ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ঝাঁজালো গন্ধে পরিবেশ দূষণ

কয়েক হাজার টন সার মাঠে

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কয়েক হাজার টন সার মাঠে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২২ ফেব্রুয়ারি ॥ উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দর এলাকায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত হাজার হাজার টন রাসায়নিক সার আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস আকাশের নিচে পড়ে থাকায় এ সারের গুণগতমান কমে যাচ্ছে। এছাড়াও দেশী-বিদেশী সার প্রতি বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি ওজন কম হওয়ায় এ সার কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে বলেও ডিলাররা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিন বাঘাবাড়ী-নগরবাড়ী ঘুরে জানা গেছে, বিসিআইসি আমদানিকারকদের মাধ্যমে চীন, মিসর, সৌদি আরব, তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করে। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ওই সার বাফার গুদামে পৌঁছে দেয়া হয়। সমুুদ্রপথে বড় জাহাজে সার আমদানি করে লাইটারেজ জাহাজে আনলোড করে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী বন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সড়কপথে সার মজুদের জন্য উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে পাঠানো হয়। বাফার গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে এবং নগরবাড়ীতে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী সারের বস্তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে শক্ত ও জমাট বেঁধে সার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বন্দরের ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ও বিসিআইসির বাঘাবাড়ী বাফার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের পাবনা-সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, বগুড়া, শান্তাহার, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর চরকাট, ঠাকুরগাঁও, বিরামপুর ও গাইবান্ধায় বাফার গুদাম রয়েছে। গত বছরের সারে বাফার গুদামগুলো ভরা রয়েছে। ফলে বন্দরে যে পরিমাণ সার আসছে তা বন্দর এলাকাতেই পড়ে থাকছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা সারের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং ঝাঁঝালো গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সরেজমিন বাঘাবাড়ী বন্দরে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ছয় মাস ধরে হাজার হাজার টন রাসায়নিক সার নদীতীরবর্তী ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে মাটিতে স্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি ও কুয়াশাতে ভিজে রোদে পুড়ে সারের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার টন সারের বড় বড় স্তূপ পড়ে আছে। বাতাসে ভাসছে সারের তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ। আশপাশের এলাকায় এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সারের ঝাঁজালো গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এদিকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার টন রাসায়নিক সারবোঝাই ১০টি কার্গো জাহাজ বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দরে এসে নোঙর করেছে। অনেক জাহাজ আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়মানুযায়ী জাহাজ বন্দরে পৌঁছার পর আনলোড করে সার ট্রাকযোগে বাফার গুদামগুলোতে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় এই সার মাসের পর মাস বন্দরেই পড়ে থাকছে। বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, নগরবাড়ী নৌবন্দরে সংরক্ষণাগার না থাকায় রাসায়নিক সার খোলা আকাশের নিচে স্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে থাকায় এই সারের কার্যক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। সংশিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বাঘাবাড়ী ও নগড়বাড়ী বন্দরসহ এ অঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে প্রায় এক লাখ টন রাসায়নিক সার মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চায়না থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের সার রয়েছে। এই সার বাংলাদেশের কাফকো ও যমুনা সারের চেয়ে অনেক নিম্নমানের। এ নিম্নমানের সার সরবরাহের ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর আমদানিকারক, বাফার গুদাম ইনচার্জরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঘাবাড়ী বাফার গুদামের ইনচার্জ সুদেব বাবু জানিয়েছেন, দেশে উৎপাদিত কাফকো ও যমুনা ইউরিয়া সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চায়না থেকে আমদানি করা জমাটবাঁধা ইউরিয়া সারের চাহিদা খুবই কম। কারণ এই সারের গুণগতমান নিয়ে কৃষকরা আতঙ্কিত। জয়পুরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা জয়পুরহাট থেকে জানান, জয়পুরহাট বাফার সার গোডাউন চত্বরে হাজার হাজার বস্তা ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। গোডাউনে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় প্রতি বছরই এভাবে খোলা আকাশের নিচে সার রাখা হয়। বাফার সার গোডাউনটি দুই হাজার টনের ধারণক্ষমতার হলেও অতিরিক্ত আরও তিন হাজার টন ঠাসাঠাসি করে রাখায় ওই সারের গুণগতমানও নষ্ট হচ্ছে। জানা যায়, জেলায় ইউরিয়া সারের বার্ষিক চাহিদা ৪৯ হাজার টন। অপরদিকে পার্শ¦বর্তী নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও পতœীতলা উপজেলার কৃষকদের সারের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার টনসহ প্রায় ৬৫ হাজার টন সার এই বাফার গোডাউনে সংরক্ষণ করা হয়। জয়পুরহাটের ৫৬ জন ও নওগাঁর দুই উপজেলার ২০ ডিলার এই গোডাউন থেকে সার সরবরাহ নিয়ে কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যায়। চাহিদা অনুযায়ী সারও আসছে যথারীতি নিয়মে। এই বিশাল চাহিদা থাকলেও বাফার সার গোডাউনের ধারণক্ষমতা মাত্র দুই হাজার টন। কিন্তু গোডাউনের ভেতরেই অতিরিক্ত তিন হাজার টনসহ পাঁচ হাজার টন সার ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে। গোডাউনের বাইরে খোলা আকাশের নিচে আরও প্রায় পাঁচ হাজার টন সার রাখা হয়েছে।
×