ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চার দেশের মেলবন্ধন

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চার দেশের মেলবন্ধন

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকার দিন আর নেই। প্রতিবেশীর প্রতি মুখ ফিরিয়ে রাখার প্রথাও লুপ্ত হয়ে আসে। বিশ্বায়নের যুগে বিচ্ছিন্ন হয়ে, পৃথক থাকার উপায়ও ফুরিয়ে গেছে। বিশাল আকাশ আর উদার প্রান্তরে দাঁড়িয়ে দু’বাহু বাড়িয়ে দেয়ার এই দিনে হাতে হাত মেলানোর মধ্যে রয়েছে যেমন প্রশান্তি, তেমনি সম্পর্কের গভীরতা আরও সমৃদ্ধতর হয়ে উঠছে। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশগুলো ক্রমেই নিকট সম্পর্কে উপনীত হচ্ছে। একই সঙ্গে লক্ষণীয় বিষয়, এক্ষেত্রে আঞ্চলিক জোট বা সমঝোতার প্রক্রিয়া অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ আঞ্চলিক সম্পর্কের পথ ধরেই আন্তর্জাতিক পরিম-লে প্রবেশাধিকার সহজতর হয়ে আসছে। দেবে আর নেবে, মিলিবে মেলাবের এই যুগে পরস্পরের প্রতি বিরাগ হয়ে থাকার সুযোগ সীমিত বলা যায়। রাগ অনুরাগের ভেতর মোহাবিষ্ট হয়ে পরস্পরের প্রতি সৌজন্য, সৌহার্দ্য আর প্রীতিময়তা পরিবেশকে করে উন্নততর, কিন্তু এসবের ঘাটতি হওয়া মানেই পশ্চাৎপদতায় ধাবিত হতে হতে বিনাশের দিকে চলে যাওয়া যা কাম্য নয়। বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় খুলে গেছে প্রতিবেশী চার দেশের সড়ক সংযোগ। বসন্তের এই দখিন দুয়ার খোলার দিনে চার দেশের কোটি কোটি মানুষ ফিরে পাচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্কের সংযোগটুকু। ক্রমশ তা গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠবে। হৃদয়ের একূল-ওকূল দু’কূল ছাপিয়ে এক নতুন সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন এসে গেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে এক ইতিবাচক সময়ের দিগন্ত প্রসারিত হলো। স্থলবন্দরটি খুলে দেয়া হয়েছে সর্বসাধারণের জন্য। এর ফলে চার দেশের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল শুরু হচ্ছে। অনিবার্য কারণেই এটা হতে যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নয়া অভিজ্ঞতা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক। বাংলাবান্ধা হচ্ছে চারদেশের মধ্যে চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ও স্থলবন্দর। এতদিন এ সীমান্ত দিয়ে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল। এখন থেকে চার দেশের নাগরিকরাও যাতায়াত করতে পারবেন। এতে সড়ক পথে যোগাযোগ যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে। চার দেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ বৈকি! বাংলাবান্ধা বন্দরটি থেকে চারটি দেশের সড়কপথে দূরত্ব কম। বহু প্রতীক্ষার পর চার দেশের সংযোগস্থলটি তার প্রাণ ফিরে পেল। চার দেশের মানুষের যাতায়াত শুধু নয়, যানবাহনও চলাচল করতে পারবে চুক্তি অনুযায়ী। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চার দেশীয় অভিন্ন পরিবহন নেটওয়ার্ক ছিল অত্যন্ত জরুরী। এ নেটওয়ার্ক দেশগুলোর অর্থনীতিতে নবধারা সঞ্চারে সহায়ক হবে এবং পারস্পরিক সম্পর্কে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ইউরোপের দেশগুলো এ ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ার মাধ্যমে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। তাই চারদেশীয় সংযোগ সড়ক থেকে ফায়দা আদায়ে ইউরোপিয়ান মডেলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ জরুরী। বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব হবে ১০ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব হবে মাত্র ৬০ কিলোমিটার। এই সংযোগ পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হতে যাচ্ছে। চারটি দেশের মানুষ ১৯৪৭ সালের পূর্বে অবাধে যাতায়াত করতে পারত। বহু বছর পর তারা আবার প্রাণের প্রবাহে পরস্পরের প্রতি মেলবন্ধন গড়ে তুলতে যাচ্ছে। এই এক আনন্দ ও সুখের পথটি হোক মসৃণ।
×