ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্ত পুঁইয়ে বৌমাছ ফিরেছে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিলুপ্ত পুঁইয়ে বৌমাছ ফিরেছে

বাকিদের ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে সমুদ্র হক ॥ হারিয়েই গিয়েছিল হলদে ডোরাকাটার বৌ মাছ। দেখা মিলত না পুঁইয়ের। নতুন প্রজন্মের কাছে তো একেবারেই অজানা অচেনা। নাম শুনে শুধুই হাসে। প্রবীণ ও মধ্যবয়সীরা বৌ পুঁইয়ের কথা তুলতেই অতি কৌতূহলী হয়ে বলে, কোথায় এসেছে! মনে হবে এখনই ভোঁ দৌড় দিয়ে ধরে আনবে। হালে ওদের দেখা মিলছে। এক সময় দেশে নদী হাওড় বিল জলাশয়ে সুস্বাদু পুঁইয়ে মাছ বৌ মাছ মিলত। স্রোতের অনুকূলে দাঁড়কি পেতে মাছ ধরার পর খলইতে ভরে বাড়ির উঠানে এনে ঢাললে ডোরাকাটা বৌ মাছ (যার আরও নাম রানী মাছ, বউ পুঁইয়ে) মাট্য পুঁইয়ে, বাঘা পুঁইয়ে দেখলেই আলাদা করে রাখা হতো। ছেলেমেয়েরা এই মাছ পেলে মহাখুশিতে অপেক্ষা করত কখন রান্না হবে। খেতে বসে খোঁজ করত বৌ মাছটি কোথায়! বায়নাও ধরত। বড়রা পুঁইয়ে মাছ দিয়ে ভাত খেত রসিয়ে। খাবার পর আহ! কি স্বাদ... এমন তৃপ্তির ঢেকুর তুলত। গৃহিণীরাও এই মাছ বটিতে কোটার সময় পুঁয়ে বৌয়ের ঠোঁট আলতো করে নেড়ে আদর করত। অন্যকে শুনিয়ে বলত বৌ পুঁইয়ে রান্না হবে। এর রেসিপিও থাকত আলাদা। মিঠাপানির এই সুস্বাদু মাছ হারিয়েই গিয়েছিল বদ্ধ জলাশয়ের অভাবে। নদী তো দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠলে কিছুটা মাছ মেলে। বাকি সময় গভীর পানির অভাবে চিরচেনা সুস্বাদু মাছ হারিয়েই যায়। এক হিসেবে স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪ প্রজাতি হারিয়ে গেছে। তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে অভয়াশ্রম গড়ে তুলে। মৎস্য অধিফতরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক এ এস এম রাশেদুল হক জানালেন, সারাদেশে বর্তমানে ২৩৯ সরকারী মৎস্য অভয়ারণ্য স্থাপন করে বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোকে কখনও সরাসরি কখনও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বেসরকারী অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে অনেক। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম প্রজননে বিলুপ্ত এসব মাছ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। রিজার্ভ ফরেস্টের মতো দশমিক ৫ হেক্টর করে বদ্ধ জলাশয় (অভয়াশ্রম) বানিয়ে বিলুপ্তপ্রায় মাছের অন্তত ২২ প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা গেছে। এই অভয়াশ্রমে ভর বছর পানি থাকে এমন অবস্থা করা হয়েছে। বৌ মাছ পুঁইয়ে মাছের কয়েকটি জাত ইতোমধ্যে পূর্বাঞ্চলের হাওড় বাঁওরে ও যমুনার কোন অংশে ফিরে এসেছে। বাকি মাছ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মাছ ফিরে আসছে ঠিকই, তবে চাহিদা অনুযায়ী এখনও মিলছে না। রাজধানী ঢাকা, উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ায় এই মাছ কালে ভদ্রে মেলে। জেলের ডালির কলাপাতায় তুলতেই ক্রেতারা পাখির মতো ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। যে দাম হাঁকা হয় সেই দামেই বিক্রি। প্রতিকেজি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে মেলে। জেলেদের বলে রাখলে তারা মাছ এলে সেল ফোনে ক্রেতাকে খবর দেয়। এ যেন পুঁইয়ে বৌ বুকিং। তবু তো ফিরে আসছে। আশা করা হচ্ছে গুলসা শোল মহাশোল চ্যাঙ ভ্যাদা খলসেসহ বিলুপ্ত সব মাছই ফিরে আসবে।
×