ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরের মধ্যে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ ॥ সাউথ এশিয়ান পিপলস ফোরামের নেতাদের মন্তব্য

দক্ষিণ এশিয়াকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দক্ষিণ এশিয়াকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে তাতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক সকল সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকেই এককাট্টা হয়ে কাজ করা উচিত। কারণ এ দেশগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে। এশিয়ার দেশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার মানসে মৌলবাদকে উসকে দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে স্ব-স্ব দেশের উগ্রপন্থী কিছু মানুষ। সোমবার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সাউথ এশিয়ান পিপলস্ ফোরামের উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে নেতৃবৃন্দ বলেন, একদিন গোটা দক্ষিণ এশিয়া হবে বিশ্ব অর্থনীতির রোল মডেল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিসহ মেধা বিকাশের সূচকে এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের অগ্রগতি ইতোমধ্যে টের পেয়েছে প্রতিপক্ষরা। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করা উচিত। এজন্য গোটা এশিয়ার প্রধান শত্রুই হলো সন্ত্রাসবাদ। যারা দেশবিরোধী তৎপরতায় সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক কিংবা অর্থ যোগানদাতা, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করার পরামর্শ তাদের। পাশাপাশি অর্থ যোগানদাতা ও সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতাদের নিজ নিজ দেশ থেকে নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানান তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন সাউথ এশিয়ান পিপলস্ ফোরামের আহ্বায়ক শ্রমিক নেত্রী লাভলী ইয়াসমিন। তিন দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল) জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে সেমিনারের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য শিরিন আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- মানিক সমাজদার (ভারত), চেত নারায়ণ বাসাইলি (নেপাল), জাকির হোসেন ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এম মাসুদ হোসেন খান। সেমিনারে ঢাকা ঘোষণা উপস্থাপন করেন সুবল সরকার। শিরিন আখতার এমপি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে তাতে বাংলাদেশই নেতৃত্ব দেবে। আমরা সে দিনের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে। তাই এর বিরুদ্ধে সকল সংগ্রামে মানুষ পাশে থাকবে। ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অবশ্যই নিষিদ্ধ করা হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে দেশ থেকে মৌলবাদের আগ্রাসন দূর হবে না। যে কোন মূল্যে মৌলবাদীদের দেশ থেকে বিতাড়ন করতে হবে। ভেঙ্গে দিতে হবে তাদের অর্থের উৎস। সেমিনারের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন তার বক্তব্যে বলেন, আগামী ১০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। সুবল সরকার বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়তে হলে প্রশাসনের পরিবর্তে জনগণের ঐক্য অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। কারণ আমাদের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। বিভিন্ন দেশে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নামে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলেছে। প্রকৃত অর্থে এরা সবাই একসূত্রে গাঁথা। যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাজেয়াফত করার দাবি জানিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, নানা উৎসব থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে দেশবিরোধী কর্মকা- চালানো হচ্ছে। তাই অর্থের উৎসে আগে আঘাত হানতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পদ বাজেয়াফত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সম্পদ লুটপাট ও দখল করে অনেকেই শত শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক মানুষ অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ তাদের সবচেয়ে বেশি ভাল থাকার কথা ছিল। এ প্রেক্ষাপটে সকল যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ বাজেয়াফত ঘোষণার পর তা বিক্রি করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবি জানান তিনি। ইমরান বলেন, জঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই যারা মানবতার পক্ষে কাজ করেন তাদের সবাইকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। নারী ও সাংস্কৃতিক কর্মী থেকে শুরু করে সকল সেক্টরের মানুষকে এ প্রতিরোধে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
×