ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উদীচীর কনভেনশন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প প্রতিরোধের দৃঢ় প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উদীচীর কনভেনশন  সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প প্রতিরোধের দৃঢ় প্রত্যয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। একুশে পদকপ্রাপ্ত এ সংগঠন সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক এ দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলেও সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশ এখনও পদে পদে বাধাগ্রস্ত। তবু থেমে নেই, এগিয়ে যাচ্ছে আন্দোলন। মানবিক সমাজে বিশ্বাসী মানুষকে সাংস্কৃতিক চর্চা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উদীচী শিল্পগোষ্ঠী আয়োজিত ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেশন’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন। সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ে তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ার কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দেশে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্জন হচ্ছে, কিন্তু যে চেতনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ পদে পদে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভক্তি সৃষ্টি করছে, মানবিক সমাজে যারা বিশ্বাস করি; তাদের অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমাজে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যেন আমরা সচেষ্ট নই। মন্ত্রী বলেন, বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার ধারাটিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বিশ্বাস নিয়ে সত্যিকারের আদর্শটিকে ছড়িয়ে দিতে হবে অন্ধকারে ওই সমাজে। নতুবা অন্ধকারের এ শক্তির থাবা অব্যাহত থাকবেই। বিভিন্ন সময়ে ব্লগার, প্রকাশক, দেশী-বিদেশী হত্যাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে ধর্মের নামে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, কোন শক্তি এ অস্থিরতা ছড়াচ্ছেÑ তা কারও অজানা নয়। অস্থিরতা প্রতিরোধে সাম্প্রদায়িক শক্তিসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শুভেচ্ছা বক্তব্যে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, অস্থিতিশীল রাজনীতিতে মনোজগতের পরিবর্তন ঘটাতে উদীচী কাজ করে যাচ্ছে। বাঙালীর ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি আন্দোলনে সংগঠনটি রাজপথেও সক্রিয়। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখব। উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে কামক্ষ্যা রায়চৌধুরী, কমরেড জসিম উদ্দিন ম-ল, অধ্যাপক যতীন সরকারসহ ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কনভেনশনের উদ্বোধন করেন তিন প্রবীণ বিপ্লবী কামক্ষ্যা রায়চৌধুরী, কমরেড জসিম উদ্দিন ম-ল, অধ্যাপক যতীন সরকার। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, ঢোল বাদনসহ ছিল গণসঙ্গীত, সেøাগান ও মিছিল। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কমরেড জসিম উদ্দিন ম-ল। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী। এরপর বাংলার আবহমান অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা পর্ব তুলে ধরেন উদীচীর শিল্প-কর্মীরা। শিল্প গোষ্ঠীর অসাধারণ, অনবদ্য ও নৈপুণ্যময় পরিবেশনায় দলীয় সঙ্গীতের ‘কে বলেছে হয় না/ এসো এ মঞ্চে/ উদীচী এমনি এক আয়না’ পঙ্ক্তি হৃদয় ছুঁয়ে যায় আগত দর্শকদের। তিন দিনব্যাপী চলমান এ কনভেনশনের প্রতিদিনই সন্ধ্যায় থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনা ও মাতমতের ভিত্তিতে তৈরি করা ‘ঢাকা ঘোষণা’ উপস্থাপনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শেষ হবে দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক এ কনভেনশন।
×