ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবার জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি

তপন কুমার খাঁ, জয়পুরহাট ॥ যে মাসুষগুলো ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, রিক্সা চালিয়ে, মানুষের ঘরবাড়ি বানিয়ে দিন পার করে এমন মানুষগুলো শহরের স্কুল কলেজের শিক্ষক, ডাক্তারসহ শিক্ষিত মানুষের পাশাপাশি নিজের এলাকার প্রয়োজন অভাব নিয়ে সরাসরি জন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এমন বিষয় সচরাচর কারো ভাবনায় আসে না। শুধু ভোটের সময় এই সমস্ত অভাবগ্রস্ত মানুষ মানুষের প্রয়োজন এবং মূল্য বাড়লেও বছরের পর বছর তাদের কেউ খোঁজ রাখে না। জনপ্রতিনিধিরাতো তাদের পাশেই আর যায় না। এমন অবস্থায় বর্তমান সরকারের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকারের অর্জন ও করণীয় প্রসঙ্গে জনতার মুখোমুখি হয়ে জয়পুরহাটের সংসদীয় আসন-২ এর সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এলাকার জনগণের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়ে সেই পুরানো ধ্যান ধারণা ভেঙ্গে দিলেন। জনপ্রতিনিধি আর জনগণ এক কাতারে এসে খোলামেলা কথা বললেন। এই অনুষ্ঠানে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তা হলো জনগণের ভোট নিয়ে এমপিরা নির্বাচিত হবার পর অনেকেই এলাকাকে ভুলে যান। অনেকেই জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি মনে রাখে না। জনগণের কাছে কোন জবাবদিহি করেন না। এই ধারা পরিবর্তনের লক্ষ্যে সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রথম জেলার কালাই উপজেলার শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এলাকার সংসদ সদস্যকে ‘জনতার মুখোমুখি’ করা হয়েছিল। জনপ্রতিনিধি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মঙ্গলবার ব্যতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠানে রাজমিস্ত্রী, ভ্যান চালক, ছাত্র-কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন এবং তার উত্তর দেন। প্রশ্নের জবাবে কখনও নিজের ব্যর্থতা, কখনও সফলতা, কখনও সমস্যার সমাধানের চেষ্টার কথা এবং তার দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে অঙ্গিকারে সচেষ্ট হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সকল শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত। কালাই প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে জনতার প্রশ্নপর্বের আগে বক্তব্য রাখেন কালাই ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ধজেন্দ্রনাথ দাস, কালাই মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ। বক্তব্যের পর খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে এলাকার রাজমিস্ত্রী (নির্মাণ শ্রমিক) আমিনুল ইসলামের প্রশ্ন ছিল আমরা দরিদ্র শ্রমিকগোষ্ঠী। আমাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া ও শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের কোন পদক্ষেপ আছে কিনা। হারুঞ্জা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাহেরা বেগম তার স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণে সংসদ সদস্য কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা? কাটাহার মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুর হাই মাদ্রাসা ভবন না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা বিঘিœত হচ্ছে বিধায় সেখানে ভবন নির্মাণের কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা? জিন্দারপুর ইউনিয়নের হাবিবুল ইসলাম প্রশ্ন করেন মোলামগাড়ী-বগুড়া সড়ক প্রশস্তকরণ ও ওই সড়কে বাস চালুর প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছিলেন যা এখনও পূরণ হয়নি। ওই রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং বাস চালু হবে কিনা? জামায়াত বিএনপির আন্দোলনের নামে নাশকতায় মারাত্মক আহত অগ্নিদগ্ধ এলাকার এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পাননি। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন কিনা? কালাই দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে হয়রানি, দুর্নীতি চলছে। এ থেকে জনগণ মুক্ত হতে পারবে কিনা? সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রশ্নকারীদের সাধ্যমত জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন এবং উত্থাপিত সমস্যার সমাধানের পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। তিনি উল্লেখ করেন সামনা সামনি কেউ কোন সমস্যার অভিযোগ করতে ভয় পেলে তার নিজস্ব জয়পুরহাট-২ পোস্ট বক্সে তারা যেন তা প্রেরণ করেন। তিনি কালাইয়ে একটি আধুনিক পাঠাগার ও ডায়বেটিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রশ্নকর্তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে গর্বের সাথেই বলেন যখন আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার নিযুক্তিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হই এবং পরবর্তীতে সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব নেই তখন আমার জেলায় মাত্র ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। আমার জেলার পড়াশোনার মান উন্নয়নের কারণে আজকে ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে অভিভাবক, শিক্ষকম-লীর সজাগ দৃষ্টি ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হওয়ার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি। এলাকার উন্নয়নের জন্য ৭০ কোটি টাকা এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে। আরও ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। জনগণকে উন্নয়নে সক্রিয় হবার চিন্তাচেতনাকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমার সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
×