ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রি-ম্যান আবুলের ডান হাতে সফল অস্ত্রোপচার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ট্রি-ম্যান আবুলের ডান হাতে সফল অস্ত্রোপচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃক্ষমানব (ট্রি-ম্যান) আবুল বাজনদারের প্রথম অস্ত্রোপচার শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। ডান হাতে অস্ত্রোপচারের পর তিনি ভাল আছেন এবং আঙ্গুলগুলো কাজ করবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালামের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল আবুল বাজনদারের ডানহাতের পাঁচটি আঙ্গুলেই অস্ত্রোপচার করে। সকাল সোয়া নয়টা থেকে দুপুর সোয়া বারোটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আবুলের অস্ত্রোপচার হয়। প্রাথমিকভাবে আবুল বাজনদার ‘এপিডার্মোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগেই আক্রান্ত বলে ধারণা করছেন ঢামেক মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা। তারপরও চলছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিত আবুল সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন ঢামেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, তিন সপ্তাহ পর আমরা তার বাঁহাতেও অস্ত্রোপচার করব। এরপর ক্রমান্বয়ে তার দুই পায়েও অস্ত্রোপচার করা হবে। ইতোমধ্যে আবুলের হাতের আঁচিলের কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা জানান, প্রথমে আবুলের বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনীতে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত ছিল। অস্ত্রোপচারকক্ষে চিকিৎসকদের তাৎক্ষণিক পরামর্শে আবুলের ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলেই অস্ত্রোপচার করা হয়। তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, অস্ত্রোপচারের পর আঙ্গুলগুলো শনাক্ত করা যাবে কি-না। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর আবুল বাজনদারের ডানহাতের আঙ্গুলগুলো আলাদা করা গেছে। আশা করা হচ্ছে, আঙ্গুলগুলো কাজ করবে। অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম বলেন, আবুল বাজনদারের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তাকে রিজিওনাল এ্যানেসথেসিয়া (হাত অবশ করে অস্ত্রোপচার) দেয়া হয়। প্রথমে তিনি খুব ভয় পাচ্ছিলেন, পরে তিনি বেশ সাড়া দেন। আবুল বাজনদারের দেহে আরও অস্ত্রোপচার হবে বলে জানান আবুল কালাম। চিকিৎসকরা বলছেন, আবুলসহ বিশ্বে এখন পর্যন্ত এ ধরনের চার রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। গণমাধ্যমে আসা ‘ইন্দোনেশিয়ার বৃক্ষমানব’ গত ৩০ জানুয়ারি মারা গেছেন। অধ্যাপক ডাঃ সামন্তলাল সেন বলেন, একটি বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার (২৫)। খুলনার পাইকগাছার সড়ল গ্রামে তার বাড়ি। আট ভাই-বোনের পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান আবুল বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেছেন। এখন তিনি তিন বছরের এক কন্যাসন্তানের বাবা। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ভ্যান চালিয়ে সংসারের ভরণ-পোষণ করে আসছিলেন আবুল। মাত্র দশ বছর বয়সে ত্বকে ভাইরাস সংক্রমণে বর্তমানে হাত-পায়ে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে হাসপাতালে দিন কাটছে তার। খুলনার বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করেন। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। গত দশ বছর ধরে তিনি বিরল এ রোগে আক্রান্ত। দশ বছর আগে তিনি তার দু’হাঁটুর নিচের দিকে ছোট ছোট কয়েকটি কালো রঙের আঁচিল দেখতে পান। এগুলো ধীরে ধীরে দু’পা ও হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাতের আঁচিলগুলো দ্রুত বেড়ে গাছের শুকনা বাকলের মতো হয়ে যায়। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। এমনকি নিজে খেতেও পারেন না। পাঁচ বছর ধরে তিনি মাঝে মাঝে তার দু’হাতে ও পায়ে এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভব করেন। তিনি প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা নেন এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারতের চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে এই রোগকে ‘এপিডার্মোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ বলে শনাক্ত করেন। চিকিৎসকরা জানান, এইচপিভি একগুচ্ছ ভাইরাসের নাম, যা শরীরের ত্বক ও আর্দ্র ঝিল্লিতে সংক্রমিত হয়। এ পর্যন্ত এক শ’র বেশি ধরনের এইচপিভি ভাইরাসের হদিস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ ধরনের এইচপিভি জননেন্দ্রীয়কে আক্রান্ত করতে পারে। সব ধরনের এইচপিভিই শরীরে আঁচিলের কারণ। এ সংক্রমণ খুব দ্রুত ত্বকের বাইরের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। মা-স্ত্রীর হাতেই খাবার খেতে হয় আবুল বাজনদারকে। একেকটি হাতের আঙ্গুলের ওজন কয়েক কেজি। উঁচু করতে পারেন না; অনেক কষ্ট হয়। তবে দুই পায়ের অবস্থা হাতের মতো নয়। ঘুমের বড়ি ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।
×