ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ান ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি এবং পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া -সৈয়দ আবুল হোসেন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওয়ান ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি এবং পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া   -সৈয়দ আবুল হোসেন

(শেষাংশ) মিথ্যা সংবাদ এমনভাবে পরিবেশন করা হয়েছে- যাতে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। বিদ্যুত খাতে চায়নার কোন প্রতিষ্ঠান বিড করলেই আমার নাম, সাকোর নাম জড়িয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। বিদ্যুত খাতে সাকোর প্রতিটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে এমনভাবে প্রতিবেদন করা হয়েছে, যাতে প্রক্রিয়াটি ভ-ুল হয় এবং অন্য দরদাতার স্বার্থ রক্ষিত হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, পত্রিকা প্রভাবিত হয়ে অন্যের জন্য কাজ করে এবং আমার প্রতিষ্ঠান ও আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসা নিয়েও এসব পত্রিকা মিথ্যা খবর রং দিয়ে ছেপেছে। পাসপোর্ট বিষয়ক জটিলতা নিয়েও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে পত্রিকায়। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের সময় স্বাক্ষর জাল এবং সুপার ইম্পোজ করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অপপ্রচার শুরু করে। আমার স্বাক্ষর জাল করা একটা চিঠি নিয়ে বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদন করা হয়। চিঠির বিবরণ বিএনপির আমলে প্রণীত শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি নাকি চায়নার একটি কোম্পানিকে লিখেছিÑ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশের যে কোন কাজ পাওয়া যাবে এবং আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।’ এ ধরনের প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্য ছিলÑ আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন এবং জনগণের কাছে ম্যাসেজ দেয়া যে, আমি অন্যায় কাজে পারদর্শী। এ চিঠি নিয়ে তদন্ত হয় এবং তদন্তে এর সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই মর্মে প্রমাণিত হয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় আবার আমার স্বাক্ষর ইম্পোজ করে আওয়ামী লীগ থেকে আমার পদত্যাগ প্রচার করা হয়। পদ্মা সেতুর মূল কাজের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও সাকোর এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর ইম্পোজ করে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছিল। আমাকে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা নেয়া হয়। এ নিয়ে তদন্ত করেও বিশ্বব্যাংক কিছু পায়নি। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করে। শ্বেতপত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে, পেপারকাটিংসহ আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিএনপির তৈরি শ্বেতপত্রে আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। বিএনপি সরকারের ৫ বছরে শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হয়। তদন্তে পত্রিকার সকল খবর মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমি যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের কতিপয় পত্রিকা আগেকার অসত্য খবরগুলো পুনরায় নতুনভাবে প্রকাশ করা শুরু করে। সর্বশেষ ওয়ান ইলেভেনের তদন্তে আবার আমার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। জন্ম থেকে ওয়ান ইলেভেন পর্যন্ত নামে-বেনামে, রাজনীতিক প্রতিহিংসাসহ নানা বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে আমি মুক্তি পাই। আমার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। এরপরও এ বিষয়গুলো রেফারেন্স হিসেবে লেখা কি যুক্তিযুক্ত? অথচ কতিপয় সংবাদপত্র এ সত্যের দিকে না গিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে অসত্যকে বারবার তুলে আনছে। এটা কোন্্ ধরনের নৈতিকতা? আমি পত্রিকার ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অপসাংবাদিকতা, নীতিভ্রষ্ট সাংবাদিকতা কখনও পছন্দ করি না। আমরা যাঁরা মুসলমান তাঁরা কিভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করি? মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি ভয় আছে এবং আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (স)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান আছে। তাহলে কেন তারা মানুষের গিবত করবে, কুৎসা রটাবে? মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সম্মানহানি করবে? যাদের মনে আল্লাহর ভয় ও নবীর (স.) প্রতি শ্রদ্ধা আছে- তারা কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে- তা আমি বুঝতে পারি না। কতিপয় পত্রিকা ও কতিপয় সাংবাদিক যেভাবে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে আমার চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছে- তা কোন্্ পর্যায়ের তা আমার বোধগম্য নয়। তারা আমার চরিত্র হননের পাশাপাশি সৎপথে পরিচালিত আমার ব্যবসারও ক্ষতিসাধন করেছে। আজ এটা নানা তদন্তে প্রমাণিত যে, আমি জীবনে কোন অন্যায় ও অনিয়ম করিনি। তাই আমি আশা করব, যেসব পত্রিকা ও সাংবাদিক অসত্য খবর পরিবেশন করে আমার ক্ষতি করেছে- তারা সত্য বলার মাধ্যমে, সত্য প্রকাশের মাধ্যমে আমার সুনাম ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করবে। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রহমত কামনা করি। সব তদন্তে আমি নির্দোষ। বিশ্বব্যাংক ও মিথ্যা অভিযোগকারী এবং প্রতিবেদন প্রকাশকারীরা ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের উন্নয়নকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানির জন্য বিশ্বব্যাংকের বিচার দাবি করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ এনে তা প্রমাণ করতে না পারায় বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগও করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাষায় বলা যায়, ‘বিশ্বব্যাংক তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার পর এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তারা শঙ্কিত। এখন বিশ্বব্যাংক অনেক বেশি অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা বুঝতে পেরেছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল করার চেষ্টা করছে।’ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান মন্ত্রিসভায় স্বরচিত যে ছড়া পাঠ করেছেন- তাতেও আমার সততা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছড়াটি হলো: বিশ্বব্যাংকের অর্থ বন্ধ মিথ্যা অভিযোগে, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু শক্তি যোগায় ত্যাগে। পিতার দেয়া স্বাধীনতা রক্তে ভেজা মাটি অবহেলার দিন হলো শেষ এই না শেখের বেটি। লেখক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী
×