ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু

হলিউডে একুশের প্রথম প্রভাতফেরি

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হলিউডে একুশের প্রথম প্রভাতফেরি

নোবেল বিজয়ী নেলসন মেন্ডেলা বলেছিলেন, ‘তুমি যদি কারও সঙ্গে কথা বলো তোমার ভাষায় তাহলে সে কথা ঢোকে অন্তরে, আর যদি কথা বলো তাঁর মাতৃভাষায় তাহলে- সে কথা ঢোকে তাঁর মস্তিষ্কে’। মাতৃভাষা যেমনটি পরিচয় করিয়ে দেয় প্রথমে নিজেকে। আর তার পাশাপাশি মাতৃভাষা পরিচয় বহন করে নিজের দেশ ও জাতিকে। মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা মানে শুধু নিজের পরিচয়কে রক্ষা করা নয়, পক্ষান্তরে বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় কথা বলার মানুষের সঙ্গে নিজের ‘দেশ ও জাতীয়’ পরিচয়কে সংরক্ষণ করা। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আজ আমরা সবাই গর্বিত এই জন্য যে, ১৯৫২-তে পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালী জাতি যারা মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন। ‘শহীদ দিবস’ অর্থাৎ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস’ পালন শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এর সীমানা এখন পৌঁছে গেছে সমগ্র বিশ্বে। তাই এখন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০০০ ভাষায় কথা বলার মানুষ পৃথিবীর ৭টি মহাদেশে একসঙ্গে একইদিনে আমাদের শোক দিবস ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ এখন পালন করে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। বিশ্বের যে কেউ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’র ইতিহাস জানতে হলে তাকে প্রথমে বাংলাদেশকে জানতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাঠ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেস শহরে পড়াশোনার জন্য আমার আসার সুযোগ হয়েছিল ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে। বাবা-মা, ভাইবোনদের অভাব ভীষণভাবে অনুভব করছিলাম। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, টিএসসি চত্বর, রমনার বটমূল, মধুর ক্যান্টিন, একুশের বইমেলা, পহেলা বৈশাখ, ঢাকা রেডিও ও টেলিভিশন স্টুডিও, মহিলা সমিতির মঞ্চ নাটক, সিনে ক্লাব, ঢাকার ফিল্ম স্টুডিও এফডিসি, গ্রুপ থিয়েটার ‘নাট্যচক্র’ এবং আমার বন্ধুদের আড্ডা- এসব কিছুরই এক শূন্যতা প্রায় মনে হতো। আশির দশকে অর্থাৎ ১৯৮১ সালে আমার স্বপ্নের দেশে আমেরিকাতে তাও আবার ‘হলিউডে’ পা রেখে প্রথম কয়েকটা মাস বেশ ভালই কাটছিল। কিন্তু কিছুদিন পর মনে হলো, এই প্রবাসে বাংলাদেশে আমার জীবনের ভাললাগার বিশেষ করে আমাদের দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কোন সুযোগ নেই। বিশেষ করে বাংলা ভাষাকে নিয়ে এখানে চর্চা করার খুব একটা সুযোগ নেই- এ ধারণাটাই মনে মনে জন্মেছিল সেই সময়টাতে। বলতে গেলে অনেকটা হতাশার মধ্যেই সময়টা কাটছিল। লস এ্যাঞ্জেলেস শহরে বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটি বাঙালী পরিবার- যা এখন বেশ কয়েক হাজারে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউইয়র্ক’ শহরের পর ‘লস এ্যাঞ্জেলেস’ শহর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী জনবসতিপূর্ণ শহর ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি লস এ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘লিটল বাংলাদেশ’। লস এ্যাঞ্জেলেস শহরের মূল প্রাণ কেন্দ্রে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ‘থার্ড স্ট্রিট ও ভারমোন্ট’ সংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট রাস্তার এলাকাকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামে লস এ্যাঞ্জেলেসের তৎকালীন মেয়র এন্টনিও ভিয়ারাগোসা অনুমোদন করেন। লস এ্যাঞ্জেলেস শহরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের এটি দীর্ঘদিনের দাবিই শুধু ছিল না, এর পাশাপাশি মেয়র ‘এন্টনিও ভিয়ারাগোসার এটি ছিল একটি নির্বাচনী ওয়াদা। কাকতালে ঐতিহাসিক লিটল বাংলাদেশ রাস্তার নামকরণের জন্য মেয়রের কাছে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম প্রস্তাব ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালনের বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম। এ জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। লস এ্যাঞ্জেলেসের বেশকিছু নেতৃস্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে অবশেষে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন লস এ্যাঞ্জেলেস শহরে ‘লিটল বাংলাদেশ’ সড়ক এলাকা নাম বাস্তবে রূপ নেয়। এ প্রাপ্তি, স্বীকৃতি আর অর্জন আজ এটা শুধু একজন প্রবাসী বাংলাদেশী বলে নয় বরং বাঙালী জাতি হিসেবে আজ আমাদের সবার জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। বাংলাদেশে পড়াশোনার অবসরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নিজেকে নিয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকতাম ও ঢাকা ‘বাংলাদেশ বেতারে’ অনুষ্ঠান ঘোষণা, টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, মহিলা সমিতি ‘মঞ্চ নাটকে’ অভিনয়, ঢাকার সিনেমাতে অভিনয়, চলচ্চিত্র নির্মাণে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ ছিল ও ঢাকাতে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজকর্মে অনেকটা ব্যস্ততার মধ্যে সময় কেটে যেত। বেশ উপভোগ করতাম। কিন্ত লস এ্যাঞ্জেলেস আসার পর আমার ভাললাগার শখের কাজগুলোর খুব একটা ইতিবাচক লক্ষণ না দেখে অনেকটা হতাশই হলাম। এত বছরের এ সব কিছুই নিমিষে হারিয়ে যাবে- এ বিষয়টা যেন মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। লস এ্যাঞ্জেলেস শহর আর হলিউডের চাকচিক্য আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনে’ প্রচারিত ‘হাওয়াই-ফাইব-ও’, ‘সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান’, ‘নাইট রাইডার’ এ- টিমের মতো বিভিন্ন জনপ্রিয় টিভি সিরিজ দেখে। এমনি একটি স্বপ্নিল শহরে আসার সুযোগ পাব, আমার কাছে এটা এখনও অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। পৃথিবীর বিনোদনের রাজধানী ‘হলিউড’ নামে পরিচিত শহরে এসে এর কোনকিছুরই সুযোগ না পেলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? বুকের মধ্যে নীরব আর নিভৃতে হতাশার জন্ম নিলেও এটাকে অন্তরে লালন না করে বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে আগামী দিনে নিশ্চয়ই আমার স্বপ্নপূরণের দ্বার কোন একদিন পেয়ে যাব- এই প্রত্যাশা নিয়ে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম ও যেমনটি আগে বলেছিলাম, বাংলাদেশে থাকতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাথার পোকাটা সবসময় এখানেও এসে আমাকে নাড়া দিত। মাথায় সবসময় ঘুরপাক করত- এই প্রবাসে নিজের দেশের যে অনুষ্ঠানগুলো হতো প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সে ধরনের কোনকিছু করার চেষ্টা করা যায় কিনা? সেটা শুধু আমার শৌখিন কাজগুলো করার মধ্যে যেমনটি তৃষ্ণা মেটাবে, আবার তার পাশাপাশি নিজের দেশের পরিচিতি আমেরিকার মাটিতে অন্য সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার একটা সুযোগ মিলবে। ভাবতাম, যুক্তরাষ্ট্রের এই মাটিতে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছেই নয় বরং অন্যান্য ভিন্ন ভাষার সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দেশের উন্নত কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এর একটা উপায় খুঁজে বের করা। ১৯৮১ সালের কথা, মাত্র কয়েক মাস হলো এই শহরে এসেছি। অন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের চাইতে আমার ভাগ্যটা একটু সুপ্রসন্ন ছিল বটে। তার কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সঙ্গের ৫ জন সহপাঠী একইসঙ্গে থাকতাম অর্থাৎ সবাই আমার রুমমেট ছিল। অতএব বাংলায় কথা বলা, বাংলাদেশী ভাত, ডাল, মাছ-মাংস- এ ধরনের খাবার-দাবার আগে থেকেই কোনকিছুরই অভাব খুব একটা অনুভব করিনি। অর্থাৎ নিজেদের মাঝে আমেরিকান সংস্কৃতির প্রভাবের কোন কমতি ছিল না বললেই চলে। একদিন আমার এক বন্ধু এসে আমাকে তৈরি হয়ে থাকতে এবং বলল- ‘জিতু, আজ সন্ধে বেলায় আমরা সবাই বাংলাদেশীদের একটা অনুষ্ঠানে যাব- সেখানে অনেক বাংলাদেশীর দেখা পাব, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশী খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে। বিশাল আয়োজন রয়েছে অতএব তৈরি থাকবি? সংবাদটা পেয়ে বেশ আনন্দ অনুভব করলাম। ভাল লাগল এই ভেবে, অন্তত সেখানে নতুন অনেকের সঙ্গে পরিচিত হব এবং গানবাজনার আয়োজন থাকবে- এ যেন অনেকটা অপ্রত্যাশিত ও কোনকিছু না চাইতেই পাওয়া এবং অনেকদিন পর আমেরিকার মাটিতে সরাসরি বাংলা গান শোনার সুযোগ পাওয়া যাবে- একি কম আনন্দের কথা? সেদিন বেশ ভাল সময়টুকু কেটেছিল আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশীদের মিলনমেলাতে অংশ নিয়ে। এত বাঙালী একসঙ্গে দেখা পাব এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ওই অনুষ্ঠানে বলতে গেলে লস এ্যাঞ্জেলেস শহর ছাড়াও আশপাশের শহর থেকে অনেকে এসেছিলেন ছেলেমেয়ে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখার জন্যে। সে সুবাদে আলাপ-পরিচয় হলো অনেকের সঙ্গে এবং কথা প্রসঙ্গে অনেকে আগ্রহী হলেন আগামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। প্রবাসে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশের জাতীয় দিনগুলো পালনের আয়োজন সেই সময়ে ঘটা করে খুব একটা করা সম্ভব ছিল না। সেই সময় আগ্রহী প্রবাসী শিল্পী, অনুষ্ঠান ঘোষক-ঘোষিকা আমাদের অনুশীলন করে তৈরি করে নিতে হতো। এখনকার মতো অবস্থা আর সুযোগ সেই সময় খুব একটা ছিল না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ক্রমবর্ধমান প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে এখনকার সেই প্রেক্ষাপট একেবারই ভিন্ন। প্রায়ই মনে মনে হলিউডের প্রধান সড়কে একুশের প্রভাতফেরির আয়োজন করলে কেমন হবে- এ কথাগুলো আমার মাথায় ঘুরপাক খেত? অনেকে হয়ত বলবে আমার মাথাটা এবার নিশ্চয় একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে অথবা পাগলের প্রলাপ বকছে! অনেকটা সাহস করে একদিন সুযোগ বুঝে আমার বন্ধুদের কাছে প্রস্তাবটা বলেই ফেললাম। খুব সম্ভবত ১৯৮২ সাল অথবা পরবর্তী কোন এক বছরের কথা। লস এ্যাঞ্জেলেসের প্রবাসী বাংলাদেশীরা এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের আয়োজন এক ভিন্ন মাত্রায় আর ভিন্ন আঙ্গিকে- যা আমেরিকার মাটিতে বিরল আর স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও বিদ্যমান। একুশে ফেব্রুয়ারি লস এ্যাঞ্জেলেস শহরে কেমন করে আয়োজন করা যেতে পারে তাই নিয়ে আয়োজকরা খুব ব্যস্ত। এতদিনে এই লস এ্যাঞ্জেলেস ও তার আশপাশের শহরগুলোর অনেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে আমার বেশ ভাল পরিচয় এবং চেনা-জানা হয়েছে। সভার জন্য আহ্বান করা হলো এই বিষয়ে কথাবার্তা বলার জন্য। আমিও আগত নতুন প্রবাসী হিসেবে সেই সভাতে উপস্থিত ছিলাম। সেদিন অনেকে প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত হয়েছিলেন সেই সভাতে। তখন আমি এই শহরে নতুন এসেছি চেনা পরিচয় খুব একটা কারও সঙ্গে নেই। বলতে গেলে অনেকেই অপরিচিত আমার। আমি প্রস্তাব করলাম- ‘এবারের একুশের আয়োজন একটা ভিন্ন আঙ্গিকে করার পরিকল্পনা করা হয়েছে- যদি আপনারা সহযোগিতা করেন’। কথাটা শুনে অনেকে একটু নড়েচড়ে বসলেন। ভিন্ন পরিকল্পনাটা কী- সবাই জানতে চাইল? পরিকল্পনা হলো আমরা এবার গতানুগতিক একুশের অনুষ্ঠানের সঙ্গে একটা নতুন কিছু সংযোজন করতে যাচ্ছি। আর সেটা হবে- আমরা সবাই রাত বারোটাতে প্রভাতফেরিতে অংশ নেব। কথাটা শুনে উপস্থিত অনেকের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। রাত বারোটার পর প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়ার বিশদ পরিকল্পনার কথা সবাইকে জানানো হলো। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে একটি শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হবে আর একটি ‘ইউ-হল’-এর খোলা ট্রলির ওপর বসানো হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে একটি শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিটি রাস্তার মাঝখান দিয়ে একটি মোটর গাড়ি সেটিকে টেনে নিয়ে যাবে। আমরা সকলে শহীদ মিনারের প্রতিকৃতির পেছনে পেছনে ‘অমর একুশের’ গান গেয়ে গেয়ে অন্তত ৬/৭টা ব্লক হেঁটে আমাদের একুশের কর্মসূচী শেষ করব। পোশাক হবে- ছেলেরা পরবে পাজামা-পাঞ্জাবি আর মেয়েরা পরবে শাড়ি। কালো রঙের প্রাধান্য থাকবে এমনি ধরনের শাড়ি পরে আসার জন্য মেয়েদের অনুরোধ করা হলো। আমরা সবাই মাঝ রাস্তার ওপর খালি পায়ে হাঁটব। সময় ঠিক হলো রাত সাড়ে এগারোটার পর থেকে লস এ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি নির্ধারিত রাস্তার মোড়ে সবাই এসে জড়ো হব। এটাই হলো একুশের প্রহরে আমাদের পরিকল্পনা। মনে হলো বেশ মনোযোগ ও আগ্রহের সঙ্গে সকলেই আমার প্রস্তাবটা শুনছিল। অনেকে মন্তব্য করলেন, এটি একটি নতুন চিন্তা-ভাবনা এবং আগে কখনই এমনটি ঘটেনি-... এবার একটু ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা হয়ত পাওয়া যাবে... চিন্তা-ভাবনাটা চমৎকার ইত্যাদি নানা ধরনের মন্তব্য। সবাই রাজি হলো তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেবে। প্রভাতফেরির প্রস্তাবটিকে সকলেই সানন্দে স্বাগত জানাল। অনেকে রাত বারোটার সময় এত গভীর রাতে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে না আসার অপারগতার কথাও জানিয়ে দিলেন। তখন আমাদের প্রস্তাবিত আয়োজন অনেকটা প্রায় ভেস্তে যাওয়ার পথে। তবে অনেকে কথা দিলেন তারা আসবেন ‘প্রভাতফেরি’তে যোগ দিতে। চলবে... ১৮.২.২০১৬ লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী
×