ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বীরপ্রতীককে বাদ, শান্তি কমিটির নেতা আ’লীগের সভায়

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বীরপ্রতীককে বাদ, শান্তি কমিটির নেতা আ’লীগের সভায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি ॥ দীর্ঘ ১৯ বছর পর জেলা আ’লীগের সম্মেলনকে ঘিরে বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্ধিত সভায় স্থান হয়নি দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগার অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীকের। অথচ ৭০’র নির্বাচনে পাকিস্তান ডেমক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) থেকে নির্বাচনকারী ’৭১ সালে গঠিত শান্তি কমিটির নেতা সৈয়দ রফিকুল হক সোহেলকে বর্ধিত সভার মঞ্চে দেখা গেছে। এতে আ’লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ সময় ৩ জন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ প্রশাসক, ৭৫ পরবর্তী কারাবরণকারী নির্যাতিত নেতা জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. আফতাব উদ্দিন বের হয়ে আসেন বর্ধিত সভা থেকে। এর প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন আ’লীগের একাংশে নেতা-কর্মীরা। পরে বর্ধিত সভা বয়কট করা নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদ রেস্টহাউজে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার সব এমপি সমর্থিত অংশ সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে বর্ধিত সভা করছে প্রস্তাবিত সভাপতি-সম্পাদক নিয়ে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ১৯ বছর আগে সাবেক সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম আব্দুজ জহুরকে সভাপতি ও আইয়ুব বখত জগলুলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৮ সদস্যের জেলা কমিটি গঠিত হয়েছিল। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও বিগত ১৬ বছর যাবত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আ’লীগের সম্মেলনকে ঘিরে আবারও দলে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি তাদের মনোনীত লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনে বঞ্চিত করা হয়েছে দলের নির্যাতিত নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী নেতাদের। এতে করে এমপিদের সঙ্গে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতবিরোধ দেখা দেয়। রূপ নেয় প্রকাশ্য দ্বিধা বিভক্তির। অপর অংশের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত আওয়ামী লীগার, নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নব্য আওয়মী লীগার ও স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের সন্তান স্থান দেয়া হয়েছে কমিটিতে। তাদের দাবি দলের দুঃসময়ে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্য থেকে নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে শক্তিশালী উপজেলা পৌর ও জেলা কমিটি গঠন করে দলের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। তাই বৃহস্পতিবার আমরা প্রকৃত আওয়ামী লীগার, নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করছি। জেলা মুক্তিযুদ্ধা ইউনিট ডেপুটি কমান্ডার ইউসুফ আল আজাদ বলেন, রফিকুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল পাকিস্তানপন্থী পিস কমিটির নেতা। তিনি ছিলেন ’৭০’র নির্বাচনে পিডিপি’র এমপি প্রার্থী। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে সিলেট (সিলেট-সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ-মৌলবীবাজার) জেলা পরিষদে প্রশাসক। পরবর্তীতে আ’লীগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেন্দ্রকে ম্যানেজ করে দিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি যুদ্ধাপরাধী বিষয় দলীয় প্রাধান ও নীতি নির্ধারণী নেতারা জানতে পেরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যা পরে আর প্রত্যাহার করা হয়নি। অথচ আ’লীগের বর্ধিত সভায় বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা বর্ষীয়ান আ’লীগ নেতাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর বিপরীতে একজন চিহ্নিত রাজাকার পিস কামিটির নেতাকে মঞ্চ বসিয়ে গোটা মুক্তিযুদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে। বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা সম্মেলন করা হবে। আজকের বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন এটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। সভাপতি-সম্পাদকের বাইরে কারও বর্ধিত সভা ডাকার এখতিয়ার নাই। সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল মঞ্চ অবস্থান সম্পর্কে বলেন, একজন মুরব্বি তিনি মঞ্চের চেয়ার খালি থাকায় তিনি বসে পড়েছেন। সোহেলের ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পিডিপির হয়ে নির্বাচনকারী এবং তৎকালীন পিস কমিটির নেতা স্বীকার করে বলেন, দল তাকে নৌকা মার্কা দিয়ে এমপি বানিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তা তুলে নেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মহিবুর রহমান মানিক বলেন, যখন দেশে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করছে সরকার। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন সকল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ওই সময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অপমানিত করা হয় তার বিপরীতে পিডিপি ও পিস কমিটির নেতা যুদ্ধাপরাধীকে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার মঞ্চে বসানো, বক্তব্য দেয়ানো, দলের বিরুদ্ধে নেত্রীর বিরুদ্ধে সর্বোপরি দেশের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রেরই অংশ মাত্র। আজকের বর্ধিত সভার উপস্থিতি প্রমাণ করেছে প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত আওয়ামী লীগনেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে আছে।
×