ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ৫০ কর্মী আটক

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ার পুলিশ অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযান শুরু হয় শুক্রবার রাতে। প্রথম দিন ৯৭১ জনকে আটক করা হয়। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন এলাকায় একযোগে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিন হাজারের বেশি কর্মীকে আটক করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৫০ জনের মতো কর্মী রয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আটক ব্যক্তিদের যাতে জেলহাজতে পাঠানো না হয়, সে জন্য হাইকমিশনের কর্মকর্তারা দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর মিলেছে। সূত্র জানিয়েছে, গত দুই দিনে মালয়েশিয়ার পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের তিন হাজারের বেশি কর্মীকে আটক করেছে। দেশটির সরকার ঘোষণা দিয়েছে, কোন বিদেশী অবৈধ কর্মীদের দেশটিতে থাকতে দেয়া হবে না। বৈধ হওয়ার জন্য পাঁচ দফা সুযোগ দেয়ার পরও যারা বৈধ হতে পারেননি তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। এ অভিযানে বাংলাদেশের অবৈধ হয়ে পড়া কম করে হলেও ২ লাখ কর্মীকে দেশে ফেরত আসতে হতে পারে। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা এমন কথা জানিয়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের অবৈধ কর্মীদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে, যাতে তাদের দেশে ফিরতে না হয়। কর্মীদের বৈধ করার বিষয়ে যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল সেটিই বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ লাখ অনিবন্ধিত কর্মী এ প্রক্রিয়ায় বৈধতা পাবেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি অবৈধ কর্মী আছে। এ দফায় কোন কর্মী নিবন্ধন না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিবন্ধিত কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। এই প্রক্রিয়া টানা তিন মাস চলার কথা ছিল। অনলাইনে কর্মীদের নিবন্ধন করতে হবে। কোন প্রকার দালাল এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। রাজধানী পুত্রজায়ায় মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি এ ঘোষণা দেন। আবার তারই নির্দেশে কর্মীদের আটক করছে পুলিশ। জানা গেছে, অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম করেছে দেশটির সরকার। প্রয়োজনে পুলিশের টিম আরও বাড়ানো হতে পারে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অবৈধ কর্মীদের যেখানে দেখা যাবে সেখান থেকেই তাদের আটক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাজার মহাসড়ক, দোকান এবং জনসাধারণের চলাচল আছেÑ এমন সব জায়গায় অভিযান চালানো হবে। পুলিশের বিশেষ টিমগুলো বিদেশী কর্মীদের থাকার জায়াগাগুলোতেও ‘রেইড’ দিয়ে কর্মীদের পারমিট এবং কর্মস্থলের বৈধতা আছে কিনা তাও যাচাইবাছাই করছে। এ দফায় পুলিশী অভিযানে পুলিশকে জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। অভিযান চলাকালে বৈধ কাগজপত্রে লেখা-পেশা এবং নিজ কর্মস্থল ছাড়া অন্য জায়গায় কর্মরত শ্রমিকদের অবৈধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। এমনকি বাইরে কাজ করতে দেয়ার অপরাধে মালিককেও জরিমানা করা হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশের এটা সবচেয়ে বড় অভিযান। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযান অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। আটককৃতদের ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিটেনশন ডিপোতে রাখা হবে। পরে তাদের জেল বা স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আটক বিদেশীদের মধ্যে ঠিক কতজন বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে খবর রয়েছে পুলিশী অভিযানে ৫০ জনের মতো বাংলাদেশী কর্মী আটক হয়েছেন। তাদের ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম ঘোষণা করেনি। এমনকি কোন তালিকাও হাইকমিশনে পাঠায়নি। মালয়মেইল অনলাইন মেলাকা আঞ্চলিক অভিবাসন দফতরের পরিচালক ফউজি আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ওই এলাকায় আটক ২১২ জন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশী রয়েছেন। তবে সারাদেশে কতজন আটক হয়েছেন সেটা জানানো হয়নি। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি শুক্রবার বিদেশী কর্মী নেয়া স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যেসব বিদেশী কর্মী কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। জহুরবারুর জঙ্গলে পালিয়ে থাকা মোতালেব নামের এক কর্মী টেলিফোনে জানান, পুলিশী অভিযান শুরু হওয়ার দিন থেকেই তারা গহীন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। শতাধিক বাংলাদেশী কর্মী গত দুই দিন ধরে ওই জঙ্গলে রয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন, শনিবার রাতেই ওই এলাকা থেকে এক হাজারের বেশি কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। ভয়ে তারা খাবারের জন্য বাইরেও আসতে পারছেন না। কিছু শুকনো খাবার নিয়ে তারা জঙ্গলে ঢুকেছিলেন। এখন ওই খাবারও শেষ হয়ে গেছে। তারা যেসব দালালের মাধ্যমে কাজ করেন তাদেরও টেলিফোন করে পাচ্ছেন না। যদিও প্রতিমাসে এই দালালদের জনপ্রতি এক শ’ থেকে দুই শ’ রিংগিত দিতে হয়, যাতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে। এখন সেই পুলিশের ভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। দালালরা কোন কাজে আসছে না। এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন অবৈধ কর্মীরা।
×