ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সম্পাদককে দায়ী করলেন ;###;জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা

গণতন্ত্র ধ্বংসে জড়িতদের বিচার হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গণতন্ত্র ধ্বংসে জড়িতদের বিচার হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের ‘দালালদের’ বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে, ঠিক সেভাবে গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য একদিন তাদেরও বিচার হবে। এছাড়া ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশবিরোধী কর্মকা-ে জড়িতদের বিচারের ভার দেশের জনগণের ওপরও ছেড়ে দেন তিনি। জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকার কথা প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ পত্রিকা ওই সাহস করে সংবাদ প্রকাশ করে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের দুটি পত্রিকা গত ২০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও আমাকে নিয়ে কুৎসা রটনা করেছে। কিন্তু তাদের মুখোশ এখন উন্মোচন হয়েছে। তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের পদত্যাগ করা উচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিএফআই তথ্য দিয়েছে আর আপনি সুবোধ বালকের মতো তা লিখে দিলেন, এটা কোন পাগল বিশ্বাস করবে? এই দুটি পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে যে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। আর ডেইল স্টার সম্পাদক আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর বহু চেষ্টা করেছে। তিনি তা স্বীকারও করেছেন। আসলে সত্য কখনও চাপা থাকে না। ডেইলি স্টারের সম্পাদকের জন্য আমাদেরসহ দেশের জনগণকে খেসারত দিতে হয়েছে। তিনি তো ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস দেখাতে পারলেন না। তাই শুধু ভুল স্বীকার নয়, এতটুকু আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে এর পর নিশ্চয়ই তিনি পদত্যাগ করতেন। একই সঙ্গে এসব সত্য ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরতে কুণ্ঠাবোধ করার জন্য দলের সিনিয়র নেতাদেরও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য কথা বলতে এত কণ্ঠাবোধ কেন? মাহফুজ আনামের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি বুকের পাটা থাকে, সাহস থাকে তবে জাতির কাছে স্বীকার করেন ভুলে লিখেছেন। তাহলে তো নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন বা তাদের সঙ্গে সখ্য থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও এসএম কামাল হোসেন। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি উশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের অবমাননামূলক আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ডেইলি স্টার সম্পাদকের কঠোর সমালোচনা করে আরও বলেন, এই সম্পাদক সাহেব ডিজিএফআইয়ের লেখা ছাপিয়ে ভুল করেছেন বললেন। কিন্তু এই ভুলের খেসারত বাংলাদেশের জনগণ দিল, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিল, এ দেশের ব্যবসায়ী মহল দিল, ছাত্রসমাজ দিল, সকলে দিল। আর যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখেছে সেজন্য আমি-আমার পরিবার তো দিয়েছেই। ওই পত্রিকা দুটো প্রতিষ্ঠার পর থেকে হয় তো প্রথম কয়েক বছর আমি দেখেছি একটি নিরপেক্ষ পত্রিকা। এর পরে গোটা ২০টা বছর আমার রাজনীতি জীবনে এই পত্রিকা দুটো শুধু আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে গেছে। আমার বিরুদ্ধে লিখে গেছে। মনে হয় আওয়ামী লীগই যেন তাদের শত্রু। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দৈনিক জনকণ্ঠসহ দু-একটি পত্রিকার সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল। একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতোই তারা এ দেশে ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। তখন জনকণ্ঠসহ দু-একটি পত্রিকা সেসব লিখেছে, বাকিরা কিছুই লেখেনি। ওই সময় ওই পত্রিকা দুটোর (ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো) যে চরিত্র ছিল, এখনও তা বদলায়নি। তিনি বলেন, ওই দুটো পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু পারেনি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ২০টি বছর ধরে ওই পত্রিকাগুলো আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছে। আওয়ামী লীগ যেন তাদের শত্রু! কিন্তু এখন তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছর আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এই সাতটি বছর দেশ অন্ধকারের যুগে ছিল। দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটানো হয়েছিল। বিএনপির চরম দুঃশাসন, লুটপাট ও জঙ্গীবাদের কারণেই দেশে জরুরী অবস্থা এসেছিল। ইমার্জেন্সি দিয়ে এসে নির্বাচন না দিয়ে তারাই ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। আর যারা ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতায় এসেছিল তারা সবাই খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপিরই আপনজন ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফখরুদ্দীন আহমদকে বিশ্বব্যাংক থেকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। জেনারেল মইন উ আহমদকেও ৯ জন সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই তারা উল্টে যান। আর এরা যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারে সেজন্য কয়েকটি পত্রিকা উঠেপড়ে লাগে। সম্প্রতি একজন সম্পাদক (মাহফুজ আনাম) নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ওই সময় ডিজিএফআই যা দিত, তাই তারা ছাপিয়ে দিতেন! আমার প্রশ্ন- ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে উনার কী সখ্য ছিল? উনাকে যা ধরিয়ে দিত তাই হুবহু ছাপিয়ে দিতেন। মদদ দিতে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমীনরা যা দিত, তাই ছাপানো হতো। যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে, ঠিক সেভাবে একদিন তাদেরও (মাহফুজ আনাম) বিচার হবে। ওয়ান ইলেভেনের সময় মাইনাস টু ফর্মুলাসহ নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য কখনও চাপা থাকে না। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতেও এরা উঠেপড়ে লেগেছিল। তবে মাহফুজ আনামকে একটা কথাই বলব- অনেক চেষ্টা করেছেন। আপনার পিতৃতুল্য বিশ্বব্যাংকও আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে পারেনি। আর আপনি। তবে সবার কাছে আমার একটি প্রশ্ন- নির্ভীক সাংবাদিকতা কাকে বলে? ডিজিএফআই যা দেবে তাই ছাপানোর নামই কি নির্ভীক সাংবাদিকতা? উনি (মাহফুজ আনাম) কি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন যে যা দিত তাই ছাপিয়ে দিতেন? মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গেও ওই সম্পাদকরা জড়িত ছিলেন। সাহস থাকলে জাতির কাছে তা স্বীকার করুন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহলের বক্তৃতা-বিবৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে যখন বিনা কারণে ১১ মাস কারাগারে রাখল তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? বিভিন্ন জায়গায় মামলা হওয়ায় অনেকে হা-হুতাশ করছেন, অনেকের দুঃখ লাগছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় ওয়ারেন্ট ছাড়াই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমার স্বামীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। টেনে-হেঁচড়ে আমাকে আদালতে নেয়া হয়। ভাঙ্গা খাটে, ইঁদুর খাওয়া বালিশ-তোষকে আমাকে থাকতে দেয়া হয়। এসব ঘটনায় কারা ইন্ধন যুগিয়েছিল? তিনি বলেন, তাদের মিথ্যা খবরের কারণে দেশের ক্ষতি হয়েছে, দেশবাসীকে কষ্ট করতে হয়েছে, বিপাকে পড়তে হয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের। আর আমার নিজের ও পরিবারের ক্ষতি তো হয়েছেই। তিনি বলেন, যারা এই মামলা দেয়ার বিরুদ্ধে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ১১ মাস যদি আপনাদের সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয় আর যদি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয় আর যদি মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়, তাদের পরিবারের প্রতি যদি এ রকম করা হয় তাহলেও কি তারা বিবৃতি দেবেন? সহানুভূতি দেখাবেন? তিনি বলেন, এ বিপদ শুধু আমার একার বিপদ ছিল না, এ বিপদ ছিল সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের বিপদ। এদের এই ক্ষমতার লিপ্সা একটা দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছিল। আজ তাদের হয়ে এত বিবৃতি! একটু মামলায় ঘাবড়ে গেলেন? আর জেলখানায় যদি ১১ মাস সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয় তাহলে কী হতো? প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব মামলার ঘটনায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- দীর্ঘ ১১টা মাস আমাকে নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। কারাগারে কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেও সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয় না। ঈদের দিন পর্যন্ত আমার কোন আত্মীয়স্বজনকে দেখতে আসতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সেখানে স্যাঁতসেঁতে ঘরে তাঁকে থাকতে দেয়া হয়, ছেঁড়া কম্বলে তাঁর গায়ে এ্যালার্জি উঠে যায়, চোখে সমস্যা দেখা দেয়। অসুখে ভুগলেও ডাক্তার পর্যন্ত পাইনি। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় ১২টিসহ ১৬টি মামলায় আমাকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়। আমার বোন-ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে শুধু আমাকে নয়, গোটা বাংলাদেশকেই ঘোর বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হয়। ক্ষমতার লিপ্সায় গোটা দেশকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে ডেইলি স্টার সম্পাদকের পদত্যাগ করা উচিত ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে বিবিসিতে এক ব্রিটিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটা নিউজ ছাপা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নিউজটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সংস্থাটি শুধু ক্ষমাই চায়নি, মহাপরিচালকসহ রিপোর্টাররা পদত্যাগ করে চলে যান। আর আমাদের দেশের ওই পত্রিকাটির সম্পাদক বলেছেন, উনি ভুল করেছেন। আর তার ভুলের খেসারত আমাদেরসহ দেশের জনগণকে দিতে হয়েছে। ডিজিএফআই তথ্য দিয়েছে আর সুবোধ বালকের মতো তা দিয়ে দিলেন, এটা কোন পাগল বিশ্বাস করবে? তাই শুধু ভুল স্বীকার নয়, এতটুকু আত্মমর্যাবোধ থাকলে সাহস দেখিয়ে পদত্যাগ করুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেনে কিংস পার্টি গঠনের কথাও তুলে ধরে বলেন, এরা ওয়ান ইলেভেনের সময় কিংস পার্টি গঠন করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। একজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রেও ওই পত্রিকা দুটি কাজ করেছে। এমনকি গত ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময়ও পত্রিকা দুটোর কী ভূমিকা ছিল- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দেশে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পতাকা পাবেন, সেই আশা পূরণ হয়নি বলেই তারা এখন হতাশায় ভুগছেন। ডেইলি স্টার সম্পাদকের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে। তবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পাদক (মাহফুজ আনাম) পড়াশোনার কথা বলে পাকিস্তানের করাচীতে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরে কলকাতা আসেন। কিছু ইংরেজী জানার কারণে ওই সময় কিছু লেখালেখি করেন। শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা ডিজিএফআইয়ের দালালি করে তারা দেশের মানুষকে কী দেবে? বরং এতদিন তারা (ডেইলি স্টার) যা লিখেছে তার সবই ভোগাস ও দেশ ধ্বংসের জন্য কি-না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ২০ বছর ধরে তারা আমার বিরুদ্ধে লিখেছে। আমার দলেরও কিছু নেতা আছেন তারা এ নিয়ে কোন কথা বলতে চান না, মুখ খুলতে চান না। এটা কেন করেন জানি না। কিন্তু আমার সৎ সাহস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র ও চড়াই-উতরাই পার করেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছি। এসব উন্নয়ন-সাফল্যের কথা না লিখে আপনাদের শুধু ঘোট পাকানোর চেষ্টা কোনদিনই সফল হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। আর এসব দালালের বিচারের ভার আমি বাংলাদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে গেলাম। ভাষা শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন ত্যাগই বৃথা যায় না। ত্যাগের বিনিময়েই আমাদের সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে। সারাবিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণ করতে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’- গানটি এখন ১৬টি ভাষায় গাইতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের সদস্য ১৯৮টি দেশেও যাতে আমাদের এই ঐতিহাসিক গানটি স্ব স্ব দেশের ভাষায় গাইতে পারে, আমরা সে উদ্যোগও নিয়েছি। সেই সঙ্গে মাতৃভাষার জন্য মহান আত্মত্যাগের বিষয়টিও যাতে বিশ্বের মানুষ জানতে পারে সে বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
×