ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমবাজারের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শ্রমবাজারের সন্ধানে

বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে মন্ত্রীপর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দুর্ভাগ্য হলো, এর একদিন পরই মালয়েশীয় সরকার বিষয়টি অস্বীকার করে। শুক্রবার সকালে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বলেন, আপাতত কোন দেশ থেকেই সেদেশে কর্মী নেয়া হচ্ছে না; বরং কর্মক্ষেত্রে সেদেশের নাগরিকদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দুটি দেশের মধ্যে কোন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বিষয়টি নাকচ করা যায় কিনা, সেটি কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচ্য বিষয়। তবে এতে স্বভাবতই অগণিত বাংলাদেশী, যারা সেদেশে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, তারা বিস্মিত, হতবাক এমনকি আশাহত হয়েছেন। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সে দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ বললেও আপাতত মালয়েশিয়ার বিকল্প হিসেবে অন্য কোন দেশে নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এর আগে শোনা গিয়েছিল যে, ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক নেবে বিভিন্ন পর্যায়ে। ধনী দেশ বিধায় কাতারের শ্রমবাজার যে আকর্ষণীয়, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। দেশটি রূপকল্প-২০৩০-এর আওতায় বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও অন্যত্র বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে প্রায় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় আপাতত ভরসা কাতার। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম বেশ নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। একবার শোনা গিয়েছিল যে, আফ্রিকার কোন কোন দেশ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজিরিয়ায় পতিত জমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া হবে। সম্ভবত লাভজনক বিবেচিত না হওয়ায় সে ভাবনা বেশি দূর এগোতে পারেনি। তদুপরি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয় যে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
×