ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দ্রাটিকিবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক রুবেল!

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সুন্দ্রাটিকিবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক রুবেল!

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ বাহুবলে আলোচিত চার স্কুলছাত্র হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আটক রুবেল এতদিন পর্যন্ত সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসীর জন্য ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। সেই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিচয় ছিল দুর্ধর্ষ ‘ইভটিজার’। নির্মম এই হত্যাকা-ের আগে গ্রামবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রুবেলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস না পেলেও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার বিষয়টি ফাঁস হলে এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এখানকার অসহায় মানুষগুলো। তারা এখন মুখ খুলছেন আর দিচ্ছেন রুবেলের অতীত জীবন কাহিনীর লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, একক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে সম্প্রতি সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সর্দার হন দুর্ধর্ষ আব্দুল আলী বাঘোয়াল। আর তারই পুত্র রুবেল। এক সময় রুবেল স্থানীয় ফয়েজাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় মনোনিবেশ না করে বরং প্রতিদিনই তার সহপাঠীদের সঙ্গে অকারণে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতো। সে সময় প্রভাবশালী বাবার ভয়ে কেউই এসবের প্রতিবাদ করার সাহস পেতে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুবেলের মাঝে সৃষ্টি হয় যৌন লালসার এক বিকৃতি অভিরুচি। শুরু হয় তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন। ফলে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিয়েই সে ক্ষান্ত হতো না বরং নানা অঘটন ঘটাতেও দ্বিধা করত না সে। ইয়াবা সেবনসহ পরনারীর যৌন লালসায় ছিল পটু। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুরসহ বহু মেয়েকেও লাঞ্ছিত করে সে। কয়েক মাস আগে একই স্কুলের ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া জনৈক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানি করে। এই ছাত্রীর বাবা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন আল রশীদকে অবহিত করেন। সভাপতি রুবেলকে শাস্তি দিলে তাতে উল্টো ফল হয়। ক্ষুব্ধ রুবেল সভাপতির পুত্রকে বেদম প্রহার করে। এদিকে এমন ঘটনায় সভাপতির পক্ষ নেয়া লোকজনের সঙ্গে রুবেল ও তার পিতা মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি সালিশ বৈঠকে গড়ায়। কিন্তু এএসসি পরীক্ষায় চলায় তা মুলতবি রাখা হয়। এরই মধ্যে চলতি মাসে পরীক্ষা শুরু হলে রুবেল মাত্র ৫টি বিষয়ে অংশ নেয়। অথচ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার আগে ৭টি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীর অভিমত, রুবেল ওই শিশু কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার কারণেই বাকি দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দেয়নি। রুবেলের একের পর অপকর্ম তার বাবাকে জানালেও কোন ফল পায়নি ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। ওই স্কুলের হেডমাস্টার প্রসিত কুমার দেব মিডিয়া কর্মীদের জানান, রুবেল ছিল বরাবরই উচ্ছৃঙ্খল।
×