ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বিপাকে হতদরিদ্ররা

ওএমএসের আটা কালোবাজারে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওএমএসের আটা কালোবাজারে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি কর্মসূচীর (ওএমএস) আওতায় চাল দেয়া বন্ধ থাকলেও অত্যন্ত নিম্নমানের আটা বিক্রি করা হচ্ছে। ভালমানের আটার বস্তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু বস্তার আটা থেকে দুর্গন্ধও বের হচ্ছে। ওইসব আটার বস্তায় ছোট ছোট পোকা বাসা বেঁধেছে। সরকারের মহত উদ্যোগে যাদের জন্য এই কার্যক্রম, সেই হতদরিদ্র ব্যক্তিরা ওসব আটা কিনে বিপাকে পড়ছে বর্তমানে। দুর্নীতিবাজ এক শ্রেণীর ওএমএস ডিলার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের এ মহত উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের নজরদারি না থাকায় এসব ওএমএস দোকানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। উপরন্তু খোলা বাজারে বিক্রি বা ওএমএস ডিলারের কাছ থেকে কম দামের আটা কিনতে না পেরে দরিদ্ররা বেশি দামে দোকানিদের নিকট থেকে আটা কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারী নিয়মানুযায়ী একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি আটা কিনতে পারেন। মিলমালিক বা দোকানিদের কাছে বেশিরভাগ আটার বস্তা বিক্রি করে দেয়ার কারণে অনেকে আটা পচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, কম দামে দরিদ্রদের কাছে আটা বিক্রির জন্য গত জানুয়ারির শুরু থেকে পৌরসভার ১২টি স্থানে ওএমএস কার্যক্রম শুরু করে খাদ্য অধিদফতর। এ ব্যাপারে এলাকায় মাইকিংসহ ব্যানার টানিয়ে প্রচার চালানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি মোটেও। ওএমএসের আটা বিক্রির জন্য পৌরসভা এলাকায় ৪টি মিল মালিককে গম সরবরাহ দেয়া হয়। পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ১২ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মিল মালিকরা গম মিলিং করে অনুমোদিত ডিলারদের আটা সরবরাহ দেয়। চালের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় শহরে শুধু আটা বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা খাদ্য অধিদফতর সূত্র মতে, খাদ্য বিভাগের অনুমোদিত ডিলারদের মধ্যে রয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলা গেটের সামনে, আলীর জাহাল, রুমারিয়ারছড়া, গোলদীঘিরপাড়, টেকপাড়া, বৈদ্যঘোনা, পিটিআই স্কুলের সামনে, নতুন বাহারছড়া, উত্তর নুনিয়াছড়া, গাড়ির মাঠ, সমিতিপাড়া ও কলাতলি মোড় এলাকায় ১২ জন ডিলার। সূত্র আরও জানায়, খাদ্য বিভাগ থেকে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিদিন ১২ মে. টন গম ৪টি মিলে মিলিং করে কালো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে সিংহভাগ আটা। ডিলাররা লোক দেখানো প্রতিদিন কয়েক বস্তা আটা দোকানে তুলে থাকেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে, দরিদ্রদের কাছে আটা বিক্রির নামে সরকার থেকে বরাদ্দ নিয়ে তা উচ্চ মূল্যে শহরের পাইকারি ও খুচরা দোকানিদের কাছে কালো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে ওএমএস ডিলাররা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ভালমানের প্যাকেটজাত আটার মূল্য ৩৫ টাকা। আর খোলা আটা ৩০ টাকা। শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে আটা বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও অনুমোদিত ডিলারদের ওসব দোকান প্রায় সময় বন্ধ থাকে বলে হতদরিদ্রদের অনেকে অভিযোগ করেন। তবে অনেক ডিলারের দাবি, সরবরাহ না থাকায় দোকান বন্ধ রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বেশিরভাগ ওএমএস ডিলারের দোকান বন্ধ পাওয়া গেছে। একাধিক জায়গায় বাইরে দোকানের নাম বা ওএমএসের কোন ধরনের ব্যানারও নেই। পার্শ্ববর্তী দোকানিরা জানায়, ওইসব বিক্রয় কেন্দ্র প্রায় সময় বন্ধ থাকে। শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে কোন ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ডিলারের এক প্রতিনিধি বলেন, আটার মান এতই খারাপ যে কোন ক্রেতা নিতে চান না। কয়েকটি বস্তা খুলে দেখা যায়, ধুলা মেশানো ও অর্ধ ক্রাসিং করা ওসব আটা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। সদর উপজেলা গেটের সামনে নাম মাত্র রয়েছে একজন ওএমএস ডিলার। ওই ডিলার দোকানের সামনে কোন ব্যানার টানায়নি। এমনকি আটা বিক্রির কোন নমুনাও সেখানে দেয়া হয়নি। সরকারীভাবে আটা বিক্রির জন্য ওএমএস লাইসেন্স নিলেও সরকারী কোন নিয়মনীতি মানছেন না তিনি। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড উত্তর নুনিয়াছড়া ওএমএস দোকান থেকে আটা কিনে নেয়া একজন গ্রাহক জানান, পুরনো গমের আটা হওয়ার কারণে এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। আটার গুঁড়া ধরলে হাত গন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু বস্তার আটা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ দুর্গতির অবস্থা বিরাজ করছে অন্য ওএমএস ডিলারের দোকানগুলোতেও। স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের অভিযোগ, খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ করা গম থেকে তৈরি আটা অত্যন্ত নিম্নমানের। ওসব আটা কিনে ঘরে নিয়ে চার-পাঁচদিনের বেশি মজুদ থাকলে পোকা তৈরি হয়। এদিকে নিম্নমানের ওই আটা বিতরণ করার পর দরিদ্রদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ন খাদ্য কর্মকর্তা মাসোয়ারা নিচ্ছেন বলে নিম্নমানের আটা বিতরণ বন্ধকল্পে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন তৎপরতা নেই। নিম্নমানের আটা খেয়ে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের নানা রকম পেটের পীড়ার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে স্থানীয় খাদ্য বিভাগ সাধারণ মানুষের এ অভিযোগ মানতে নারাজ। খাদ্য বিভাগ তাদের গম নিম্নমানের নয় দাবি করে জাানিয়েছে, সরবরাহের আগে ওই গম তাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে যে প্রতিবেদন পেয়েছে, তাতে কোন বিরূপ মন্তব্য করা হয়নি। অর্থাৎ তাদের সরবরাহ করা গমে কোন সমস্যা নেই। কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) থোয়াইমং এর মতে, গম ও আটার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে আটা বা গমের মানের বিষয়ে কোন ধরনের বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায়নি। নিম্নমানের গম আমদানি কীভাবে হলো, জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সদর উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ শাহ জামাল বলেন, ব্রাজিল থেকে গম আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। সবার মতামত নিয়ে আইন মেনে গম আমদানি হয়েছে। ওই গম অখাদ্য নয়। গমের মান ভাল। তাই আটাও ভাল হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
×