ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোবটের বিস্ময়কর অর্জন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রোবটের বিস্ময়কর অর্জন

রোবটটির নাম এলড্রিক। এর বিশেষত্ব হলো এটি এমন শট মারতে পারে যা বেশিরভাগ গলফার কল্পনাও করতে পারেন না। দু’মাস আগে প্রথম গলফের ক্লাব বা দ-টি হাতে নিয়েছে এলড্রিক। তারপর এখন তুখোড় গলফ্ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ্যানিজোনার স্কীলডেলে ফিনিক্স ওপেনে অংশ নেয় এলড্রিক। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে সে যা করেছিল সেটা তার নির্মাতাও প্রত্যাশা করেনি। এলড্রিক টাইগার উডসের খেলোয়াড়ী জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তগুলোর একটিকে অনুকরণ করে হাজার হাজার গলফ্ভক্তকে রীতিমতো পাগল করে তোলে। এলড্রিক গলফ্রে ১৬টি গর্তের মধ্যে সবচেয়ে বেমারা গর্তটিতে বলটিকে নিয়ে ফেলে এবং আশ্চর্য্যরে কথা হলো সে যে স্টিক বা ক্লাব ব্যবহার করেছিল সেটি এই শটের জন্য উপযুক্ত ছিল না। স্বনামধন্য গলফ্ খেলোয়ার টাইগার উডসের প্রথম নাম এলড্রিক। তার নামেই রোবটটির নাম রাখা। ১৯ বছর আগে টাইগার উডস তার বিখ্যাত শট দ্বারা যে গর্তটিতে বল ফেলেছিলেন এলড্রিক নামের রোবটটিও ১৯ বছর পর সেই একই গর্তে বল ফেলে আলোড়ন সৃষ্টি করল। সুপারস্টার টাইগার উডস ১৯৯৭ সালে ফিনিক্স ওপেনে ওই গর্তে বল ফেলেছিলেন। রোবটটিও ফিনিক্স ওপেনের আগে প্রো-এ্যামে সেই একই কাজ করল। এলড্রিক (প্রকৃতপক্ষে নামটি লঞ্চ ডাইরেকশনাল রোবট ইন্টেলিজেন্ট সার্কিট)। এটির নির্মাতা ও মালিক হলেন সানডিয়াগোর গলফ্্ ল্যাবরেটরিজ ইনকর্পোরেটেডের স্বত্বাধিকারী জন পেরেন্ট। গলফ্ শিল্পে নতুন ক্লাব (দ-) প্রযুক্তি পরীক্ষা করার জন্য রোবট ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ক্লাব রোবট নিখুঁতভাবে ঘুরাতে পারে। ক’দিন আগে টাইগার উডসের অনুকরণে সেই বিখ্যাত শটটাই তার প্রমাণ। জা পেরেন্ট হুইলে চালিয়ে ৭৫০ পাউন্ড ওজনের রোবটটি টি-বক্সে নিয়ে আসেন। ওখান থেকে রোবটকে নিয়ে ১৫৮ গজের একটা শট মারার আশা ছিল তাঁর। তখন একজন তাঁকে জানায় যে, রোবটের হাতে যে ক্লাবটি দেয়া আছে তা দিয়ে অত লম্বা শট মারা যাবে না। শটটা আসলে হবে ২০ গজ কম। দৌড়ে গিয়ে সঠিক ক্লাবটি এনে রোবটের হাতে ধরিয়ে দেবেন সেই সময়টুকু তাঁর ছিল না। কাজেই সেভেন-আয়রনই তাকে চালাতে হয়েছে। টুর্নামেন্টের আয়োজকরা জানান যে, সেরা শটটি মারার জন্য সে পাঁচ দফা চেষ্টা করার সুযোগ পাবে। এলড্রিক অত উন্নত ধরনের রোবট নয় যে, কত জোরে ক্লাব ঘোরাতে হবে তা নিজের থেকে ঠিক করতে পারবে। পেরেন্ট ল্যাপটপের মাধ্যমে প্রথম দফা নির্দেশাবলী দিয়েছিলেন। সঠিক ক্লাবটি না থাকায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়ার জন্য কিভাবে ঘোরাতে হবে পেরেন্ট মাথা খাটিয়ে বের করেন। এখানে তো বিজ্ঞান কাজ করেনি, কাজ করেছে ইনটুইশন। প্রথম চারবারের চেষ্টা বিফলে গেল। পঞ্চম দফা চেষ্টায় পেরেন্ট সঠিক নির্দেশটি দিতে সক্ষম হন। এলড্রিকের শটটা সবুজ চত্বরের প্রান্তে গিয়ে পড়ে। দু’বার বাউন্স করে। তারপর গড়িয়ে গর্তে চলে যায়। মমব্যস আর যায় কোথা। প্রচ- হৈচৈ, উন্মাদনা শুরু হয়ে গেল। গলফ্্ ফ্যানরা উৎসবের আনন্দে কাপের পর কাপ বিয়ার ছুড়ে দিল সবুজ মাঠে। এদিকে ভাবলেশহীন এলড্রিক নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল। হাতে তার সেভেন আয়রন। প্রায় ২৫ বছর আগে পেরেন্ট প্রস্তুতকারক ও ম্যাগাজিনগুলোর জন্য গলফ্্ ক্লাব পরীক্ষার মেশিন তৈরির কাজ শুরু করেন। চার বছর আগে পেরেন্ট ও তাঁর পার্টনার শ্যান ডাউনস এমন এক মোবাইল ভার্সন করায়ত্ত করার সিদ্ধান্ত নেন যা ১৮টি হোলে খেলতে সক্ষম। তাঁরা দু’জনে শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাদের রোবট এ জাতীয় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে গফল্্ খেলায় আগ্রহ যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তা বদলে দিতে পারে। টাইগার উডসের অনুকরণে তাদের রোবটের ওই সাফল্য গলফ্ খেলায় উৎসাহ-উদ্দীপনা নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে দেবে। মূল : ম্যাট ম্যাক ফারলেন্ড সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×