ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব রায় বাংলায় দেয়া কঠিন ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সব রায় বাংলায় দেয়া কঠিন ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের পক্ষে সব রায় বাংলায় লেখা খুব কঠিন। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা বেশি। বিচারকের স্বল্পতাও রয়েছে। নিয়মিত বিচারকাজ করতেই দেরি হয়, এই দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে আমরা চেষ্টা করছি।’ এর মাঝেই অনেক বিচারক বাংলায় বেশ কিছু রায় দিয়েছেন জানিয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘একজন বিচারককে অনেক সময় দিনে এক শ’ মামলার রায় ও আদেশ দিতে হয়। সবটা যদি আমরা বাংলাতে দিতে বলি, তাহলে সেটা কষ্টকর হয়ে যাবে।’ তাছাড়া অনেক আইন ও দেশী-বিদেশী রেফারেন্স ইংরেজীতে হওয়ায় বাংলায় রায় দেয়া অনেক ক্ষেত্রে জটিল হয়ে ওঠে বলেও জানান তিনি। ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলসে সুপ্রীমকোর্টের যে কোন আবেদন ইংরেজীতে করার বিধান ছিল। সেই নিয়ম সংশোধন করে সেখানে ‘ইংরেজী অথবা বাংলায়’ আবেদন করার কথা বলা হলেও এখনও অধিকাংশ আবেদন ও নথির কাজ চলে ইংরেজীতে। সরকার ও প্রশাসনের সব দাফতরিক কাজের পাশাপাশি গাড়ির নম্বরপ্লেট, সাইনবোর্ড, নামফলক ও টেলিভিশনে প্রচারিত সব বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে আদেশ এসেছে একাধিকবার। রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বা বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে রুলও জারি হয়েছে। তবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার উদ্যোগ উচ্চ আদালতেই গতি পায়নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাইকোর্টের কয়েক বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলায়। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ আর এম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন বলে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারকদের বাংলায় রায় লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। সুপ্রীমকোর্ট জাদুঘরে দেড় শতাব্দী আগে বাংলায় দেয়া একটি রায় রয়েছে, যে রায়ের প্যাডের লোগো ফার্সিতে। আদালতের সব কার্যক্রমে বাংলা ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে কয়েক বছর আগে সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন এক সাংসদ। পরে তা আর এগোয়নি। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘ইংরেজীতে রায় দেয়াই প্রচলিত। অনেক আইনও ইংরেজীতে। দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় সব রেফারেন্স ইংরেজীতে। এই অবস্থায় বাংলায় রায় দিতে হলে আগে জনবল সঙ্কট কাটাতে হবে। এরপর বিষয়টি চিন্তা করা যাবে।’ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগের অর্ধশত বিচারক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন।
×