ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এটিএম কার্ড জালিয়াতি

ক্ষতিগ্রস্ত ইবিএল গ্রাহকদের চেক হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ক্ষতিগ্রস্ত ইবিএল গ্রাহকদের চেক হস্তান্তর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা। জালিয়াতির শিকার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) গ্রাহকদের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এ পরামর্শ আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইবিএলের ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ গ্রাহকের হাতে চেক তুলে দেন ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানা। ক্ষতিগ্রস্ত বাকি ১৯ জনের টাকা তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা করে দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি তিন ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ইবিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ও রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এবং পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক ইস্কান্দার মিয়া বক্তব্য রাখেন। গত ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজধানীর গুলশান, মিরপুরের কালশী ও বনানী এলাকার ইস্টার্ন, সিটি ও ইউসিবির চার বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে কার্ড জালিয়াতি ও পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের অজান্তে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। ইস্টার্ন ব্যাংকের একাধিক গ্রাহক মুঠোফোনে খুদে বার্তায় নিজেদের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি জেনে ব্যাংকে অভিযোগ করেন। এক সঙ্গে বেশ কিছু গ্রাহকের অভিযোগ পেয়ে ব্যাংক তদন্তে নামলে এ জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হয়। একই কায়দায় ইবিএলসহ মোট চারটি ব্যাংকের ৩৬ গ্রাহকের হিসাব থেকে তুলে নেয়া হয় ২০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, যার মধ্যে ইবিএলেরই ২৪ গ্রাহকের ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি এই জালিয়াতিতে এক বিদেশী নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য মেলার পর একই রকম চেহারার পাঁচ বিদেশীর ওপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ। যে পাঁচ গ্রাহককে চেক দেয়া হয়েছে তাদের একজন সাংবাদিক মাহবুবা আক্তার ডিনা, যার ৮০ হাজার টাকা খোয়া যায় এটিএম জালিয়াতিতে। অনুষ্ঠানে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিনা বলেন, দিনটি ছিল শুক্রবার। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি মোবাইলে ইবিএলের এসএমএস। পড়ে দেখলাম আমার এ্যাকাউন্ট থেকে দুবারে ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। অবাক হলাম, আমি টাকা তুলিনি, কার্ড বাসায় রয়েছে, তাহলে টাকা তুলবে কে? সিস্টেম ভুল করে কোন এসএমএস পাঠিয়েছে কি না ভেবেছিলাম। কিন্তু অনেকগুলো টাকা হওয়ায় আবারও ভাল করে এসএমএস দেখলাম। এরপর ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে অভিযোগ করলাম এবং আমার এ্যাকাউন্ট ব্লক করালাম। এ ধরনের জালিয়াতি রোধে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংককে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। আমি সব ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলব, আমরা সাধারণ আমানতকারী, আপনাদের কাছে আমরা অর্থ রাখি। এই ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। সাম্প্রতিক জালিয়াতির এসব ঘটনা ঠেকাতে ব্যাংকগুলোর কিছু দুর্বলতা ছিল, এমনটা স্বীকার করার পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানা । তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বেও জালিয়াতি হয়ে থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশে জালিয়াতি কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতকে পেপারলেস করতে চায়। ইতোমধ্যে অনেক ডিজিটাইজেশন হয়েছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও এগোতে হবে। এ ধরনের ঘটনার জন্য প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। তিনি সব ব্যাংককে এসএমএস এ্যালার্ট চালু এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান। ইবিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ও রশীদ এ ঘটনার জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা চেষ্টা করব ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। অনুষ্ঠানে শাহ সিফুজ্জামান এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, কামরুজ্জামান ১০ হাজার টাকা, আবু মুসা তারেক ৫ হাজার টাকা ও দিপন চন্দ্র দে সাত হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি তিনটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।
×