ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তলিয়ে যেতে পারে ঢাকা কলকাতা চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তলিয়ে যেতে পারে ঢাকা কলকাতা চট্টগ্রাম

বাংলানিউজ ॥ পরিবেশ দূষণ আর গ্রিন হাউস গ্যাসের ক্রমবর্ধমান নিঃসরণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই। খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। সমুদ্র ফুঁসে উঠে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে যাচ্ছে স্থলভাগ গ্রাসের আতঙ্ক। ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস)’-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী কয়েক দশকেই ৩ দশমিক ৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আবার কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে ১৪ থেকে ৩৩ ফুট পর্যন্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চতা ২৯ দশমিক ৫৩ ফুট আর রাজধানী ঢাকার গড় উচ্চতা ১৩ দশমিক ১২ ফুট। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা অনুযায়ী, এ শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৪ ফুট বাড়লেও দেড় কোটির বেশি মানুষের আবাস এই শহর পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ঢাকা ছাড়াও তলিয়ে যাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। এখানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ দশকিক ১২ ফুট উঁচুতে। এ আশঙ্কা সত্য হলে ঢাকা-কলকাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো তলিয়ে যেতে পারে। সাগরগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে মালদ্বীপসহ দক্ষিণ গোলার্ধের অনেক দ্বীপদেশই। গবেষণা পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বর্তমান হার বজায় থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের অনেক শহর পানির নিচে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও তলিয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অনেকাংশও। এখানকার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চতা ২২ দশমিক ৯৭ ফুট। এছাড়া তলিয়ে যাবে মালদ্বীপের পুরোটাই। দেশটির রাজধানী মালেতে অবস্থিত ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চতা মাত্র ৬ দশমিক ৫৬ ফুট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লেই জল ছুঁই ছুঁই করবে ভারতের মুম্বাই, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান, চীনের সাংহাই, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও ব্রাজিলের রিওতে। আর যদি তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী পর্যন্ত বাড়ে তাহলে এসব শহরের বেশিরভাগই ডুবে যেতে পারে। লন্ডনেও পানি প্রবেশ করবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মুম্বাই ৪৬ ফুট, নিউইয়র্ক ৩৩ ফুট, লন্ডন ১১৫ ফুট, ডারবান ৬৯ ফুট, সাংহাই ১৩ ফুট, রিও ১৬ দশমিক ৪০ ফুট উঁচুতে। আর অস্ট্রেলিয়ার সিডনির উচ্চতা একেক জায়গায় একেক রকম। এ শহরের সর্বনিম্ন উচ্চতা মাইনাস ৩ দশমিক ২৮ ফুট। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ দশমিক ২৮ ফুট নিচে। আর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩২৪ দশমিক ৮ ফুট। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, শুধু আমেরিকাতেই তলিয়ে যাবে ২০টির বেশি শহর। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। মালদ্বীপের মতো নিচু দেশগুলো পুরোপুরি ডুবে যাবে। পানিবন্দী হয়ে পড়বেন শতকোটি মানুষ। জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন, ২৩ হাজার বছর আগে মধ্য-মায়োসিন যুগে একবার বায়ুম-লে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তখনকার তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও গ্রীনল্যান্ড ও এ্যান্টার্কটিকার বরফগুলো গলতে শুরু করে। আর এখন তো কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রতি ১০ লাখে কমপক্ষে ৪০০। তাপমাত্রাও ঢের বেশি। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, ভবিষ্যত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদটা উঠে আসবে সমুদ্র থেকেই।
×