ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোপের নিন্দার জবাব

নিজস্ব হিসাব-নিকাশে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নিজস্ব হিসাব-নিকাশে ট্রাম্প

পোপ ফ্রান্সিসের কড়া তিরস্কারের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শক্ত জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অগ্রগামী রিপাবলিকান প্রার্থীর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ প্রতিফলিত হয়েছে। ধনাঢ্য এ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর ধারণা, পোপের সমালোচনা রক্ষণশীলদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার ক্ষতির কারণ হবে না, বরং দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতে তার অবস্থানকে আরও উন্নত করতে পারে। বিশ্লেষণ নিউইয়র্ক টাইমসের। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার পোপ ফ্রান্সিসের নিন্দা করে এক ঝুঁকিবহুল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই পদার্পণ করেন। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রিপাবলিকানদের উজ্জীবিত করা এবং ফ্রান্সিসকে অতি উদারমনা মনে করেন এমন ইভানজেলিকান ভোটার সমর্থন প্রার্থনা করা। কোন শ্রদ্ধাভাজন নেতার প্রতি এটিই ছিল ট্রাম্পের সবচেয়ে রূঢ় আক্রমণ। মেক্সিকানদের আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করা এবং মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রস্তাব করে ট্রাম্প খ্রিস্টান নন বলেই পরিচয় দিয়েছেনÑ এমন আলোড়ন সৃষ্টিকারী মন্তব্য করেন পন্টিফ। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, ফ্রান্সিসের সমালোচনা ‘অপমানজনক’ ও ‘বিশ্বাসের অযোগ্য’। মেক্সিকান সরকার ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়ে পোপকে দিয়ে তার সমালোচনা করিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ধনকুবের প্রার্থী। ক্যাথলিক ভোট হারানোর ভয়ে রাজনীতিকরা কদাচিৎই কড়া ভাষায় ভ্যাটিক্যানকে তিরস্কার করে থাকেন। কিন্তু ট্রাম্প দক্ষিণ ক্যারোলাইনার শনিবারের প্রাইমারি ভোটের আগে ক্রমশ আক্রমণমুখী হয়ে উঠেছেন। সেখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জরিপে দেখা যায় এবং জনপ্রিয় রিপাবলিকান গবর্নর নিকি তার হ্যালি সম্প্রতি ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্প মনে করেন, পোপের সমালোচনা করলেও তিনি রক্ষণশীলদের ভোট হারাবেন না, বরং দক্ষিণ ক্যারোলাইনা ও ১ মার্চ অনুষ্ঠেয় দক্ষিণাঞ্চল প্রভাবিত সুপার টুইসডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার অবস্থান আরও উন্নত হবে। দক্ষিণাঞ্চল ও অন্য কোন স্থানের কোন কোন ইভানজেলিকান সম্প্রদায় ক্যাথলিক গির্জা সম্পর্কে খুবই হতাশাব্যঞ্জক ধারণা পোষণ করে। অন্য আরেক সামাজিক রক্ষণশীলরাও সমকামী বিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে ফ্রান্সিসের অপেক্ষাকৃত পরিমিত মন্তব্যের সমালোচনা করেন। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের তুলনায় ট্রাম্প আরও বড় পদক্ষেপ নেবেন এমনি ধারণায় বিশ্বাসী রক্ষণশীলরা পোপের সমালোচনায় উজ্জীবিতই হবেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক উভয় দলের রাজনৈতিক কৌশলবিদরা একথা বলেন। ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলতে চাওয়ায় তিনি আদৌ খ্রিস্টান কি না- সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, যে লোক সেতু নির্মাণের কথা না ভেবে কেবল দেয়াল তোলার কথা বলে, সে খ্রিস্টান নয়। গসপেলে ওই শিক্ষা দেয়া হয়নি। ছয় দিনের মেক্সিকো সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পোপ এই মন্তব্য করেন। নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী ট্রাম্প বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ১ কোটি ১০ লাখ মেক্সিকানকে বের করে দেয়ার জোরালো মত দিয়ে আসছেন। সীমান্তে দেয়াল তোলার পক্ষে তার যুক্তি, মেক্সিকো ‘ধর্ষক আর অপরাধীদের’ আমেরিকায় পাঠাচ্ছে। অবশ্য গত কয়েক মাস ধরে নানা মন্তব্য করে বিতর্কিত এই রিপাবলিকান পোপের বক্তব্যের জবাবে নিজেকে একজন ‘গর্বিত খ্রিস্টান’ বলে দাবি করেছেন। পোপের মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তির ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের অধিকার একজন ধর্মীয় নেতা রাখেন না। সাউথ ক্যারোলাইনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, পোপ আমার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলেছেন কারণ মেক্সিকো সরকার তাকে বুঝিয়েছে যে ট্রাম্প লোকটা ভাল নয়। অবশ্য রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা ট্রাম্পকে আমেরিকানদের ভোট দেয়া উচিত কি না- সে প্রশ্নের উত্তর দেননি পোপ ফ্রান্সিস। আমি কেবল বলব, কেউ যদি ওই ভাষায় কথা বলতে থাকে, তাহলে সে খ্রিস্টান হতে পারে না। অন্যদিকে ট্রাম্প বলছেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ভ্যাটিকান। ভ্যাটিকান যদি আক্রান্ত হতো, পোপ তাহলে প্রার্থনায় বসতেন যেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়, কেননা সে থাকলে তেমন কিছু ঘটার ভয় নেই। বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ক্যাথলিক ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অনেকেই রিপাবলিকানদের ভোট দেয় শুধু এই কারণে যে, তারা গর্ভনাশ ও সমলিঙ্গ বিয়ের বিরোধী।
×