ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মার ওপর আরেকটি আধুনিক রেল সেতু নির্মাণের চিন্তা ॥ হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আয়ুষ্কাল ফুরিয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পদ্মার ওপর আরেকটি আধুনিক রেল সেতু নির্মাণের চিন্তা ॥ হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আয়ুষ্কাল ফুরিয়েছে

মশিউর রহমান খান ॥ পদ্মা নদীর ওপর আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ও শক্তিশালী নতুন আরেকটি রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণের চিন্তা করছে রেলওয়ে। বর্তমানের পদ্মা নদীর উপর স্থাপিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছাকাছি কমপক্ষে ৫ শ’ বা ৭০০ মিটার উজানে এ ব্রিজটি তৈরি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। নতুন সেতু নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পর দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বর্তমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির কর্মক্ষমতা ও শক্তি আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে কিভাবে আরও কয়েকবছর পুরোপুরি সক্ষম রাখা যায় সে বিষয়টির প্রতি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নতুন ব্রিজটি তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে নতুন করে হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির কাঠামোর শক্তি বৃদ্ধি করে আরও কয়েক বছর রেল সেতুটি ব্যবহার করা হবে নাকি নতুন করে নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে ৩টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডিও সম্পন্ন করা হয়েছে। রেল সূত্র জানায়, ১৯১০ সালে নির্মাণ শুরুর ৫ বছর পর ১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উদ্বোধন করা হয়। তৈরির সময় এ ব্রিজটির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৯৯ বছর ধরা হয়। বর্তমানে ১০১ বছর পার করেছে দেশের অন্যতম পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এ ব্রিজটির নির্মাণকাল। ফলে ৯৯ বছরের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কালও ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। রেল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে রেললাইন দিয়ে হেভি লোডেড ট্রেন পরিচালিত হবে। এছাড়া হাইস্পিড ট্রেন পরিচালনারও চিন্তা করছে বর্তমান সরকার। এছাড়া বহির্বিশ্বেও সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাাড়াতে করা চুক্তি অনুযায়ী ট্রান্স এশিয়ান রেল করিডরে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চলমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে করে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি তথা বহির্বিশ্বেও সাথে সংযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে। যার অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতি পুরনো এ ব্রিজটির সর্বশেষ ব্যবহারিক যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক অবস্থা যাচাইয়ে রেল কর্তৃপক্ষ বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এডিবির অর্থায়নে বিদেশী তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ নিয়ে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডিও সম্পন্ন করেছে। এছাড়া রেল কর্তৃপক্ষ উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটি হার্ডিঞ্জ রেল সেতুর সর্বশেষ অবস্থা যাচাইয়ে ব্রিটিশ আমলের নির্মাণ ম্যানুয়াল সংগ্রহ করেছে। এছাড়া কমিটি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের পুনর্র্নিমাণ ম্যানুয়ালও ভারত থেকে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সেতুটির প্রাথমিক অবস্থা যাচাই করে পরে এর নির্মাণ ইতিহাস নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী জরিপ কাজ শুরু হয়। নিয়মানুযাযী সেতুর কাঠামো, ভিত্তি ও পিলারের অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এছাড়া পদ্মা নদী থেকে বালি উত্তোলন হার্ডিঞ্জ সেতুর জন্য হুমকি হবে কিনা রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন ও যাচাই করা হয়। রেলওয়ের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্টে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জাপান, স্পেন, হাঙ্গেরির উচ্চপর্যায়ের ৯ জন বিদেশী প্রকৌশলীসহ বুয়েট ও রেলওয়ের আরও ৪০ জন প্রকৌশলী যৌথভাবে হার্ডিঞ্জ রেল সেতু পরিদর্শন করেন। এর বাইরে বিশেষ অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা ব্রিজটির একটি অংশ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পর ১৯৭২ সালে ব্রিজটির পুনর্র্নিমাণের দায়িত্বে থাকা ভারতের প্রকৌশলী ড. অমিতাভ ঘোষালকেও পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশে আনা হয়। এদিকে হার্ডিঞ্জ সেতুর পুনর্র্নিমাণ অথবা শক্তি বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের নেতৃত্বাধীন তিন প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে শতবর্ষী এ হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি বর্তমানে ব্যবহারের উপযোগী কি না তা যাচাই করতে ও নতুন করে কোন পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন কি না তা জানতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বিদেশী তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে ও দেশী বিদেশী রেল বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ব্রিজ এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন ও বিশেষ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এজন্য রেলের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের এ ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী হার্ডিঞ্জ সেতুতে আপাতত কোন ঝুঁকি নেই। এছাড়া চলাচল ঝুঁকি কমাতে ও ব্যবহারের উপযোগিতা নির্ধারণে ব্রিটিশ নির্মাণ ম্যানুয়াল ও ভারতের পুনর্র্নিমাণ ম্যানুয়ালও সংগ্রহ করা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের এ কারিগরি দল সেতুটি পর্যবেক্ষণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা গেছে, শক্তি বৃদ্ধি করে সেতুটি থেকে কত বছর সেবা পাওয়া যাবে ও এতে ব্যয় কত হবে এবং বর্তমানের সেতুটির শক্তি বৃদ্ধিতে আয়ুষ্কাল খুব বেশিদিন না বাড়লে বিদ্যমান সেতুর উজানে নতুন সেতু নির্মাণ করা যায় কিনা তা যাচাই করা হয়েছে।
×