ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইলের অসতর্ক ব্যবহার!

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মোবাইলের অসতর্ক ব্যবহার!

মোবাইল ফোনের অসতর্ক ব্যবহার যে প্রাণসংহার করতে পারে তার আরেকটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো রাজধানীতে বুধবার। মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকায় রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় বুয়েটের শিক্ষার্থী তানভীর গওহর তপু চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এ ধরনের মৃত্যু অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। যে প্রাণটি ঝরে গেল তা ছিল মেধাবী ও পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান। একটি সম্ভাবনাময় তরুণের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হলো। আধুনিক জীবনযাত্রার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গের নাম মোবাইল বা মুঠোফোন। জীবনের সঙ্গে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটি এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যেন এ বস্তুটি ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। এর উন্নত সংস্করণ তরুণ সমাজে প্রচ- নির্ভরশীলতাসহ স্থান করে নিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। যে কারণে এর ‘সু’ ও ‘কু’ ব্যবহার দুটিই বেড়েছে। ‘যন্ত্রের যন্ত্রণা’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রের দোষ নয়, দোষ ব্যবহারকারীর। দেশে বর্তমান দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মোবাইল ফোনে কথা বলা সড়ক বা রেলপথ ব্যবহারকারীদের। ইয়ারফোন লাগিয়ে পথ চলাচল করতে যে অন্য মনস্ক হয়ে যেতে হয় বা সামনে-পেছন থেকে আসা বাহনের শব্দ ঠিকমতো কানে পৌঁছতে না পারার সম্ভাবনাই থাকে বেশি। এমন অবস্থা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। যা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী পদচারী বা পথচারীর অসচেতনতা, অসাবধানতা ও অসতর্কতাই প্রথমত দায়ী। ট্রেনের সঙ্গে সড়কপথের বাহনের তুলনা চলে না। ইচ্ছা থাকলেও যেখানে-সেখানে ট্রেনের হঠাৎ দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। সড়কপথে কোন বাহনের চালকের চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যে আকছার ঘটছে তার দৃষ্টান্ত খুঁজতে বেশি দূর যেতে হয় না। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে ট্রাক উল্টে অর্ধ শতাধিক শিশুশিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু আজও জাতির কাছে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি। চলন্ত অবস্থায় চালকের গাড়ি চালানো ও দুর্ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচুর আলোচনা হলেও ইতিবাচক কোন পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। এখনও প্রকাশ্যে রাজধানীসহ সারাদেশেই নানা ধরনের বাহনেই চালককে চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে হেডফোন কানে লাগিয়ে গানের তালে অঙ্গ দোলাতেও দেখা যায়। বিষয়টি আশঙ্কার বটে। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা আইনত নিষিদ্ধ থাকলেও তা প্রকাশ্যেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। মোটর যান আইনের ১১৫ (বি) ধারা সংশোধন করে চলন্ত অবস্থায় চালকের কথা বলা নিষিদ্ধ করে আইন ভঙ্গকারীকে ৫শ’ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কথা হলোÑ আইন ও দ-ের বিধান যাই থাকুক না কেন যদি সেটার যথার্থ প্রয়োগ না থাকে তবে তা নিরর্থক। পথচারী হোক আর চলন্ত বাহনের চালকই হোক আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের পাশাপাশি মোবাইল ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরী। এ ব্যাপারে সরকারের মূল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
×