ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণের টানে বেনাপোল পেট্রাপোলে দুই বাংলার মিলন মেলা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রাণের টানে বেনাপোল পেট্রাপোলে দুই বাংলার মিলন মেলা

সাজেদ রহমান/আবুল হোসেন, বেনাপোল থেকে ॥ ওপার বাংলার মাইক থেকে ভেসে আসছে ‘একুশে জীবন লক্ষবার, একুশ আমার অহঙ্কার!’ আর এ বাংলার মাইকে তখন সুরেলা আওয়াজে ভেসে বেড়াচ্ছিল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...’। মাঝখানে কড়া বেষ্টনী। লোহার গেট। তার আবার দরজা বন্ধ। পোশাকধারী বিজিবি এবং বিএসএফ অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে। তারপরও ভাষা ও প্রাণের টানে সেখানে রবিবার ভিড় জমেছিল অগণিত মানুষের। এ এক আবেগের টান। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তের মানুষের মনে এত আবেগ টানে না। কারণ তাদের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের রয়েছে বেশ পার্থক্য। কিন্তু পশ্চিমবাংলা- নামেই মনে হয় একেবারে আমাদের বাঙালী। আমাদের সংস্কৃতি। ভাষা থেকে শুরু করে আচার-আচারণ, পোশাক-পরিচ্ছদ সব এক। এই রকম এক আবেগে রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জড়ো হয়েছিল দুই বাংলার মানুষ বেনাপোল এবং পেট্রাপোল সীমান্তে। যদিও মাঝখানে ছিল তীব্র বাধা। রবিবার সকাল ৮টা থকে বেনাপোলের অনুষ্ঠানে যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে ভাষাপ্রেমী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জড়ো হতে শুরু করে। ভাষার টানে শ্রদ্ধা জানাতে ওপার সীমান্তেও একই ভাবে জড়ো হন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভাষাপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনের নারী-পুরুষ ও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কারও হাতে পতাকা, কারও হাতে ফেস্টুন। কপালে প্ল্যাকার্ড, বুকে কালো ব্যাচ। আজ যেন একুশের ব্যথা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই চোখ-মুখে সবার আনন্দ অশ্রু। বেনাপোল সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিজিবি-পুলিশ ফুল দিচ্ছে বিএসএফের হাতে। মাইকে বাজছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’সহ একুশের অন্যান্য গান, কবিতা ও আবৃত্তি। তবে বেনাপোলের অনুষ্ঠান মঞ্চ ছিল ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে আর ভারতের মঞ্চ ছিল নোম্যান্স ল্যান্ডে। উভয় অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১০টায়। এ সময় বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্স ল্যান্ডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে দু’বাংলার আমন্ত্রিত ভাষাপ্রেমী অতিথিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে ভারতীয় আমন্ত্রিত অতিথিরা আসেন এপারের মঞ্চে। বাংলাদেশীরাও যান ওপারে। বেনাপোল স্থলবন্দরের নোম্যান্স ল্যান্ডের বেনাপোল অংশে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দুই বাংলার আমন্ত্রিত অতিথিরা। এর আগে সকালে দুই বাংলার একুশ উৎসব উপলক্ষে ভারত থেকে আসা অতিথিদের বরণ করে নেন বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। ভারতীয় অতিথিরা একে একে মঞ্চে উঠে গৌরবময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন চাকলাদার, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুজিদ, বেনাপোল বন্দরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র সেন প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর ও নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওপার বাংলা থেকে বেনাপোলের অনুষ্ঠানে আসেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও অঞ্চলের সাংসদ শ্রী মমতা ঠাকুর, উত্তর চব্বিশপরগনা জেলার সভাধিপতি শ্রীমতি রহিমা ম-ল, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য, উত্তর চব্বিশপরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি রহিমা ম-ল, ভাইস চেয়ারম্যান গোপাল ব্যানার্জী প্রমুখ। দুই দেশের অতিথিরা এ সময় সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ ভাষাসৈনিকদের ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। দুই বাংলার একুশ উৎসব উপলক্ষে দুপুর ১২টায় ভারতীয় অতিথিরা বাংলাদেশী অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে নিজেদের দেশে যান। দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী কবি, সাহিত্যিক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকা জনস্রোতে পরিণত হয়।
×