ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কার ভাগ্যে শিরোপা?

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কার ভাগ্যে শিরোপা?

আমরা অবশ্যই লড়াই করব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। Ñকথাটি বলেছেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডারদের একজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এশিয়া কাপে এবার বাংলাদেশও চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। যখন প্রশ্ন উঠছে, আজ স্বাগতিক বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে প্রথমবারের মতো টি২০ ফরমেটে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটিতে শিরোপা কার হবে, সেখানে বাংলাদেশকেও রাখতে হচ্ছে। মাহমুদুল্লাহর আত্মবিশ্বাসই যে সেই জ্বালানি এনে দেয়। তবে টি২০ ফরমেটে যেহেতু খেলা। আর এই ফরমেটে যেহেতু বাংলাদেশ অনেকটাই দুর্বল দল, তাই শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত শিরোপায় যে হাত বুলাতে পারবে না, তা তো সবারই জানা। মার্চেই ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে টি২০ বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞের। তার আগে এশিয়ার দলগুলো মুখোমুখি হবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দিতে। টি২০ বিশ্বকাপের ঠিক আগে আয়োজিত হওয়ায় যাতে প্রস্তুতি সেরে নেয়া যায়, তাই প্রথমবার টি২০ ফরমেটে হচ্ছে এই এশিয়া কাপ। ২০১৮ সাল থেকে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপ আবারও ওয়ানডে ফরমেটে ফিরে যাবে। এরপর ২০২০ সালের এশিয়া কাপ হবে আবারও টি২০ ফরমেটে। অর্থাৎ বিশ্বকাপ অনুসারে রোটেশন পদ্ধতিতে একবার টি২০, একবার ওয়ানডে ফরমেটে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া কাপ। তবে এশিয়া কাপ এর আগে ১২ বার আয়োজিত হয়েছে। সেটি ওয়ানডে ফরমেটে। ১৯৮৪ থেকে অনুষ্ঠিত এই এশিয়া কাপের শতাংশের বিচারে সবচেয়ে সফল দেশ শ্রীলঙ্কা। ভারত আর শ্রীলঙ্কা দুটি দেশই পাঁচবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়। পাকিস্তান দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ মাত্র একবারই ফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। তবে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাই হলো একমাত্র দেশ যারা প্রতিটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ভারত ১৯৮৬ ও ১৯৯৩ সালে এশিয়া কাপে খেলেনি। এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ওই আসরে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের নেতৃত্বে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশটি পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার এশিয়া কাপের আয়োজক বাংলাদেশ। এর আগে ২০১২ এবং ২০১৪ সালের এশিয়া কাপেরও আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে সর্বাধিক পাঁচবার এশিয়া কাপের আয়োজক হলো বাংলাদেশ। চারবার এশিয়া কাপের আয়োজক হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবারের এশিয়া কাপে ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনিই হবেন একমাত্র অধিনায়ক, যিনি টস করতে নামলেই হয়ে যাবেন এশিয়া কাপের সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া অধিনায়ক। এর আগে এশিয়া কাপে তিনি মোট ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন। জিতেছেন নয়টিতে। হেরেছেন চারটিতে। ১৩ ম্যাচে এশিয়া কাপে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার অর্জুনা রানাতুঙ্গাও। আর একটি ম্যাচ খেললেই রানাতুঙ্গাকেও ছাড়িয়ে যাবেন ধোনি। এশিয়া কাপের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান বিরাট কোহলির (২০১২ সালে কোহলি করেন ১৮৩ রান)। ওই টুর্নামেন্টে মাত্র তিন ম্যাচ খেলে কোহলি দুটি সেঞ্চুরি, আর একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ মোট ৩৫৭ রান করেন। তবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান সনাথ জয়সুরিয়াই এশিয়া কাপে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। মোট ১২২০ রান করেছেন তিনি। জয়সুরিয়ার উত্তরসূরি কুমার সাঙ্গাকারা করেছেন ১০৭৫ রান এবং শচীন টেন্ডুলকর করেন ৯৭১ রান। এদিকে, তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান, যিনি ২০১২ এশিয়া কাপে টানা চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে এবার এই ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই এশিয়া কাপ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কারণ প্রথমবারের মতো বাবা হতে যাচ্ছেন তিনি। এশিয়া কাপ যখন মাঠে গড়াবে তখন তার পরিবারে আসবে নতুন অতিথি। তামিম এর আগেও ঘাড়ের চোটের কারণে এশিয়া কাপের গত আসর (২০১৪ সালে) মিস করেছিলেন। এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়া কাপের বাছাই পর্ব। এশিয়ার চার সহযোগী দেশ অংশ নিয়েছে এই পর্বে। যাদের একটি হলো ওমান। বাকি তিন দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান, আরব আমিরাত এবং হংকং। এই প্রথম এশিয়া কাপে খেলছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান। এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ২০১৪ সালে এবং হংকং খেলেছিল ২০০৪ সালে। এছাড়া আরব আমিরাত প্রথম খেলেছিল ২০০৮ সালে। বাছাইপর্বের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মনে করা হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান সম্প্রতি জিম্বাবুইয়ের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় বেশ আত্মবিশ্বাসী মেজাজে রয়েছে। মূলপর্বে খেলতে পারবে আফগানরাই। কিন্তু নিজেদের সেরাটা দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাছাইপর্বে টানা তিন ম্যাচ জিতে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। তবে স্বাগতিক দেশ বাংলাদেশ। দলটি ২০১৫ সালে ইতিহাসের সেরা সময় কাটিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা এবারও যদি বজায় রাখা যায় এবং ২০১২ সালের ফাইনালে ওঠার প্রেরণা নিয়ে আবারও কিছু করে দেখিয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশও প্রথম এশিয়া কাপ টি২০তে ঝলক দেখাতে পারে। মাঝখানে আর কোন দিন নেই। আজ থেকে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন শুরু হয়ে যাবে। এশিয়া কাপও শুরু হবে। যেটিকে ধরা হচ্ছে, এশিয়া কাপের ১৩তম আসর। তবে টি২০ ফরমেটে প্রথমবার এশিয়া কাপ আয়োজিত হবে। তাই সেটিকে এশিয়া কাপ টি২০’র প্রথম আসরই বলা যায়। টি২০ ফরমেটের প্রথম এশিয়া কাপের উদ্বোধনী দিনেই রাত সাড়ে সাতটায় ভারতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। যে ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত কোন টি২০ ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে খেলার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলে ২৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ওয়ানডে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও এখন পর্যন্ত টি২০তে বাংলাদেশের জয়ের কোন রেকর্ড নেই। এবারের এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলবে ২ মার্চ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলটি হচ্ছে পাকিস্তান। এশিয়ার টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তানকেই শুধু টি২০তে হারানোর যোগ্যতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সেটি সর্বশেষ গত বছর এপ্রিলেই। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের একটি ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তান। আরেকটিতে জিতে সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সাল থেকে এশিয়া কাপে এর আগে ১২ আসর হয়। প্রতি আসর হয় ওয়ানডে ফরমেটে। এবার প্রথমবারের মতো টি২০ ফরমেটে খেলা হচ্ছে। আগের ১২ আসরের মধ্যে ১৯৮৪ সালের এশিয়া কাপ ছাড়া ১১ আসরেই অংশ নেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় বাংলাদেশ। ফাইনাল খেলে। কিন্তু ২ রানের জন্য হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। রানার্সআপ হয়। এছাড়া প্রতি আসরেই বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়। ২০০৪ ও ২০০৮ সালে ৬ দল নিয়ে এশিয়া কাপ হয়। দুই গ্রুপ করে খেলা হয়। এরপর সেরা চার দল নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড হয়। সেরা দুই দল ফাইনালে খেলে। শুধু এ দুই আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আর কোন আসরেই গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার কী করবে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া মাশরাফির দল? মাশরাফির আশা ভাল খেলা। তবে এটিও স্মরণে রাখতে হবে, টি২০ ক্রিকেটে এখনও শক্তিধর দল হয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। তা না হলেও মাহমুদুল্লাহ ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। সেই আশা এখন পূরণ হলেই হয়। তা না হলেও আরব আমিরাতকে হারানোর সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে ভোগাতে পারলেও প্রাপ্তির খাতায় টি২০ বিশ্বকাপের আগে যে আত্মবিশ্বাস জমা হবে, সেটিও কম হবে না। দেখা যাক এখন বাংলাদেশ না ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মধ্যেই কে শিরোপা আবারও ঘরে তোলে।
×