ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে আ’লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত

তিন সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তিন সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর কয়েকটি ইউনিয়নে বিক্ষোভ হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তারা বিক্ষোভ ছাড়াও ৩টি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। মনোনয়ন বঞ্চিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি করা হয়েছে। কোন কোন ইউনিয়নে রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এসব স্থানে দল যাদের সমর্থন দিয়েছে তা বাতিল করা না হলে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। সবকিছু মিলে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর মণিরামপুর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে। মণিরামপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এ উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় রোহিতা, খেদাপড়া এবং চালুয়াহাটি ইউনিয়নে। রোহিতা ইউনিয়নে দল সমর্থন দিয়েছে আবু আনসার সরদারকে। যিনি দল থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। এজন্য দল তাকে বহিষ্কার করে। এরপর তাকে আর দলীয় কোন কাজে পাওয়া যায়নি। এবার আসন্ন নির্বাচনে আবারও দলীয় সমর্থন দাবি করেন হাফিজ উদ্দিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার তালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায় সেই আবু আনছার সরদার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এরপর রাতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জরুরী বৈঠক করেন। সকালে দলের কর্মী সমর্থকরা দলীয় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ভা-ারির মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এজন্য যশোর-রাজগঞ্জ ও মণিরামপুর-ঝিকরগাছা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আনসার আলীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনসহ মামলা রয়েছে। তিনি এলাকায় মাদক ব্যবসা করেন বলেও অভিযোগ। এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে খেদাপাড়া ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আব্দুল আলিম জিন্নাহ নামে এক ব্যক্তি। দলীয় সমর্থকরা জানান, আব্দুল আলিম বিতর্কিত ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতার ভূমিকা ছিল পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় আটক হয়ে তিনি জেলও খেটেছেন। এমন একজন দলীয় সমর্থন পাওয়ায় তারা হতবাক হয়ে গেছেন। অথচ সবার ধারণা ছিল মনোনয়ন পাবেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান। তিনি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেন। বর্তমানে তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ অবস্থায় তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় শুক্রবার সকালে তার পক্ষের নেতাকর্মীরা খেদাপাড়া বাজারে সড়ক অবরোধ করেন। জিন্নাহর মনোনয়ন বাতিল করা না হলে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা করেন মজিবুর রহমানের কর্মী সমর্থকরা। অন্যদিকে প্রার্থী মজিবুর রহমান জানান, দল যদি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে তাহলে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। বিকেলে তার পক্ষে খেদাপাড়া বাজারে বিশাল সমাবেশ হয় বলেও জানান তিনি। এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে চালুয়াহাটি ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন কৃষক লীগ নেতা আবুল ইসলাম। তবে জোর দাবিদার ছিল আব্দুল হামিদ সরদার মনোনয়ন পাবেন। তার পরিবর্তে দল আবুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়ায় শুক্রবার বিকেলে সয়লা বাজারে বিক্ষোভ করেছেন আব্দুল হামিদ সরদারের সমর্থকরা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী এবং তাদের কর্মীরা জানান, দল করেও টাকা ছাড়া তারা মনোনয়ন পাননি। আবার অনেকে টাকা দিয়েও মনোনয়ন পাননি। যারা বেশি টাকা দিতে পেরেছেন তারাই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। এ নিয়ে তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে যার নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মণিরামপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল, তাই প্রার্থীও বেশি। এজন্য বঞ্চিতরা ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবে নির্বাচন শুরু হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে যদি কেউ প্রার্থী হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অপপ্রচার বলে তিনি জানান।
×