ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে এক বছরেও মেলেনি কোন সহায়তা

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শেখ রিয়াজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শেখ রিয়াজ  জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে গফরগাঁওয়ের রাজপথ কাঁপানো বিপ্লবী ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শেখ রিয়াজ উদ্দিন আহমদ (৮৪) এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ময়মনসিংহ শহরের আলিয়া মাদ্রাসা রোডের পালপাড়ার বাসায় গত দেড় বছর ধরে তিনি শয্যাশায়ী। এ সময় একবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে তার এক পা। কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও একাত্তরে আগরতলা ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শেখ রিয়াজকে এ সময় কখনও নাকে নল দিয়ে দেয়া হচ্ছে তরল খাবার। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে না পারায় পরানো হয়েছে ক্যাথেটার। অধ্যাপক শেখ রিয়াজের জীবন প্রদীপের ব্যারোমিটার ওঠানামা করছে প্রতিনিয়ত। সকালে ভাল তো সন্ধ্যায় খারাপ হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা। ওঠবসও করতে পারছেন না তিনি। হঠাৎ করেই কমে যাচ্ছে স্মৃতিশক্তিও। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছেন। কানেও শুনতে পারছেন না আগের মতো। ক্রমেই যেন মিশে যাচ্ছেন তিনি বিছানার সঙ্গে। চিকিৎসকরা বলছেন, অধ্যাপক শেখ রিয়াজের জরুরী উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সাধ্য নেই অধ্যাপক শেখ রিয়াজের। এমতাবস্থায় যে কোন সময় নিভে যেতে পারে এই ভাষাসৈনিকের জীবন প্রদীপÑ এমন আশঙ্কা পরিবার ও স্বজনদের। গত বছরের ৮ মার্চ চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন অধ্যাপক রিয়াজ। কিন্তু এক বছরেও মেলেনি কোন সহায়তা। এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী শহরের পালপাড়ার বাসায় শয্যাশায়ী অধ্যাপক শেখ রিয়াজকে দেখতে যান। এ সময় তিনি শেখ রিয়াজের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তাৎক্ষণিক তার চিকিৎসাসেবায় নগদ ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রীর ভাই মমতাজ উদ্দিন মন্তা। অধ্যাপক শেখ রিয়াজের চিকিৎসায় নগদ ৫ হাজার টাকা তোলে দেন তার পরিবারের সদস্যের হাতে। এছাড়া অধ্যাপক শেখ রিয়াজকে একটি হুইলচেয়ার দেয়ার প্রতিশ্রুতিসহ পরবর্তী আর্থিক সহায়তারও আশ্বাস দেন তিনি। অশীতিপর বৃদ্ধ অধ্যাপক শেখ রিয়াজের দাবিÑ প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভাল করে চেনেন, জানেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করতে পারবেন না তিনি। প্রয়োজনীয় অর্থ ও চিকিৎসাসেবার অভাবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে আরও জানান, এরকম অবহেলা ও অবমাননাকর অবস্থায় কোন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার মৃত্য কারও কাম্য হতে পারে না। দেড় বছর ধরে আমি অসুস্থ। বিছানায় পড়ে আছি। ওষুধ নেই, খাওয়া নেই! অথচ সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক সহকর্মীÑ কেউই আমার কোন খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এ খবরটি গত প্রায় এক বছরেও পৌঁছাতে পারছি না। তারপরও কারও প্রতি কোন অভিযোগ নেই এই বিপ্লবী ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার। তবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় সহযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিটের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চোখের সামনে একজন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার এভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জানান, ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শেখ রিয়াজের আবেদনটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়েছে।
×