ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গরিবের চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গরিবের চিকিৎসা

অসুখ-বিসুখ কি আর ধনী-গরিব মানে? মানে না। রোগ হলে রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়, চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। এ জন্য প্রয়োজন পড়ে অর্থের। বিত্তবানদের সামনে সুযোগ আছে রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের জন্য উন্নত দেশে যাওয়ার। আর গরিবদের বেলায় ন্যূনতম দাওয়াইয়ের জোগাড় হয় না। ফলে একই অসুখে ধনী অল্পতেই রেহাই পেয়ে যায়, গরিবের ভোগান্তির অবসান ঘটে না। সমাজে ধনী-গরিবের বিভেদ বজায় থাকলে রোগেশোকে ভোগার বেলায়ও সেই বিভেদ সচল থাকে। কথায় বলে, রোগশোক বলে কয়ে আসে না। অসুখবিসুখ জীবনে তখন বিরাট দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়। দিন দিন দেশে চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দাম বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এভাবে বাড়তি খরচ গুনতে গেলে বহু মানুষের পক্ষেই চিকিৎসা অসমাপ্ত রাখা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন। ডাক্তাররা নির্দিষ্ট করে দেন কোন প্যাথলজিতে রোগী টেস্টগুলো করাবেন। সেইসঙ্গে কোন কোম্পানির ওষুধ তিনি লিখবেন সেটাও নির্দিষ্ট থাকে। এখানে বলির পাঁঠা হলেন রোগী। ডাক্তার এখানে অন্যায্য বৃত্তের কেন্দ্র। তাঁকে ঘিরে আছে প্যাথলজি ল্যাব, ওষুধ কোম্পানি এবং হাসপাতাল ক্লিনিক। পদে পদে কমিশন। এই কমিশন বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে থাকে রোগীর ব্যয়ের অঙ্ক, যা মেটাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। উন্নত বিশ্বে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিত্তহীন রোগীর চিকিৎসার নিয়ম রয়েছে। আমাদের দেশেও গরিবদের চিকিৎসার জন্য অনেক চিকিৎসকই তার কর্মসপ্তাহের একটি অংশ নিয়োগ করে থাকেন। ফ্রি ক্লিনিকও কিন্তু একেবারে দুর্লভ নয়। চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ আছে। ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনে স্বাস্থ্যপরীক্ষা শেষে রোগ নির্ণয়, তারপর ওষুধ ও পথ্য সেবন। প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসা গ্রহণ। প্রতিটি ধাপেই খরচ রয়েছে। একজন দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে সব ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব হয় না অর্থের অভাবেই। ফলে অসমাপ্ত চিকিৎসার কারণে তার রোগমুক্তি ঘটে না, বরং দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। রাষ্ট্র গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাল গড়ে তুলেছে। তবে তা অপ্রতুল। আমাদের মতো উন্নয়নশীল জনবহুল দেশে রাষ্ট্রীয় খরচে সব গরিব লোকের চিকিৎসা সেবা প্রদান অসম্ভব ব্যাপার। বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো রমরমা বাণিজ্য করলেও সেগুলোর মধ্যে দরিদ্রসেবার মানসিকতা প্রায় নেই বললেই চলে। গরিবদের জন্য বেসরকারী হাসপাতালে দশ ভাগ ফ্রি বেড রাখার বিধান কার্যকর করা যায়নি। এ ব্যাপারে তাদের বাধ্য করা যাবে কি? এটা দৃষ্টিভঙ্গি ও অঙ্গীকারের প্রশ্ন। তবে সরকার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে যাতে করে শতকরা হিসাবে সামান্যসংখ্যক হলেও গরিবদের শতভাগ চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব হয়। আমরা আশা করতে পারি, সেদিন খুব দূরে নয়, এদেশে প্রাথমিকভাবে অন্তত বিভাগীয় শহরে কেবল বিত্তহীনদের জন্য একটি করে হাসপাতাল চালু হবে। যেখানে তাদের বিনামূল্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে।
×