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিককে সরে যেতে হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদ থেকে শুধু বিশ্বব্যাংকের চাপে। সেখানে শেখ হাসিনা কিভাবে পারবেন- এ নিয়ে আমাদের মতো ক্ষুদ্র সাংবাদিকরা অনেক সময় মনোবল হারিয়েছি। মনে করেছি, ওই সব বড় দেশের মতো একটি আপোসের পথ বের করা যায় কিনা? মিডিয়া, সরকারের ভেতর সরকার সব কিছু মিলে তখন বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চেপে ধরা হয়েছে। চেপে ধরছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশও। যাদের শক্তিতে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্য বিশিষ্ট এক্সটার্নাল প্যানেল প্রধান ওকাম্পো কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে চাপ দেন তিনি যেন দুর্নীতির কেস ফাইল করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রই সেদিন দেখিয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি অনড় ছিলেন দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি, শত চাপের মুখেও তিনি বলেছিলেন, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তাঁর দৃঢ়তার কারণে সেদিন বিশ্বব্যাংকের এক্সটার্নাল প্যানেল ব্যর্থ হয় শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী মিশন বাস্তবায়ন করতে। কারণ, সেদিন তারা সফল হলে একশ্রেণীর মিডিয়া রা রা করে উঠত, ওই দেখ শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতিবাজ। আর তাতেই ঢেকে যেত খালেদার দুর্নীতি, তারেকের হাওয়া ভবন। মূল লক্ষ্য তাদের বাস্তবায়িত হতো। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিশ্বব্যাংকের শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রমাণ করছেন, একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা বাংলাদেশে কোন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন। এর বিপরীতে যারা তারা দেশ বিরোধী কাজই করে। শুধু এই পদ্মা সেতু নয়, সমগ্র ২০১২, ১৩ শেখ হাসিনাকে কী ভয়াবহ সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে তা দেশবাসী জানে। আর এটাই শেখ হাসিনার জন্য সত্য যে, যখন কোন বড় বিপর্যয় বা বড় সমস্যা আসে তখন দেশের সাধারণ জনগণ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অবিচল কিছু মানুষই তাঁর পাশে থাকেন। অন্যরা তখন নিরপেক্ষ হয়ে যান। যাহোক, তারপরেও কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ১৫ কোটির বেশি মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালিত করে চলেছেন শেখ হাসিনা। এ কারণে, শেখ হাসিনার সময়ের এই পুরোহিত হত্যাকে কোনভাবে খালেদার আমলের চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যার সঙ্গে মেলানোর সুযোগ নেই। কারণ, তখন সেটা ছিল গণহত্যার অংশ, রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। যা স্পষ্ট হয়ে আছে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর তদন্ত রিপোর্টে। আর এখন যেটা হচ্ছে তা একটি অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য। শেখ হাসিনার এই অসাম্প্রদায়িক সরকারই এ দেশের অসাম্প্রদায়িক ও সকল ধর্ম, বর্ণের শেষ ভরসা। তাই এ সব হত্যাকা-ের পরে একে মোকাবেলা করার জন্য শেখ হাসিনার বিপরীতে নয়, তাঁর পাশেই দাঁড়াতে হবে। কোনমতেই নিজেদের ভেতর বিভেদ নয়। যিনি জীবনের ২০ বছর বাম রাজনীতি করে এসেছেন, বিশ বছর আওয়ামী রাজনীতি করছেন। সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। আবার যিনি মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রলীগের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। চল্লিশ বছর নিঃস্বার্থভাবে দেশসেবা করেছেন, সরকার ও বিরোধী দলে থেকে সব সময়ই। এক ধরনের মিডিয়া এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করছে। তাই এক শ্রেণীর মিডিয়ায় ওই খবর পেয়েই লাফিয়ে পড়া, ওই নেতাদের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। কারণ, মনে রাখা উচিত উত্তরবঙ্গ ক্রমেই জঙ্গীদের শক্তিশালী স্থান হচ্ছে। আর জঙ্গীদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার জন্যই মিডিয়ার এই অংশ এদের চরিত্রহনন করছে। যাতে করে তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ পিলারগুলো দুর্বল হলেই কিন্তু জঙ্গীরা আরও সহজে সেখানে ঢুকতে পারবে। এই ফাঁদ এখন নানান জায়গায় দেখা যাচ্ছে, তাই কোনমতেই উচিত হবে না সত্য না জেনে ওই সব ত্যাগী নেতার বিরুদ্ধে যাওয়া। তাতে শেখ হাসিনার হাত দুর্বল হবে। অন্যদিকে শঠের ছলের অভাব হয় না। খালেদা এখন বিড়াল তপস্বী হয়েছেন। তাঁর এক নেতা ফখরুল বলেছেন, তাঁরা আর মাছ খাবেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খালেদা ক্ষমতায় গেলে আবার ২০০১ আসবে। [email protected]
×