ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আনসারুল্লাহর হেড কোয়ার্টার সাঁতারকুলের আস্তানা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আনসারুল্লাহর হেড কোয়ার্টার সাঁতারকুলের আস্তানা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের জঙ্গী আস্তানায় ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জঙ্গী গোপন বৈঠক করত। গত শুক্রবার অভিযানকালেও তাদের বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিল। আস্তানাটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গীদের হেডকোয়ার্টার। সেখানে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হতো। অভিযানের সময় বৈঠককারীদের বেশ কয়েকজন গুলি করতে করতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে দুইজন। গ্রেফতারকৃতরা ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে মুখ খুলেনি। তবে গ্রেফতারকৃতরা টঙ্গী ও উত্তরার আশকোনা এলাকায় দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান দিয়েছে। আস্তানা দুইটি থেকেও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে সর্বমোট ৬টি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলল। আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে জঙ্গী তৎপরতার নানা আলামত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলছেন, শুক্রবার রাতে সন্ধান পাওয়া বাড্ডার সাঁতারকুলের আস্তানাটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হেডকোয়ার্টার। সেখানে নিয়মিত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটির সদস্যরা বৈঠক করত। শুক্রবার রাতে অভিযানকালেও কয়েকজন জঙ্গী বৈঠক করছিল। বৈঠকে ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জঙ্গী উপস্থিত ছিল। সেটি ছিল সমন্বয় বৈঠক। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ও শাহীনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে। তবে গ্রেফতারকৃতরা নিজেরা ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা, সে বিষয়ে মুখ খুলেনি। গ্রেফতারকৃতরা টঙ্গী ও উত্তরার আশকোনায় আরও দুইটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গী সংগঠনটির আরও আস্তানা ঢাকার আশপাশে রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতেই মোহাম্মদপুরের জঙ্গীদের বিস্ফোরক তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে। শনিবার রাত তিনটা পর্যন্ত ওই আস্তানায় অভিযান চলেছে। সেখান থেকে মোট ১৯টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে রাজধানীতে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। ডিবির একটি সূত্র বলছে, সাঁতারকুলের অভিযানে ডিবির সঙ্গে জঙ্গীদের গোলাগুলি হয়। এক ডিবি কর্মকর্তা জঙ্গীদের চাপাতির কোপে মারাত্মক আহত হন। এমন পরিস্থিতি যখন চলছিল, ঠিক তখনই অন্য জঙ্গীরা পালিয়ে যায়। মূলত জঙ্গীরা পুলিশের সঙ্গে সম্মুখ গোলাগুলিতে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যই ছিল অপর জঙ্গীদের পালাতে সহায়তা করা। যাতে গোলাগুলির সময় অন্য জঙ্গীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। দুই জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। আজ তাদের আদালতে সোর্পদ করে রিমান্ডের আবেদন করার কথা রয়েছে। শুক্রবার রাতে সন্ধান পাওয়া বাড্ডার আস্তানা থেকে ধারালো চাপাতি ও বিভিন্ন ধরনের গুলি উদ্ধার হয়েছে। আর মোহাম্মদপুরের আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে মারাত্মক সব বিস্ফোরক। টাইম বোমা, হ্যান্ডগ্রেনেড, টেনিসবল বোমা, সসপ্যান বোমা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, টাইম বোমা বানানোর নানা সরঞ্জাম। আটক করা হয়েছে ১৭ জনকে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ জন জঙ্গী। অন্যদের নানা কারণে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধারকৃত বোমা দিয়ে মারাত্মক ধরনের ধ্বংসষজ্ঞ চালানো সম্ভব ছিল। ইতোমধ্যেই পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় পুরো এলাকা কেঁপে উঠছিল। আস্তানাগুলো নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বলে দাবি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে উত্তরা বাড্ডার সাঁতারকুলের জিএম বাড়ির তালিমুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও নূরানী কিন্ডারগার্টেন রোডে অবস্থিত একটি ৫ তলা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের একাধিক দল। বাড়ির নিচতলায় থাকা জঙ্গী আস্তানায় হানা দিলে ডিবির সঙ্গে জঙ্গীদের গোলাগুলি হয়। জঙ্গীরা ছুরিকাঘাতে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা বাহার উদ্দিন ফারুকীকে আহত করে। বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় সালাউদ্দিন ও শাহীন ওরফে কামাল নামে দুই জঙ্গীকে। উদ্ধার হয় জিহাদী বইপত্র, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মোতাবেক ওই রাতেই মোহাম্মদপুর বেঁড়িবাধ সংলগ্ন ঢাকা উদ্যানের পাশে নবোদয় হাউজিংয়ের প্রধান সড়ক সংলগ্ন ৬ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির পাঁচ তলায় থাকা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আরেকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের আগেই দুই জঙ্গী পালিয়ে যায়। ওই কারখানা থেকে ৬ কেজি উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক, ৬টি হ্যান্ড গ্রেনেডের আদলে তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা, ৯ প্রকারের কেমিক্যাল, টাইম বোমা বানানোর বিপুল পরিমাণ সুইচ, রিমোট কন্ট্রোল বোমার সরঞ্জাম, জিহাদী বই ও ট্রেনিংয়ের নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। আর তার ঠিক পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোজিম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান (ডিআইজি) মনিরুল ইসলাম জানান, সাঁতারকুলের আস্তানাটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হেডকোয়ার্টার। সেখান থেকে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হতো। আর মোহাম্মদপুরের আস্তানাটি মূলত জঙ্গী সংগঠনটির অস্ত্রগোলাবারুদ ও বোমা তৈরি এবং মজুদের কারখানা। ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে ফ্ল্যাট দুইটি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা। আনসারুল্লাহর কাছে প্রথমবারের মতো লিকুইড বিস্ফোরক পাওয়া গেল। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মধ্যে ৫ ধরনের বিস্ফোরক খুবই উচ্চমাত্রার। জঙ্গী সংগঠনটি সশস্ত্র জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে টেনিস বলবোমা ও পাঁচ কেজি ওজনের সসপ্যান বোমা বিশেষ আতঙ্কের কারণ। উদ্ধারকৃত প্রতিটি বোমাই খুবই শক্তিশালী ছিল। বোমাগুলো দিয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করা সম্ভব ছিল।
×