ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি হচ্ছে

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতি ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে। দেশ দুটি সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে। তবে বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নুসরা ফ্রন্ট প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতির আওতায় পড়বে না। এদিকে সিরিয়ায় চলেতি বছরের ১৩ এপ্রিল পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ঘোষণা দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ও মস্কো সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা দেয়ার পরই আসাদ এ কথা বলেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং দিন দিন দেশটিতে সহিংসতা আরও বাড়ছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর করার বিষয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো গত ১২ ফেব্রুয়ারি একমত হয়েছিল যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে। কিন্তু এই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন তা শনিবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের প্রধান বিরোধী পক্ষ সোমবারের ঘোষণায় তাদের শর্তাধীন সম্মতি জানিয়েছে। তবে সশস্ত্র বিরোধী পক্ষগুলোকে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরের মধ্যে অস্ত্রবিরতিতে তাদের অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে ইসরাইল এই অস্ত্রবিরতি কার্যকরের বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যুদ্ধে যে কোন ধরনের বিরতি রাশিয়া, ইরান ও প্রেসিডেন্ট আসাদের ওপর নির্ভর করবে। সিরিয়ায় অবিরাম সহিংসতা চলার মাঝেও রবিবার যুদ্ধবিরতির নানা শর্ত নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছার কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দুই নেতার মধ্যে ফোনে আলোচনার পর সিরিয়ায় প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতি কার্যকরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যৌথ বিবৃতি দেয়। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সংঘর্ষে যে পক্ষগুলো অস্ত্রবিরতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং শর্ত মেনে নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এ বিরতি প্রযোজ্য হবে। তবে আইএস, নুসরা ফ্রন্ট ও জাতিসংঘের চিহ্নিত অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন এ অস্ত্রবিরতির আওতায় পড়বে না। তাদের ওপর সিরিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিমান হামলা চলবে। অস্ত্রবিরতির সময়টিতে রাশিয়া ও সিরিয়া ওই দলগুলোর ওপর বিমান হামলা বন্ধ করবে। কেরি এ অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি কার্যকর হলে এবং মেনে চলা হলে তা কেবল সহিংসতাই কমাবে না বরং এতে অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে জরুরী প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্য সরবরাহের পথও সুগম হবে। তবে জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইয়ান এলিয়াসন বলেছেন, অস্ত্রবিরতি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা খুব একটা সহজ হবে না। কারণ লড়াই বন্ধের ওই প্রক্রিয়ায় যদি নুসরা ফ্রন্ট বা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো না পড়ে তাহলে অস্ত্রবিরতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা সত্যিই অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয় হবে এবং সবাই যদি একত্রিত না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সোমবার এক ডিক্রি জারি করে দেশটিতে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ডিক্রিতে প্রতিটি প্রদেশের আসনও বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে শুধু ক্ষমতাসীন দল বাথ পার্টি নয়, প্রথমবারের মতো সব রাজনৈতিক দলকেই অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও চার বছর মেয়াদে নির্বাচিত ২৫০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের বেশিরভাগই বাথ পার্টির। এদিকে জাতিসংঘ সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় ব্যাপকহারে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং দিন দিন সেখানে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। যুদ্ধে লিপ্ত দলগুলো সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে প্রতিনিয়ত হামলা করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সিরিয়ার সরকারী বাহিনী ও আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী উভয়ের কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
×