ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গত বছর আয় হয়েছে ৫০ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গত বছর আয় হয়েছে ৫০ কোটি ডলার

ফিরোজ মান্না ॥ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গত বছর বাংলাদেশ আয় করেছে ৫শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছর এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার টার্গেট নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। আর ২০৪১ সালের মধ্যে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলারে। মন্ত্রণালয় আউটসোর্সিংয়ের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মোট ৩৪ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিশেষজ্ঞ তৈরি করা হচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞরা নিজেরা আউটসোর্সিং ও অন্যদেরও আউটসোর্সিং শেখাবে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বিশ্বব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থা আইসিটি খাতের উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে পাঁচ কোটি। ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং আধুনিক ও সম্মানজনক পেশার স্বীকৃতি পেয়েছে। ঘরে বসে থেকে দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইসিটিতে ফ্রিল্যান্সিংকে চাকরির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ভারত, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা ব্যাপক আগ্রহের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা এখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পথ হাঁটছে। যদিও বাংলাদেশ, ভারত ফিলিপিন্সসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে এখন আর তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে নিজেদের স্বীকার করে না। তারা এখন মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে দরিদ্র তালিকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলেন, আউটসোর্সিং একটি সম্মানজনক পেশা। কিন্তু এই পেশাকে এখন পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ ভারতে একটি ছেলে ঘণ্টায় তিন থেকে পাঁচ ডলারে কাজ করছে। পাকিস্তান, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি রেটে ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের ঘণ্টায় দেড় থেকে দুই ডলারে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় ছেলেমেয়েরা যে ধরনের কাজ করছে, আমার দেশের ছেলেমেয়েরাও একই কাজ করছে। এর পেছনে একটিই কারণ, আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমাদের আইসিটি নিয়ে তেমন কোন প্রচার নেই, যেটা অন্য দেশগুলো সহজেই করে নিতে পেরেছে। তাছাড়া আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম বেশি, গতি কম। আবার বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসায় টানা কাজও করতে পারে না। কোন কোন কোম্পানির কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারলে পুরো কাজটাই তাদের মাটি হয়ে যায়। ওই কাজের কোন মূল্য দেয়া হয় না। অন্য দেশে এই জিনিসটা নেই। এখন আমাদের অনেক দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে। এখনই শুরু করতে হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার-প্রসার। তাহলেই এই পেশায় ছেলেমেয়েরা আরও বেশি আগ্রহী হবে। সূত্র জানিয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ সফরে এসে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ওডেস্কের সহ-সভাপতি ম্যাট কুপারও আউটসোর্সিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের তরুণসমাজের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। তবে ইন্টারনেট ব্যয় কম এবং ইন্টারনেটের গতি সন্তোষজনক অবস্থায় থাকতে হবে। আউটসোর্সিয়ের মূল মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের দাম না কমালে আউটসোর্সিয়ে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের তরুণরাই কাজ করতে পারবে। নিম্নবিত্তের তরুণরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ম্যাট কুপারের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তারা বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করলে এই সেক্টর থেকে আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ঘরে বসে থেকে একজন তরুণ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবে। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু বাজেটে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচী বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, বিশ্বের তরুণসমাজের কাছে স্বাধীন, সম্মানজনক, দক্ষতানির্ভর চাকরি মানেই আউটসোর্সিং। এ বিষয়টি দেশের তরুণসমাজের মধ্যেও বিরাজ করছে। দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। তরুণদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। কিন্তু মেধাবী তরুণদের মধ্যে আউটসোর্সিং আয়ের বড় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। তারা এখন ঘরে বসেই অনেক টাকা আয় করছে। তবে অবকাঠামোগত সুবিধা-অসুবিধাগুলো রয়েছে। ইন্টারনেটের গতি এবং প্রতি এমবিপিএসের দাম উচ্চমূল্যে শোধ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধার হচ্ছে বিদ্যুত। বিদ্যুতের লুকোচুরির খেলায় আউটসোর্সিং কাজ করা তরুণরা হাঁপিয়ে উঠেছে। থাকতে হবে ব্যাকআপ ব্যবস্থা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে আবাসিক সুবিধাসহ তিন থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের একটি ব্যাচ বের হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় দেশের প্রতিটি স্তরে আইটি সেক্টরে বাংলাদেশের তরুণরাই নেতৃত্ব দেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামীতে ‘ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এজেন্সি’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের তরুণরা দেশী-বিদেশী আইটি ফার্মে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে দেশে একটি ইকো সিস্টেম ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আইসিটি খাত থেকে ৩শ’ মিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের তরুণদের কাজে লাগাতে ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং’ ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি রয়েছে। শ্রমভিত্তিক অর্থনীতির পাশাপাশি মেধাভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। আইসিটি সেক্টর এক সময় দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হবে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২শ’ ৩২ একর জমির ওপর হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনটি ব্লকের কাজ শেষ হয়েছে। আইসিটি খাতে আর্থিক সুবিধা চালু করায় আইডিএলসি কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। বর্তমান ও ভবিষ্যত্যেও এই খাতটিই হবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। ২০১৬ সালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার টার্গেট রয়েছে।
×