ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াও পুরোহিত ধর্মাচার্য ও ব্লগার হত্যার নিন্দা করলেন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খালেদা জিয়াও পুরোহিত ধর্মাচার্য ও ব্লগার হত্যার নিন্দা করলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পঞ্চগড় জেলা দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে পুরোহিত অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যার ঘটনা অশুভ আগামীর ইঙ্গিত বহন করে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি ধারালো চাপাতি দিয়ে পুরোহিত হত্যা ও অন্যান্য পুজারিদের গুরুতর জখমের আতঙ্কসঞ্চারী ঘটনা নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। খালেদা জিয়া তার বিবৃতিতে এই নৃশংস ঘটনাকে মানবতাবোধশূন্য অন্ধ হিংস্রতা ও বিকৃত পশুপ্রবৃত্তি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসনে জনগণকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভারি পাথর দিয়ে চেপে রাখলে চরমপন্থী জঙ্গী অন্ধশক্তির উত্থান ঘটার সম্ভাবনায় দেশের উৎকণ্ঠিত নাগরিক সমাজ পূর্বেই বারংবার অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। দেশে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা গেছে বর্বর বোধশক্তিহীন গোষ্ঠীর জন্ম হতে। যাদের বিবেকহীন সভ্যতা বিধ্বংসী কর্মকা-ের বীভৎস দৃশ্য দেখতে হয় বিশ্ববাসীকে। আর যেসব দেশে এসব শক্তির উত্থান ঘটে সেসব দেশকে তারা নিয়ে যায় একেবারে খাদের কিনারায়। খালেদা জিয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা হত্যাকা- থেকে শুরু হয়েছে এই নিষ্ঠুরতম বর্বর পরিকল্পনার যাত্রা পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে গিয়ে পৌঁছেছে। আর এসব বর্বর পরিকল্পনার শিকার হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন অনেক মানবসন্তান। এদের মধ্যে যেমন বিদেশী নাগরিক আছেন তেমনি আছেন দেশের ধর্মাচার্য, ব্লগার, প্রকাশকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বেশকিছু মানুষ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-আমরা যেন জাতির গোরস্তানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এই চূড়ান্ত দুঃসময়ে জনমনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠছে, সরকার কী করছে? বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এ সমস্ত মধ্যযুগীয় রক্তপাত থামাতে ভোটারবিহীন সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। কয়েক মাস ধরে একের পর এক হত্যাকা-ের বিষয়ে সরকার নির্বিকার, হত্যাকা-ের কোন সুরাহা সরকার করতে পারেনি। এই প্রাণবিনাশী আক্রমণ প্রতিহত করে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের ধরা তো দূরে থাক উল্টো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো এবং নেতাকর্মীদের নামে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রধান ও তাঁর নেতারা বিএনপিকে জড়িয়ে দেশে জঙ্গীর অস্তিত্বের কথা বলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রেখেছেন। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই ‘আলট্রাপ্রোপাগা-া’ চালিয়ে আসছেন তারা। অথচ বিএনপি সরকারের আমলেই জঙ্গী নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, দ্রুত তৎপরতার মাধ্যমে জঙ্গীদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন জঙ্গী তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা দেশে সাম্প্রতিক নৃশংস ঘটনাগুলোতে একটি জঙ্গী সংগঠনের দায় স্বীকারের বার্তার বিষয়ে বারবার উল্লেখ করলেও সরকার সেটিকে পাত্তা দেয়নি। সরকার এখন দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশে কোন জঙ্গী নেই। এটি মিথ্যাবাদী রাখালের চিৎকারের চারিত্র্যলক্ষণ। সত্যি সত্যি হিংস্র নেকড়ে এসে পড়েছে কী না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে বর্তমান একদলীয় অপশাসনে গণতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটেছে। একদলীয় কুশাসনে সমাজ জীবনে দুবর্ৃৃত্তদের দুঃসহ দাপট, লুটপাট, হানাহানী, রক্তারক্তি চলছে। চলছে হিংসাকলহ চর্চা। সুতরাং গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতেই জঙ্গী অন্ধশক্তির সৃষ্টি হয়। বর্তমান অনুদার স্বৈরশাসনে বিতর্ক, সমালোচনা বা প্রতিবাদের অধিকারসহ মানুষের সকল অধিকার ও স্বাধীনতা বিলীন হয়ে গেছে। মূলত নিবিড় নৈশব্দই ফ্যাসিষ্ট গোষ্ঠীর কাম্য হয়। অবরুদ্ধ নীরব অন্ধকারের সুযোগে হিংস্র অন্ধশক্তি রাষ্ট্রবিনাশী কাজে ধেয়ে আসে। আর এ শক্তিকে প্রতিহত করতে না পারলে জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা ভাবনা-চিন্তাহীন, কল্পনাহীন এবং স্বপ্নহীন হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য থেকে শুরু করে সঙ্গীত পর্যন্ত যুগ যুগ ধরে সৃজিত হয়ে আসছে বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মানবপ্রেমের বাণী। সুতরাং এদেশে বিদেশী নাগরিক বা ধর্মগুরু হত্যা, উপাসনালয়ে হামলা, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত দুর্বৃত্তরা মানবতা, সভ্যতা ও আধুনিক রাষ্ট্রের বিরোধী। আমাদের আবহমানকালের সামাজিক ঐক্য ও সংহতির ঐতিহ্য বিনষ্টকারী এই সাম্প্রতিক নৃশংসতা বিদ্যমান দুঃশাসনের পরিণতি।
×