ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বর্ণিল আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বর্ণিল আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা  বার্ষিকী উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের বহমানতায় প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে পদার্পণ করল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেই উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে একাডেমি আঙিনায় বয়ে যায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপনের আয়োজনে বর্ণময় হয়ে ওঠে সেগুন বাগিচার একাডেমির প্রাঙ্গণ। দিনব্যাপী শিল্পীদের ক্যানভাস রাঙানো আর্ট ক্যাম্প, স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা, নাচ-গান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বহুমাত্রিক রূপ পায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা। দিনের প্রথমভাগের জাতীয় পতাকা ও একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় দিনব্যাপী আর্টিস্ট ক্যাম্পের অংশ নেয় ৬০ জন শিল্পী। বসন্ত সন্ধ্যার আয়োজনে একাডেমির নন্দন মঞ্চে ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানের সূচনাতেই ছিল স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রাণবন্ত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম। শিল্পকলা একাডেমির অতীত ও বর্তমান কর্মকা-ের নানা দিক তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নাট্যশিল্পী এসএম মহসিন এবং নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যপরিচালক জিনাত বরকতউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। বাসন্তী সন্ধ্যায় একঝাঁক রঙিন বেলুন আকাশে উড়িয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘এসো মুক্ত কর’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন রাহিজা খানম ঝুনু, লায়লা হাসান, জিনাত বরকতউল্লাহ, সালেহা চৌধুরী, দীপা খন্দকার, সেলিনা হক, নিলুফার ওয়াহিদ, ডলি ইকবাল, সুলতানা হায়দার ও মুনমুন আহমেদ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে জলের গান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে সুবীর নন্দী, সালমা, পুলক, ফাহমিদা নবী, বাপ্পা মজুমদার। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় দিনব্যাপী আর্টিস্ট ক্যাম্প, বিকেলে একাডেমির নন্দন মঞ্চে ভাষার গান ও কবিতা পরিবেশনর করা হবে। কাল রবিবার একাডেমির নন্দন মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রথম দিন আর্টিস্ট ক্যাম্পে অংশ নেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর সম্মানিত নির্বাচকম-লী ও বিচারকম-লী এবং দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী ও জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর পুরস্কৃত শিল্পীরা। ৬০ জনের অংশগ্রহণে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিত্রশালা প্লাজায় চলে এই আর্টিস্ট ক্যাম্প। আর্টিস্ট ক্যাম্পে অংশ নেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ড. আবদুস সাত্তার, মাহমুদুল হক, রণজিৎ দাস, তরুণ ঘোষ, রোকেয়া সুলতানা, ড. ফরিদা জামান, জামাল আহমেদ, মৃণাল হক, মাহবুবুর রহমান, মোখলেসুর রহমান, তৈয়বা বেগম লিপি, আনিসুজ্জামান, গুলশান হোসেন, মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, কালিদাস কর্মকার প্রমুখ। ‘আনিসুজ্জামান হচ্ছেন বাংলা ভাষার অভিভাবক’ ॥ যাপিত সময়ের এক আধুনিক মানুষ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তার হাতে প্রাণ পেয়েছে এদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন। জ্ঞানের চর্চায় আলোকিত করেছেন শিক্ষার ক্ষেত্র। একইভাবে তার গবেষণায় ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। সাংস্কৃতিক পরিম-লের বিকাশকে দিয়েছেন গতি। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তচিন্তা, সংস্কৃতির বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই বরেণ্যজনের ৮০তম জন্মদিন ছিল বুধবার। আর তার এই জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তরুণ নির্মাতা শ্যামল চন্দ্র নাথ আনিসুজ্জামানের জীবন ও কর্মের ওপর ‘আলোকযাত্রা’ শীর্ষক এক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে ধানম-ির বেঙ্গল ক্যাফেতে ২০ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ফোকলোরবিদ ড. শামসুজ্জামান খানের প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সম্মানিত অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সারয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন কথাসাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান। আনিসুজ্জামান সম্পর্কে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, তিনি হচ্ছেন বাংলা ভাষার অভিভাবক। এখনও কোন কিছু লিখতে গিয়ে শব্দ নিয়ে সমস্যায় পড়লে এই চিন্তাশীল মানুষটির শরণাপন্ন হই। যে কোন বিষয়েই বন্ধু হিসেবে তার কাছে সাহায্য পাই। আমাদের এই সমাজের এমন মানুষ বিরল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও তার ভূমিকা অপরিসীম। রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি কিংবা সমাজচিন্তাÑএসব বিষয়ে তার অবদানের কথা আজ অনেকেই ভুলে যাচ্ছে। আনিসুজ্জামানের কীর্তিময় জীবনের কথা উল্লেখ করে সৈয়দ হক বলেন, তিনি হচ্ছেন বাংলা একাডেমির প্রথম বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক। এক সময় বামপন্থার রাজনীতির প্রতি ছিল তার প্রসারিত সহায়তার হাত। এমনকি অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ যে মহিমান্বিত রূপ পেয়েছে এখানেও রয়েছে তার অবদান। তাই তার মতো মানুষকে মাত্র ২০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রে সঠিকভাবে ধরা যায় না। প্রথমে ৩ ঘণ্টার ফ্রেমে ধরা ছবিটিকে পরে ২০ মিনিটে নামিয়ে আনা এক ধরনের অপঘাত। আর এমন একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে হলে তার সমসাময়িকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুহিতের ‘সোনালি দিনগুলি’ বইয়ের প্রকাশনা ॥ শুধু অর্থমন্ত্রীর পরিচয় নয় আরও অনেকগুলো পরিচয়কে ধারণ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থনীতির জটিল তত্ত্বের বাইরে রাজনীতি, সমাজচিন্তা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তার গভীর অনুরাগ। আর এই সবগুলো বিষয়ই উঠে এসেছে আবুল মাল আবদুল মুহিতের সোনালি দিনগুলি শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। স্মৃতির তলদেশ থেকে এখানে অর্থমন্ত্রী মেলে ধরেছেন তার শৈশব ও কৈশোরের কথামালা, ছাত্রজীবনের বর্ণাঢ্য বৃত্তান্ত, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানা আলেখ্য ও উপাখ্যান। এসবের পাশাপাশি উঠে এসেছে যুদ্ধ ও রাজনীতিতাড়িত সংক্ষুব্ধ সমকাল। চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো শুক্রবার। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও চিত্রশিল্পী হাশেম খান। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. এনামুল হক, গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান ও মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী কামরুজ্জামান কাজল। অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অর্র্থমন্ত্রী হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। এ অবস্থায় সময় বের করে বই লেখা কঠিন কাজ। তিনি সেটিই করে দেখালেন। তিন দিনব্যাপী কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা শুরু ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হলো কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা। কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা উদ্যাপন পরিষদ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ মেলার সূচনা শুক্রবার বিকেলে। এবারের মেলার সেøাগান সবার জন্য ছাপচিত্র। শিল্পবোদ্ধা ও শিল্পকর্ম সংগ্রাহকদের কাছে ছাপচিত্রকে জনপ্রিয় করে তোলা এই মেলা আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। উদ্বোধনী আয়োজনে বরেণ্য ছাপচিত্র শিল্পী মাহমুদুল হককে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। যৌথভাবে মেলা উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও প্রখ্যাত শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী।
×