ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’- পাঁচ দিনের স্মরণানুষ্ঠান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শিল্পকলায় ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’- পাঁচ দিনের স্মরণানুষ্ঠান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশী নাট্যচর্চা ও নিজস্ব নাট্যরীতি গড়ে তোলার পেছনে প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন বেশ কয়েকজন নাট্যকারের আবির্ভাব হয়েছিল পঞ্চাশের দশকে। যারা বহুমুখী নাট্যধারা প্রবর্তনের ফলে কোন এক সময়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ’৭১-পূর্বকালে যেখানে কবিতাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম, ’৭১-পরবর্তীকালে তার স্থান নিয়েছিল নাটক। এর সবটুকুই সম্ভব হয়েছিল সেই সব গুণী নাট্যকারদের ঐকান্তিক চেষ্টায়। আজ তাঁদের অনেকেই আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আছে তাদের সৃষ্টি। এদের মধ্যে বরেণ্য প্রয়াত ৯ নাট্যকার স্মরণে শিল্পকলা একাডেমিতে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ‘স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। প্রয়াত এ নাট্যকাররা হলেন- মুনীর চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীন, নূরুল মোমেন, সাঈদ আহমদ, এসএম সোলায়মান, জিয়া হায়দার ও আনিস চৌধুরী। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এদিন বিকেলে পাঁচ দিনব্যাপী এ স্মরণানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী ভাষণে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। পাশাপাশি গভীরভাবে স্মরণ করছি আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা ‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুরকার প্রয়াত আলতাপ মাহ্মুদকে। আজ যে সব নাট্যকারদের স্মরণে এ আয়োজন, তাঁদের প্রায় সবার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মযজ্ঞে। নাটক ছাড়া এদের সৃজনশীলতার পরিসর ছিল আরও বিস্মৃত। এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে আসতে পেরে আমি আনন্দিত, কারণ আমাদের সকল কাজের ধারাবাহিকতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই আয়োজন। আমরা যাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নাট্যচর্চাকে অব্যাহত রাখছি, তাঁদের স্মরণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী। মনে রাখা উচিত অতীতকে ভুলে গেলে, বর্তমানকে স্পর্শ করা যায় না। এদের প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে আমাদের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে এবং নাটক সম্পর্কে প্রেরণা যুগিয়েছে। আমার জীবনের প্রাপ্ত স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে যোগ হলো, আজকের এই স্মরণানুষ্ঠান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. নাসরীন আহমদ বলেন, আজ যে সব ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করা হচ্ছে তারা নিজ নিজ নাট্য প্রতিভা দিয়ে বাংলা নাটক তথা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিনোদন জগতের অন্যতম অংশ জুড়ে রয়েছে নাটক। আর যে নাট্যকারদের স্মরণ করা হচ্ছে, তারা শুধু নাট্যকার নয়, এক বহুমাতৃক প্রতিভার অধিকারী। তারা সংস্কৃতির শেকড় সন্ধান করেছেন। তাদের জন্যই বিশ্বের দরবারে বাংলা নাটক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। নতুন প্রজন্ম এসব গুণী ব্যক্তিত্বদের সৃষ্টিশীল কর্মকা-ে প্রভাবিত হয়ে বাংলা নাটককে আরও প্রগতির দিকে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদের স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে অতিথিদের উপহার প্রদান করেন সারা আরা মাহমুদ। প্রধান অতিথি ও উদ্বোধকের বক্তব্যের পর মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উদ্বোধনী পর্বের পর ‘মুনীর চৌধুরীর নাটকে চিরন্তন বোধ’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মাহফুজা হিলালী। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, মুনীর চৌধুরীর নাটকে দ্বন্দ্ব এবং নাটকীয় মুহূর্ত সৃষ্টি প্রধান বৈশিষ্ট্য। পরিহাস প্রিয়তা, ফার্সি ও উর্দু শব্দের ব্যবহারে হাস্যরস তৈরি এবং দর্শককে কৌতূহলী রেখে নাটক এগিয়ে নেয়া নাটকগুলোকে পরিপূর্ণতা দান করেছে। তাঁর নাটকে উঠে এসেছে দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, বাঙালী চেতনাবোধ, চিরকালীন সংগ্রাম, প্রেম, মানুষে মানুষ দ্বন্দ্ব^, সাম্প্রদায়িকতার কুফল এবং সম্প্রীতির ইচ্ছা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বজনপ্রীতি, পুলিশ বাহিনীর অরাজকতা, নিয়মতান্ত্রিক ইচ্ছা, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, প্রেমের সম্পর্ক, রাজনৈতিক ঘোরপ্যাঁচ ও চাল, পুরুষদের নারীঘটিত দোষ, নারীর প্রতি লোভসহ মুক্তির প্রত্যয়। সর্বোপরি মুনীর চৌধুরী তরুণ সমাজের ওপর মূল আলো ফেলেছেন। প্রবন্ধ পাঠের ওপর আলোচনা করেন ড. মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন ও ড. বিপ্লব বালা। সবশেষে মঞ্চায়ন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটেক্স নাট্যদলের প্রযোজনায় মুনীর চৌধুরী ‘কবর’ নাটকটি। স্মরণানুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র নাটক নিয়ে’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। এদিনের আলোচক সৈয়দ হাসান ইমাম ও শিশির দত্ত। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন আতাউর রহমান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘সেলিম আল দীনের নাট্য রচনার প্রস্তুতি পর্বই তাঁর পরিণত পর্বে অনুসৃত শিল্প-আঙ্গিকের প্রসূতি : একটি নির্মোহ পর্যবেক্ষণ’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। আলোচক ড. আফসার আহমেদ ও অধ্যাপক ড. মলয় ভৌমিক। রাত ৮টায় নাট্যধারার ‘তরঙ্গভঙ্গ’ (নাটক পাঠ) ও রাত ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে সেলিম আল দীনের ‘নিমজ্জন’।
×