ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩ শিবির ক্যাডার গ্রেফতার

বগুড়ায় জাকারিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বগুড়ায় জাকারিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক কলেজ শিক্ষক জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। শিবিরের একটি কিলিং গ্রুপের সদস্যরা এতে অংশ নেয়। পুলিশ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত শিবিরের ওই কিলিং মিশন সদস্যদের শনাক্ত ও কিলিং গ্রুপের ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা সবাই শিবির কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মাইনুর ইসলাম ফকির (২১), মোঃ মহসীন আলী (২১) ও হাবিবুল্লাহ নাঈম (১৯)। এদের মধ্যে মাইনুরকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর ২জনও পুলিশের কাছে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শুক্রবার রাতে শহরের পৃথক তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে কিলিং স্কোয়াডে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ওই ৩ শিবির ক্যাডারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে জাকারিয়া বাবু বগুড়া সদর থানা সংলগ্ন সেলিম হোটেলের সামনে নৃশংসভাবে খুন হন। তিনি বগুড়ার শেরপুর ডিগ্রী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাকে কুপিয়ে হত্যার পর খুনীরা ককটেল ফাটিয়ে ওই সময় চলে যায়। আলোচিত এই মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছিল। শনিবার বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এই হত্যা মামলার কারণ, খুনীদের শনাক্ত ও তাদের পরিচয় তুলে ধরেন। শুক্রবার রাতে শহরের চকসূত্রাপুর, সবুজবাগ ও জামিলনগর এলাকায় সঁাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, মানবতা বিরোধী হত্যাকা-ে জামায়াত নেতাদের বিচারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকা- ঘটান হয়েছিল। কিলিং মিশনে ১০/১২ জন খুনী অংশ নেয়। ছাত্রশিবির আযীযুল হক কলেজের তৎতালীন এক শীর্ষ নেতাসহ দুজন শিবির নেতার উপস্থিতিতে হত্যাকা- ঘটনা হয়। খুনের আগে ২ ক্যাডার টার্গেট শনাক্ত করতে ঘটনাস্থল রেকিসহ সেখানে অবস্থান নেয়। মহসীন ও নাঈম অগ্রবর্তী দল হিসেবে সেখানে আসে। তাদের সিগন্যাল পেয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে অন্য ক্যাডাররা ব্যাগ ভর্তি ককটেল ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে সেখানে যায়। ঘটনার কিছু আগে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জাকারিয়া বাবু সেক্টর কমান্ডার ফোরাম বগুড়া শাখার আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মাসুদার রাহমান হেলালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৃপ্তি প্রিন্টিং প্রেসে ছিলেন। খুনীরা সেখানে কার্ড ছাপানোর কথা বলে জাকারিয়া বাবুর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। এর পরেই ঘটে নৃশংস হত্যাকা-। কিলিং মিশনের এক শিবির নেতা প্রথমে তাকে আঘাত করে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। এর পরেই মাইনুরসহ অন্য ঘাতকরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কলেজ শিক্ষক জাকারিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে ককটেল ফাটিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায়। হত্যাকা-ের সময় শিবিরের কিলিং মিশনের সদস্যরা পুরো এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছিল। সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেলে জামায়াত শিবির অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত জামিলগর এলাকায় এলাকায় চূড়ান্ত বৈঠক করা হয়। গ্রেফতারকৃত ৩ জনের মধ্যে মাইনুরকে পুলিশ অন্যতম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিভাবে জামিলনগর এলাকায় শিবির নেতারা তাকে ডেকে নিয়ে হত্যাকা-ে তার ভূমিকাসহ অন্যদের বিষয়টি জানানো হয় তা সে পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছে। মাইনুর পুলিশের কাছে পুরো হত্যাকা-ের বিবরণ দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। সে এক সময় শিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে কাজ করত। শিবির পরে তাকে মিছিল, ককটেল হামলাসহ নানা নাশকতা কাজে অভ্যস্ত করে তোলে। শিবির নেতাদের নির্দেশে সে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩/৪শ’ ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়েছিল। শনিবার বিকেলে তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দীর জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য ২ জনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।
×