ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কার্ড জালিয়াত পিওটর আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রে জড়িত

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কার্ড জালিয়াত পিওটর আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রে জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আটক পিওটর সাজেপেন মাজুরেকসহ আরও দুই বিদেশি নাগরিক অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। রবিবার রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এক বিদেশিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আটকেরা হলেন- পিওটর সাজেপেন মাজুরেক, সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মকর্তা মকসেদ আল ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে করিম ওরফে শাহিন ও রেফাজ আহমেদ ওরফে রনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া পিওটর সাজেপেন মাজুরেক জানিয়েছেন এটিএম জালিয়াতির ঘটনার পরিকল্পনায় একজন লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, একজন বুলগেরিয়ান এবং একজন ইউক্রেনিয়ান ছিলেন। পিওটরের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট ও জার্মানির পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি জার্মানির নাগরিক। তিনি বাংলাদেশি এক নাগরিককে বিয়ে করেছে। তার একটি সন্তানও রয়েছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি জার্মানির নাগরিক।। অন্যের পাসপোর্ট চুরি করে থমাস থেকে পিওটর নাম ধারণ করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন তিনি। গত বছর বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে আদম ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন পিওটর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দুই বিদেশিসহ আরো একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের নাম বলেছেন। তবে ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই তারা দেশ থেকে পালিয়েছেন বলে দাবি করেন পিওটর। মনিরুল জানান, পিওটর আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত। তার এই অপরাধ চক্রটি পূর্ব ইউরোপের রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইউক্রেন পোল্যান্ডভিত্তিক অপরাধ চক্রটি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তৎপর রয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, পিওটর এক বছর আগে বাংলাদেশে এসে একটি হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানেই তার সঙ্গে সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে অন্যান্য কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ ব্যাংক জালিয়াতি করার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রটি কেন বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, ‘অতি লোভের কারণে তারা বাংলাদেশে ব্যাংক জালিয়াতি করেছে। এছাড়াও তারা ভেবেছিল বাংলদেশের টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট দুর্বল।’ সাধারণত বিদেশিদের নজরদারির দায়িত্ব পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি)। একের পর এক বিদেশিদের অপরাধে জড়িয়ে থাকায় এসবির ব্যর্থতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন তারা অন্যান্য উন্নত দেশেও একই কাজ করেছে। যেসব দেশকে ইন্টেলিজেন্স, উৎকর্ষতার দিক থেকে আমরা মডেল মনে করি, তাদের দেশেও অপরাধ করে পালিয়ে এসেছে অপরাধীরা।’ গত ১২ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে কৌশলে টাকা তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে জানা যায়, আরো অন্তত ২১ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে একইভাবে আনুমানিক ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা করা হলে ডিবি পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে। মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে সোমবার ভোর হয়ে গিয়েছিল। তাই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তাই বিজ্ঞ আদালতের কাছে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।
×