ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইলে দিনে লেনদেন ৫৫৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মোবাইলে দিনে লেনদেন ৫৫৮ কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বা অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং কেবল টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে এতে। প্রতিমাসেই বাড়ছে বিভিন্ন সেবা বিল দেয়ার পরিমাণ। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ৩৭৮ কোটি টাকা ছিল। এক বছরে লেনদেন বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। কম সময়ে টাকা পাঠানোর সুযোগের ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার দ্রুত প্রসার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ১৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসে ১১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ায় দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৭৮ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২১৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিবছরই তার আগের বছরের তুলনায় লেনদেন বাড়ছে। এর আগে ঈদ সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে একবার দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এ মাধ্যম ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠাচ্ছে। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, এর মাধ্যমে শহর থেকে গ্রামে বেশি টাকা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যাংকগুলোর প্রবেশাধিকার ও অবৈধ সিম বাতিলের উদ্যোগের ফলে সামনের দিনে এর মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের কোন অভিযোগ হয়ত আর শোনা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করবে। তবে বেশিরভাগ এজেন্ট এ নিয়ম না মেনে নামে-বেনামে এ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠায়। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এরপর এ ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে কয়েক লাখ এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন এজেন্ট। বাতিল করা হয় অনেকের এজেন্টশিপ। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তবে এসব এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু রয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ। আগের বছরের একই মাস শেষে দুই কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু ছিল এক কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার। আর ২০১৩ সালে এক কোটি ৩১ লাখ এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু ছিল এক কোটির কম এ্যাকাউন্ট। কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। সারাদেশে ২০১৫ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্ট রয়েছে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৬। এর আগের বছরে এজেন্টর সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৪১ হাজার। ২০১৩ সাল শেষে ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার। মূলত নানা অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেকের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। অনেক দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যাংকগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সহায়তায় এজেন্টের মাধ্যমে এ সেবা দেয়। সেবার বিপরীতে পাওয়া কমিশন ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর ও এজেন্ট এই তিন স্তরে ভাগ হওয়ার ফলে এখানকার চার্জ তুলনামূলক বেশি। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে দৈনিক লেনদেনের সংখ্যা ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার। আগের মাসের তুলনায় গত জানুয়ারিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেয়ার হার ১২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত মাসে ক্যাশ ইন তথা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা ঢোকানো হয়েছে। এ সময়ে ক্যাশ আউট তথা তুলে নেয়া হয়েছে ৬ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিশোধ ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৫৭ কোটি টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় যা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ১১৪ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যান্য পরিশোধ আগের মাসের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫০৯ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থাকলেও মোট লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে।
×