ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পূরণে তৎপর নয় মন্ত্রণালয়গুলো

তিন লক্ষাধিক শূন্য পদ সরকারী চাকরিতেই

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তিন লক্ষাধিক শূন্য পদ সরকারী চাকরিতেই

তপন বিশ্বাস ॥ পাল্লা দিয়ে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে কেবল সরকারী চাকরিতেই তিন লাখের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর পদ রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। সরকার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিলেও মন্ত্রণালয়গুলোর তৎপরতার অভাবেই এসব শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে না। দেশে কেবল সরকারী চাকরিতেই তিন লাখ দুই হাজার ৯০৪টি পদ শূন্য রয়েছে, যা মোট পদের ১৮ শতাংশের বেশি। শূন্য পদগুলোর মধ্যে ৩৯ হাজার ৫৬৪টি প্রথম শ্রেণীর, ৩০ হাজার ৪২২টি দ্বিতীয় শ্রেণীর, এক লাখ ৬৩ হাজার ৪১৭টি তৃতীয় শ্রেণীর এবং চতুর্থ শ্রেণীর পদ ৬৯ হাজার ৫০১। সরকার অনুমোদিত ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪২টি পদের বিপরীতে বর্তমানে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ কর্মরত আছেন, যার ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী। জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তিন হাজার ১২০টি এবং অধিদফতর ও পরিদফতরে এক লাখ ৯৮ হাজার ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১০ হাজার ৪৪৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে শূন্য রয়েছে ৯১ হাজার ৪১৯টি পদ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৮১৭ কর্মকর্তা। দ্বিতীয় শ্রেণীর এক লাখ ৭৩ হাজার ১৮৫টি পদের বিপরীতে এক লাখ ৪২ হাজার ৭৬৩, তৃতীয় শ্রেণীর ১০ লাখ দুই হাজার ৪০৯টি পদের বিপরীতে আট লাখ ৩৮ হাজার ৯৯২ এবং চতুর্থ শ্রেণীর তিন লাখ ২৩ হাজার ৩৬৭টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৮৬৬ কর্মরত। সরকারের ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী, সংখ্যার হিসেবে দাঁড়ায় তিন লাখ ৭০ হাজার ৫৮১। নারী কর্মচারীদের ২৩ হাজার ৬৩৭ জন প্রথম শ্রেণীর, ৫৩ হাজার ৪১ দ্বিতীয় শ্রেণীর, দুই লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ তৃতীয় শ্রেণীর এবং ৪৭ হাজার ৯১ চতুর্থ শ্রেণীর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার জন্যই তিন লাখ পদ শূন্য পড়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে সরকারী কর্মকমিশন নিয়োগ দেয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে যেন কোন পদ যেন শূন্য পড়ে না থাকে সে বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে বলেও জানান তিনি। কোটাভিত্তিক পদগুলোই বেশি শূন্য রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, শূন্য পদগুলো দ্রুততার সঙ্গে পূরণে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোটায় নিয়োগে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় সরকার বিশেষ বিসিএস নিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দিতে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি থাকে। গত ২১, ২২ ও ২৫তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮, ২ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ২ ভাগ পূর্ণ হয়। আর ২৮তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে বিভিন্ন কোটায় ৮১৩টি পদের জন্য কোন যোগ্য প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। পরে এসব পদে নিয়োগ দিতে ৩২তম বিশেষ বিসিএস হয়। এর আগেও ২০০০ সালে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তবে অধ্যাদেশ জারির কারণে তা ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। ২০১১ সালের শেষে সরকারী কর্মচারীদের চাকরির বয়স বাড়ার ফলে গত তিন বছরে অল্প সংখ্যক সরকারী চাকুরে অবসরে গেছেন। ফলে প্রবেশ পদে লাখ লাখ প্রার্থী সরকারী চাকরি নামক ‘সোনার হরিণের’ সন্ধানে রয়েছেন, দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। ৩৫তম বিসিএসে একটি পদের জন্য ১৩৫ জন এবং ৩৪তম বিসিএসে একটি পদের বিপরীতে ১০৭ চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। ৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ এবং ৩৪তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫।
×