ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

উন্নয়নযুদ্ধে জয়লাভে কৃষি ও কৃষকের উন্নতি অপরিহার্য

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উন্নয়নযুদ্ধে জয়লাভে কৃষি ও কৃষকের উন্নতি অপরিহার্য

বাকৃবি সংবাদদাতা ॥ দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়নযুদ্ধে জয়লাভের জন্যই কৃষি ও কৃষকের উন্নতি অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকাই মুখ্য। বর্তমান সরকারে নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বেও অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বেলা ১১টায় সমাবর্তন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বক্তব্য রাখেন সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের বিকল্প নেই। কৃষির গুরুত্ব সম্পর্কে একটি চীনা প্রবাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় উন্নতি ও সম্পদ একটি গাছের ন্যায়- কৃষি তার মূল, শিল্প তার শাখা আর বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে পাতা ঝরে যায়, শাখা ভেঙ্গে পড়ে এবং গাছ মারা যায়। তাই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং কৃষি খাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটি (আইসিএফ) থেকে খাদ্য নিরাপত্তায় ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান একটি অত্যাধুনিক ঋড়ড়ফ ঝধভবঃু খধন গড়ে তোলা, ‘হাওড় ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ ও ‘কক্সবাজারে ‘সামুদ্রিক মাৎস্য বিজ্ঞান, মাঠ গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্র’ স্থাপনের প্রশংসা করেন। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপনের স্বীকৃতি হিসেবে সনদপত্র লাভের মধ্য দিয়ে আজ তোমাদের জীবনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু তোমাদের অনেক ঋণ জমে আছে দেশ ও জাতির কাছে। আজ তোমাদের সেই ঋণ পরিশোধ করার পালা।’ সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের জয়যাত্রায়র এই যুগে খাদ্য-পুষ্টিসহ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার সকল দিগন্ত যখন নিত্যনব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ছোঁয়ায় নতুন সম্ভাবনা নিয়ে উন্মোচিত, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের তখন পেছনে ফেরার কোন উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই বিপুল কর্মযজ্ঞের নেপথ্য বিধানে মুখ্য নেতৃত্ব দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সমাবর্তনে সনদ এবং পদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘যে জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস আপনারা অর্জন করেছেন, জাতির জন্য তা পরম মূল্যবান সঞ্চয়। দেশের কৃষি উন্নয়নে লব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে আগামী দিনগুলোতে আপনারা এই প্রতিষ্ঠানের গৌরবের পতাকা উর্ধে তুলে ধরবেন। আপনাদের মেধা ও মননশীলতার ছোঁয়ায় সত্যে পরিণত হবে সোনার বাংলার স্বপ্ন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর বলেন, ‘১৯৭৩ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারিতে এক সমাবেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদানের ঘোষণার পর দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদসহ কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যাপক গতি সঞ্চার করে। কৃষিবিদদের ঐক্যতানীয় প্রয়াসের ফলেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, ক্ষুধা-মঙ্গা দূরীকরণসহ কৃষিতে সবুজ বিল্পব ঘটেছে।’ এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকবৃন্দ। উল্লেখ্য, এই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৯ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি, ২ হাজার ৮৫১ জন ¯œাতকোত্তর এবং ১ হাজার ৯১৯ জনকে স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়। কৃষি ও কৃষকের তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার প্রসারে অবকাঠামো বিনির্মাণসহ সকলের জন্য মানসস্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপবৃত্তি প্রদান করছে। মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে নওয়ান ইনস্টিটিউশনের একশ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরাই আগামীদিনের ভবিষ্যত। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে তোমাদেরকে। এ জন্য তোমাদের সত্যনিষ্ঠা, কর্মঠ ও নৈতিক চরিত্রের আদর্শে আদর্শবান হতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন সার্থক হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুক, ধনবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফরিদ আহম্মেদ ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র দেলোয়ার হোসেন। আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও টাঙ্গাইলের স্থানীয় শিল্পীরা নেচে গেয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদকে বরণ করে নেয়।
×