ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘অস্ত্রবিরতিতে রাজি, কিন্তু প্রতিপক্ষ যেন এ থেকে ফায়দা নিতে না পারে’

আসাদের দাবি ॥ আমিই সিরিয়াকে বাঁচিয়েছি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আসাদের দাবি ॥ আমিই সিরিয়াকে বাঁচিয়েছি

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, যদি বিদ্রোহীরা ও তুরস্কের মতো আন্তর্জাতিক মদদদাতারা ভূখ- দখলের কাজে অস্ত্রবিরতিকে কাজে না লাগায়, কেবল তা হলেই তিনি অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে প্রস্তুত। আর সরকারবিরোধী পক্ষ বলেছে, তারা অস্থায়ী অস্ত্রবিরতিতে রাজি আছেন, তবে রাশিয়াসহ দামেস্কের মিত্র অস্ত্রবিরতি করবে বলে নিশ্চয়তা দিতে হবে, শহরগুলোর ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং গ্রামীণ এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে দিতে হবে। কিন্তু আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে যেগুলো ‘সন্ত্রাসী’ বলে মস্কো মনে করে, সেগুলোর ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প রাশিয়া ত্যাগ করবে বলে আপাতত কোন লক্ষ্য দেখা যায় না। খবর টেলিগ্রাফ ও ইয়াহুনিউজের। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, তিনি চান সিরিয়াকে রক্ষা করেছিলেন এমন ব্যক্তি হিসেবে এখন থেকে ১০ বছর তাকে স্মরণ করা হোক। তিনি স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাইসের সঙ্গে এক সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। তিনি তখনও প্রেসিডেন্ট থাকবেন কিনা, সেই প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট করে জানাননি। তার ভবিষ্যত কি হবে সেটিই সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় মূল প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছেন, কিন্তু তা কেবল এ শর্তে যে, বিদ্রোহী ও তুরস্কের মতো তাদের আন্তর্জাতিক সমর্থকরা ভূখ- দখলের জন্য এর সুযোগ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, ১০ বছর যদি আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিরিয়াকে রক্ষা করতে পারি, এর অর্থ এই নয় যে, আমি ১০ বছরও প্রেসিডেন্ট থাকব, আমি ১০ বছর নিয়ে আমার ভাবনার কথা বলছি মাত্র। তিনি বলেন, যদি সিরিয়া সুস্থ ও নিরাপদ থাকে, এবং আমিই দেশকে বাঁচিয়েছি, এটি এখন আমার কাজ, আমার কর্তব্য। যদি সিরীয়রা আমাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়, তবে আমি ক্ষমতায় থাকব। যদি তারা আমাকে না চায়, তবে আমি কিছুই করতে পারব না, অর্থাৎ আমি আমার দেশকে সাহায্য করতে পারব না, কাজেই আমাকে সোজা চলে যেতে হবে। বিশ্ব শক্তিগুলো শান্তি আলোচনা নতুন করে শুরু করার পথ উন্মুক্ত করতে সিরিয়াতে যুদ্ধ বন্ধ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধ বাস্তবে তীব্রতর হওয়ায় অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়েছে। অস্ত্রবিরতি চুক্তি ঘোষিত হওযার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি এক সাক্ষাতকারে আসাদ সমগ্র দেশ পুনর্দখল করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। এল পাইসের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, তিনি অস্ত্রবিরতির জন্য প্রস্তুত আছেন, কিন্তু সন্ত্রাসীদের তাদের অবস্থান উন্নত করতে এর সুযোগ নেয়া উচিত নয় বলে সতর্ক করে দেন। সরকার সব বিদ্রোহী দলকেই ‘সন্ত্রাসী’ বলে থাকে। সিরীয় সরকার রুশ বিমান হামলা ও ইরানী ও লেবাননের হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সমর্থন নিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরের ওপর অভিযান চালাচ্ছে। এতে হাজার হাজার লোক পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আসাদ বলেন, তার বাহিনীর সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য তার রুশ ও ইরানী মিত্রদের সমর্থন অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই সেই সাহায্য প্রয়োজন। কারণ ৮০টিরও বেশি দেশ বিভিন্নভাবে ওইসব সন্ত্রাসীদের মদদ যোগাচ্ছে। রুশ বিমান হামলা গৃহযুদ্ধের মোড় আসাদের অনুকূলে ঘুরিয়ে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা হতাশ হয়েছে। তারা প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সচেষ্ট বিদ্রোহীদের সমর্থন করে থাকে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোন অস্ত্রবিরতির লক্ষ্যে আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জেনেভাস্থ জাতিসংঘ দফতরে সর্বশেষ দফার আলোচনায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তাফান দে মিসতুরা শনিবার বলেন, বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এক সুইডিশ পত্রিকা এ কথা জানায়। শনিবার বিভিন্ন সিরীয় বিরোধী উপদল কোন সাময়িক অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে মতৈক্য ব্যক্ত করে। তবে তাদের মতে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে এরূপ চুক্তিতে পৌঁছতে হবে। হাই নিগোশিয়েশনস কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। কিন্তু কমিটি বলেছে, রাশিয়া ও ইরান এবং সাম্প্রদায়িক মিলিশিয়ারা লড়াই বন্ধ করবে, জাতিসংঘের অবশ্যই এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে। কয়েকটি বিদ্রোহী দল এবং সিরিয়ার নির্বাসিত রাজনৈতিক বিরোধী দল এ কমিটিতে রয়েছে। কমিটি আরও বলেছে, সব পক্ষের এক সঙ্গে অস্ত্রবিরতি করা এবং সিরীয় সরকারের বন্দীদের ছেড়ে দেয়া উচিত।
×