ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

মনের ভাব প্রকাশের জন্য মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার মাতৃভাষা। মানুষকে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি করে। মানুষ আল্লাহ্র সেরা সৃষ্টি আশরাফুল মখ্্লুকাত। মানুষকে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু গভীর মনোনিবেশ করবার, চিন্তাভাবনা করবার, উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করবার ক্ষমতা দিয়েছেন, জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন, স্মরণশক্তি দিয়েছেন। মানুষকে তিনি দান করেছেন সুন্দর অবয়ব। ইরশাদ হয়েছে- আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। (সূরা তীন : আয়াত ৪)। মানুষকে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু শুধু সুন্দরতম আকৃতিতেই সৃষ্টি করেননি, তিনি তাঁকে মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। (সূরা র্আ্ রহ্্মান : আয়াত ৩-৪)। পৃথিবীতে বর্তমানে অসংখ্য ভাষা প্রচলিত রয়েছে। কিছু অপ্রচলিত ভাষার অস্তিত্বও কোনভাবে টিকে আছে। কালক্রমে বেশকিছু ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে মানব সভ্যতার উত্থান-পতনের কারণে। আবার কিছু ভাষা বিলুপ্তির পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মানুষকে হিদায়াত দান করবার জন্য, সত্য-সুন্দর পথে চলবার পথনির্দেশনার জন্য, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবার জন্য, এক আল্লাহ্্রই ইবাদত করবার তাকিদ দেবার জন্য, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্্ নেই- এই সত্য কায়েম করবার জন্য যুগে যুগে বহু নবী-রাসূলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাঁরা যে দেশে বা যে জনপদে প্রেরিত হয়ে এসেছেন সেই দেশের বা জনপদের মানুষের মাতৃভাষাতেই তাঁরা হিদায়াতের বাণী প্রচার করেছেন। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আমি প্রত্যেক রসূলকেই তাঁর নিজ কওমের ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি তাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য। (সূরা ইব্রাহীম : আয়াত ৪) এই আয়াতে কারীমায় মাতৃভাষার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। আমরা লক্ষ্য করি যে, পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষার এই বিচিত্র সম্ভার মানব সভ্যতাকে জ্ঞানরাজ্যের ধারাবাহিক স্রোতে যেন অবগাহন করাচ্ছে। ভাষার বিচিত্রতা আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর কুদ্্রত ও নিয়ামতেরই অপূর্ব নিদর্শন। আল্লাহ্্র এই অপূর্ব নিদর্শন সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : এবং তাঁর (আল্লাহ্্র) নির্দেশনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য (সূরা রূম : আয়াত ২২)। পৃথিবীতে এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল এসেছেন। তাঁরা সকলেই তওহীদ প্রচার করেছেন, ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করেছেন। তাঁদের মধ্যে সহীফা পেয়েছেন অনেকেই, কিতাব পেয়েছেন কয়েকজন সেই সমস্ত পুস্তিকা বা পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের ভাষাসংশ্লিষ্ট নবী বা রসূলের নিজস্ব ভাষা। সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী সরওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মাতৃভাষা আরবীতে নাযিল হয়েছে আল-কুরআনুল করীম। কেন কুরআন মজীদকে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু আরবী ভাষায় নাযিল করলেন সে সম্পর্কে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আমি তো আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পারেন এবং এর দ্বারা বিত-াপ্রবণ সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিতে পারেন (সূরা মরিয়াম : আয়াত ৯৭)। এই আয়াতে কারীমায় উল্লিখিত ‘আমি তো আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি’ (ফা আন্নামা ইয়াসর্্্সানাহু বিলিসানিকা)- এই কালাম মজীদ মাতৃভাষার গুরুত্ব যে কত অপরিসীম তা সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করে দেয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারক দল গিয়েছেন। তাঁরা যে অঞ্চলে বা যে দেশে গিয়েছেন প্রথম সেখানকার মানুষের ভাষা তাঁরা আত্মস্থ করেছেন এবং সেখানকার ভাষাতেই ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম লোহিত সাগরের ওপারে অবস্থিত আবিসিনিয়ায় একদল সাহাবী প্রেরণ করেন। এই দল প্রেরণের পূর্বে হযরত জা’ফর ইব্নে আবূ তালিব রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনুহুকে আবিসিনিয়ার ভাষা আয়ত্ত করতে নির্দেশ দেন। অত্যন্ত মেধার অধিকারী হযরত জাফর ইব্নে আবূ তালিব (রা.) কয়েকদিনের মধ্যে আবিসিনীয় ভাষা শিখে ফেলেন এবং আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী দলের সাথে গমন করেন। আবিসিনিয়ায় পৌঁছে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাবীর দরবারে তিনি যে বক্তব্য তুলে ধরেন তা আবিসিনীয় ভাষায়। পারস্য দেশের একটি প্রতিনিধি দল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা দেশে ফিরে যাবার প্রস্তুতিকালে কুরআন মজীদের কিছু অংশ তাঁদের মাতৃভাষা ফারসীতে অনুবাদ করে দেবার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নির্দেশক্রমে হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তা‘আলা আন্্হু সূরা ফাতিহাকে ফারসী ভাষায় তরজমা করে দেন। ফারসী ভাষাভাষী অঞ্চলে ইসলামের দ্রুত প্রসারের কারণ হিসাবে বলা হয় যে, ইসলামের কিতাবাদি ফারসী ভাষায় অনুবাদের ফলেই ত্বরিত ইসলাম সেখানে বিস্তৃত হয়। বড় বড় কবি-সাহিত্যিক ফারসী ভাষায় ইসলামের নানা বিষয়ে বড় বড় গ্রন্থ রচনা করেন। কবি শায়খ সা’দী, জালালুদ্দীন রূমী, হাফিজ, জামী, আনওয়ারী, ফেরদৌসীসহ আরও অনেকেই ইসলামবিষয়ক লেখালেখি করে অমর হয়ে আছেন। ইসলামে মাতৃভাষার প্রতি কদর দেবার নির্দেশ থাকায় এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম অন্য দেশের ভাষা শিক্ষা করবার হুকুম দেয়ায় মুসলিমদের মধ্যে নিজ মাতৃভাষার প্রতি যেমন দরদ রয়েছে, তেমনি অন্যের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা দারুণ অবহেলিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় ছিল। এ ভাষায় জ্ঞানচর্চা করলে রৌরব নামক নরকে যেতে হবে এমনতর কঠোর ও ভীতিপ্রদ বিধানও জারি করা হয় ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসক শ্রেণী দ্বারা। মূলত বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের ফলে এ দেশের মানুষের সার্বিক অনুভবে যেমন স্বস্তির হাওয়া প্রবাহিত হয়, তেমনি এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার পথে হাঁটতে শুরু করে, আপন সত্তাকে প্রকৃত শান্তির দ্বারা আপ্লুত করার পথ পরিক্রম লাভ করতে থাকে, তাদের মাতৃভাষা দিয়ে আপন ভুবন নির্মাণের সুযোগ লাভ করে। আর তা এখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে সম্ভব হয়েছিল। ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি যতœবান হবার জোর তাকিদ দিয়েছে। জ্ঞান চর্চার সর্বোত্তম মাধ্যমই হচ্ছে নিজের ভাষা বা মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা করলে অতি সহজেই তা আয়ত্তে আনা সম্ভব হয় এবং দেশের মানুষের সামনে তা তুলে ধরা সম্ভব হয়। সভ্যতার চরম বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীন যুগের সভ্যতা গোঁজ আকৃতির বিশেষ ধরনের লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতাকে লেখার জগতে নিয়ে আসে। ইরাকের তথা মেসোপটেমিয়ার সুমেরদের দ্বারা উদ্ভাবিত সেই গোঁজ আকৃতির লেখার ভাষা ছিল সুমেরদের মাতৃভাষা। এমনিভাবে মিসরের ছবি অক্ষর দ্বারা লিখন পদ্ধতি এবং ফিনিশীয়দের আলফা বায়ত বা এ্যালফাবেট ব্যবহারের ভাষাও ছিল তাদের মাতৃভাষা। বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চার সুদূরপ্রসারী অগ্রসরতার সূচনা হয় বাংলার সুলতানগণের একান্ত পৃষ্ঠপোষকতায় সেই ইংরেজী ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে। এই প্রসঙ্গে ডক্টর শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেনের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন : ‘মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল। বাংলা ভাষা মুসলমান প্রভাবের পূর্বে অতীব অনাদর ও উপেক্ষায় বঙ্গীয় চাষার গানে কথঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। প-িতেরা নস্যাধ্যার হইতে নস্য গ্রহণ করিয়া শিখা দোলাইয়া সংস্কৃত শ্লোক আবৃত্তি করিতেছিলেন এবং ‘তৈলাধার পাত্র’ কিংবা ‘পাত্রাধার তৈল’ এই লইয়া ঘোর বিচারে প্রবৃত্তি ছিলেন। তাঁহারা হর্ষচরিত হইতে ‘হারং দেহি মে হরিণি’ প্রভৃতি অনুপ্রাসের দৃষ্টান্ত আবিষ্কার করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছিলেন...। সেখানে বঙ্গভাষার স্থান কোথায়? ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে প-িতম-লী ‘দূর দূর’ করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাড়ি-ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণেরা যেরূপ দূরে থাকেন বঙ্গভাষাও তেমনই সুধী মহলে অপাঙ্ক্তেয় ছিল- তেমনই ঘৃণা, অনাদার ও উপেক্ষার পাত্র ছিল। কিন্তু হীরা-কয়লার খনির মধ্যে যেমন জহুরীর আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভিতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বঙ্গভাষা তেমনই শুভদিন, শুভক্ষণের প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙলা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল।’ আরবীতে কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ায় আরবী ভাষাভাষী অঞ্চলের নিকট এটা সহজে অনুধাবনীয় হয়ে যায়। তাঁরা কুরআন মজীদের বাণী ও শিক্ষা বাইরের দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন, যা বিভিন্ন অঞ্চলের নিজ নিজ মাতৃভাষায় অনূদিত হয়ে জগতজুড়ে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটায়। আরবী ভাষায় কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : এ আমি নাযিল করেছি আরবী ভাষায় কুরআন যাতে তোমরা বুঝতে পার (সূরা ইউসুফ : আয়াত ২)। আরবী ভাষায় কুরআন মজীদ নাযিল হবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : এভাবেই আমি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে ওরা ভয় করে অথবা তা হয় তাদের জন্য উপদেশ (সূরা তহা : আয়াত ১১৩)। কুরআন মজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে : আমি এই কুরআন মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছি যাতে ওরা উপদেশ গ্রহণ করে। আরবী ভাষায় এই কুরআন বক্রতামুক্ত, যাতে মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে (সূরা যুমার : আয়াত ২৭-২৮)। আরবী ভাষায় কুরআন, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য (সূরা হামীম আস্ সাজ্দা : আয়াত ২)। এভাবে আমি আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি ‘আরবী ভাষায় যাতে (হে রসূল) আপনি সতর্ক করতে পারেন মক্কা ও এর চতুর্দিকের জনগণকে (সূরা শূরা : আয়াত ৭)। কুরআন মজীদে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মাতৃভাষায় নাযিল করে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মাতৃভাষার গুরুত্ব যে কত তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আমি আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে ওরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা দুখান : আয়াত ৫৮)। ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করায় ইসলাম যেখানেই গিয়েছে সেখান জনগণের মাতৃভাষাকে আপন করে নিয়েছে এবং তাকে যথাযথ পরিচর্চা করবার প্রেরণায় উদ্দীপ্ত করেছে। তাই তো আমরা লক্ষ্যকরি বাংলাদেশে ইসলাম আসার পর থেকে এর মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে বাংলাভাষী জনসংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ইসলাম অবলম্বী। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে এর বিকাশ ও উন্নয়নে পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বাংলার মুসলিম সুলতানগণ। আবার এই ভাষার ওপর যখন আঘাত এলো তখন এই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করবার জন্য, এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য যাঁরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরাও মুসলিম। এই ভাষার জন্য যাঁরা জান কুরবান করলেন তাঁরা হচ্ছেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিক, শফিক, সালাম প্রমুখ। তাঁরা মাতৃভাষার জন্য শহীদ হয়ে এক কালজয়ী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি। যা পরবর্তী সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষা আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর এক অনন্য নিয়ামত। এর মর্যাদা সমুন্নত রাখার মধ্যেই আমাদের জ্ঞানরাজ্যে বিচরণের সার্থকতা নিহিত রয়েছে। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×