ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় রেললাইন দখলের পাঁয়তারা!

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বগুড়ায় রেললাইন দখলের পাঁয়তারা!

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় রেলভূমি দখলের পর এবার রেল লাইন দখলেরও পাঁয়তারা শুরু হয়েছ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বগুড়া রেলস্টেশনের সীমানার মধ্যে রেল লাইন ছেড়ে দিয়ে যে প্রাচীর তুলছে তা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় কোন প্রভাবশালীর স্বার্থে এই কাজটি করা হচ্ছে যাতে ভূমি দখলে সুবিধা হয়। ইতোমধ্যে বগুড়া রেল লাইনের ধারের অনেকটা জায়গা দখল হয়েছে। রেলের পুকুর ভরাট করে দখল করা হয়েছে। শহরের ভিতরে বাইরে রেলের ভূমি দখল হয়েছে। দখলের এই উৎসবে প্রাচীরটি নির্মাণ হলে ওই রেল লাইন যে সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকবে এবং রাতের আঁধারে দুষ্কৃতিরা রেল লাইন উপড়ে ফেলতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এতসব জানার পরও কেন এভাবে প্রাচীর তোলা হচ্ছে তার কোন সদুত্তর নেই। রেল কর্তৃপক্ষের কথা- বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণরোধে এবং স্টেশন নিরাপত্তায় ইট রড সিমেন্ট কনস্ট্রাকশনে এই প্রাচীর গাঁথা হচ্ছে। সূত্র জানায়, স্টেশনের কাছে হাড্ডিপট্টি পুকুরপাড় থেকে হকার্স মার্কেটের কড়িতলা পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ ৩৩ মিটার এবং আবাসিক এলাকার সেউজগাড়ি পানির ট্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৫শ’ ২৭ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা। এই দুই স্থানে সীমানা প্রাচীর নির্মিত হলে প্রভাবশালীদের দখলে যেমন সুবিধা হয় তেমনই এই ফাঁকা পথ দিয়ে অঞ্চিলিক বাস টার্মিনাল থেকে শহরের দিকে যাওয়া, সরকারী আযিযুল হক কলেজে যাওয়া, শর্টকাটে আশপাশের বাদুরতলা সড়কে ওঠা, থানা মোড়, কামারগাড়ি, নুরানী মোড় হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পথ সরাসরি রুদ্ধ হয়ে যাবে। বাড়বে ভোগান্তি। ব্রিটিশ শাসনামলে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের সময় চারদিকের সাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফাঁকা রাখা হয়। শুধুমাত্র রেলওয়ে স্টেশনের অংশটি প্রাচীরে ঘিরে দেয়া হয়। বগুড়া রেলস্টেশন থেকে পূর্ব দিকে রেল লাইন ধরে তাকালে দেখা যাবে করতোয়া রেলব্রিজ পর্যন্ত রেল লাইনের দুই ধারে দখল হয়ে গেছে। সামান্য ভূমি লিজ নেয়া হয়। শিয়ালের কুমির ছানা দেখানোর মধ্যে লিজের একটি কাগজ দেখিয়ে দখলের উৎসব চলে। দুর্ঘটনা এড়াতে, নিরাপত্তা রক্ষায় এবং নিরবচ্ছিন্ন রেলগাড়ি চলাচলে রেল লাইনের দুই ধারে অন্তত ৪০ ফুট করে ফাঁকা জায়গা রাখার সরকারী নিয়ম থাকলেও তা পালন করা হয়নি। বগুড়া রেল স্টেশনে ট্রেনে প্রবেশের সময় মনে হবে কোন মার্কেটের দোকানপাটের মধ্য দিয়ে ট্রেন ইন করছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রেলভূমি দখল করে পাকা দোকানপাট বসিয়েছে। কয়েকিট মার্কেটের নামও দেয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশন সুরক্ষার কথা বলে প্রাচীর নির্মাণ করছে অথচ সুরক্ষার রেল লাইন প্রাচীরের বাইরে রাখা হয়েছে। এক সূত্র জানায়, বগুড়া রেলভূমি দখলদারদের একাংশ লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশন থেকে হাতে গোনা কয়েকটি ভূমির লিজ নিয়ে এসেছেন। এই লিজেও নয় ছয় করার পাকা ব্যবস্থা আছে। এভাবে রেলের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ হরিলুট হয়ে গেছে। প্রশাসন বরাবরই থেকেছে নীরব। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সারসরি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, প্রাচীরের বাইরে থাকা রেললাইনে মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে পণ্য খালাস করবে। উল্লেখ্য, পণ্য খালাসের জন্য মালবাহী ট্রেন শেডের নিচেই দাঁড়ায়। পণ্য খালাসে কোন অসুবিধা হয় না। রেলের প্রকৌশল বিভাগের কথা বিনা টিকিটে ভ্রমণ ঠেকাতে এবং স্টেশন নিরাপত্তা ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।
×