ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধে জড়িত সহস্রাধিক বিদেশী

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অপরাধে জড়িত সহস্রাধিক বিদেশী

শংকর কুমার দে ॥ বিদেশীদের অনেকেই নিজ দেশে অপরাধ করে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে বসবাস করছে। এদের সংখ্যা সহস্রাধিক। বাংলাদেশে এসেও তারা নানা ধরনের অপরাধ করে চলেছে। এসব বিদেশীর মধ্যে শুধু এটিএম কার্ড জালিয়াতিই নয়- মাদক ব্যবসা, জাল ডলার তৈরি, হু-ি ব্যবসা, চোরাচালান, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের মতো তৎপরতায় তারা লিপ্ত। অপরাধে জড়িত বিদেশীদের বেশিরভাগই অবৈধ বসবাসকারী। তবে জঙ্গীবাদ ও জাল টাকা পাচারের ঘটনায় সর্বাধিক তৎপরতা চালাচ্ছে এখন পাকিস্তানীরা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এতদিন আফ্রিকান নাগরিকদের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও এবার এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় ইউরোপিয়ান নাগরিক ধরা পড়ার ঘটনায় অপরাধ জগতে নাম লিখিয়েছেন ইউরোপীয়রাও। এখন থেকে অবস্থানকারী ও অবৈধ বসবাসকারী আফ্রিকানদের সঙ্গে ইউরোপিয়ানরাও গোয়েন্দা নজরদারিতে চলে এসেছে। আর ইতোমধ্যেই জাল টাকা পাচার ও জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা ছাড়াও প্রায় এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসব পাকিস্তানী গ্রেফতার হয়েছে তাদের বেশিরভাগই লস্কর-ই তৈয়বা নামে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য আছে গোয়েন্দা সংস্থায়। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, দেশে অবৈধ বসবাসকারী বিদেশীর সংখ্যা দশ সহস্রাধিক। এর মধ্যে সহস্রাধিক বিদেশী কোন না কোনভাবে অপরাধে জড়িত। বিদেশীদের অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রায়শ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেসব বিদেশী ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করছে তাদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরির অভিযান চলছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ভ্রমণ, ছাত্র, ব্যবসা ভিসায় বাংলাদেশে আসেন বিদেশীরা। গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানম-ি, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় অবস্থান করেন তারা। এক সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তারা এ দেশে অবৈধভাবে থাকতে শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। নিজ দেশে অপরাধ করে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে- এমন বহু দৃষ্টান্ত পেয়েছেন গোয়েন্দারা। উদাহরণ হিসেবে ক্যামেরুনের তিন নাগরিক পেরেজ ইফরেইন, সেন কেরিন ন্যাটি ও মিকো স্যান্ডিও নাটালি ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী। নিজ দেশে অপরাধ করে পালিয়ে এসে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা থেকে মাদক ও জাল টাকা ও জাল ডলার তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের পর তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) এ তথ্য দিয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, তিন পাকিস্তানী মেহমুদ, উসমান ও ফকরুল সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বোমা তৈরির ম্যানুয়াল। জঙ্গী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান অব পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তারা। গুলশানের নিকেতন থেকে গত বছর বিপুল জাল ডলার, ইউরো, রুপীসহ গ্রেফতার হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক জিংগে ফিলিং সিফু, ক্যামেরুনের সামজেলা ক্রিসসহ আটজন। একই বছরে কাওরানবাজার হোটেল লা-ভিঞ্চি থেকে গ্রেফতার হয় সোয়া ৩ কেজি কোকেনসহ জুয়ান পাবলো রেফায়েল নামে পেরুর এক নাগরিক। উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয় মদসহ কামারা কাডে, কোনজি লোভেনিয়া এবং রবার্টো মিলি মনোনো নামে গিনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিককে। এছাড়াও আলজিরিয়া, নাইজিরিয়া, উগান্ডা, ক্যামেরুন, গাম্বিয়ার আইভরিকোস্ট, কেনিয়া, টোগো, মালি, মোজাম্বিক ও সেনেগালের নাগরিকদের নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছাড়াও তাদের কাছে পাওয়া গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টও। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় ও রংপুরে দুই বিদেশী হত্যাকা-ের পর বিদেশীদের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার জন্য দেশে অবস্থানকারী বৈধ ও অবৈধ বিদেশীদের পরিসংখ্যান তৈরি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এটিএম কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে পোল্যান্ডের ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসা ইউক্রেনের নাগরিক পিওতর (পিটার) সিজেফান মাজুরেকসহ চারজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় দেশে অবস্থানকারী অবৈধ বসবাসকারী এবং অপরাধে জড়িত বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ, গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে।
×